লখনউ: মঙ্গলবার (২ জুলাই) উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলার ফুলরাই গ্রামে আয়োজিত এক ধর্মসভায় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও অনেকে। এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার। আগ্রার অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল এবং আলিগড়ের বিভাগীয় কমিশনারের সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু, কীভাবে ঘটল এতবড় বিপর্যয়? প্রাথমিকভাবে উঠে আসছে ছোট জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়, ভয়ানক আদ্রতা ও গরমের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতার কথাও।
সিকান্দারা রাও থানার এসএইচও, আশিস কুমার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ভিড়ের কারণেই পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার মতে, সন্ত ভোলে বাবা নামে এক স্থানীয় ধর্মগুরুর বক্তৃতা শুনতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিল। হাথরস-ইটা সীমান্তের কাছে রতিভানপুরে এই সভার আয়োজন করা হলেও, মথুরা, আগ্রা, ফিরোজাবাদ এবং ইটা থেকে দলে দলে লোক জড়ো হয়েছিলেন ওই সভায়। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০,০০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন, ধর্মসভার আগে ওই এলাকায় একটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এদিন সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই রাস্তাটি খুলে দেওয়া হয়। তাতে ভিড় আরও বেড়ে গিয়েছিল।
সেই সঙ্গে, এই সৎসঙ্গ আয়োজনের জন্য একটি বিশেষ তাঁবু বা প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। ৫০,০০০ মানুষ ধরার মতো যথেষ্ট বড় ছিল না সেই তাঁবু। ফলে, তাঁবুর মধ্যে ভয়ানক আর্দ্রতা ও গরম ছিল। তাই সৎসঙ্গ শেষ হতেই তাঁবু থেকে বের হওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে শকুন্তলা দেবী নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সৎসঙ্গ শেষে ভক্তরা বের হওয়ার সময় হুড়োহুড়িতে অনেকে পড়ে যান। এরপর, একে অপরের উপর পড়ে যেতে থাকেন একের পর এক মানুষ। তাতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তাতেই পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়।
এর পাশাপাশি ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রশাসন ও অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছতেও অনেক দেরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, ঘটনার পরপর সেখানে কোনও পুলিশ বা প্রশাসনিক সাহায্য ছিল না। তার আসে অনেক দেরিতে। ফলে, আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু বেসরকারি বাস ও ট্রাকে করে হতাহতদের হাথরস ও আশেপাশের জেলাগুলিতে অবস্থিত হাসপাতালগুলিতে পাঠানো হয়। হাসপাতালগুলিতেও এই ধরনের বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট পরিকাঠামো ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। সিকন্দরারাও ট্রমা সেন্টারে যেমন উপযুক্ত পরিমাণে অক্সিজেন ছিল না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চিকিৎসক ছিলেন মাত্র একজন।