Modi birthday: পরিবর্তিত বিশ্বে আজ মোদীই শান্তির দূত, সকলে তাকিয়ে তাঁরই দিকে

Modi birthday: মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর), ৭৪ বছরে পা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১০ বছর আগে প্রথমবার তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। গত ১০ বছরে, তিনি শুধুমাত্র একজন শক্তিশালী বিশ্বনেতা হিসাবেই আবির্ভূত হননি, তিনি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সংঘাত অবসানের একমাত্র আশাও এখন তিনিই।

Modi birthday: পরিবর্তিত বিশ্বে আজ মোদীই শান্তির দূত, সকলে তাকিয়ে তাঁরই দিকে
দুপক্ষেরই আস্থার মানুষ নরেন্দ্র মোদী
Follow Us:
| Updated on: Sep 18, 2024 | 4:50 PM

নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর), ৭৪ বছরে পা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১০ বছর আগে প্রথমবার তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। গত ১০ বছরে, তিনি শুধুমাত্র একজন শক্তিশালী বিশ্বনেতা হিসাবেই আবির্ভূত হননি, তিনি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সংঘাত অবসানের একমাত্র আশাও এখন তিনিই। আড়াই বছর ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধর অবসানে এখন পশ্চিমী দেশগুলি ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর দিকেই তাকিয়ে। এর সবথেকে বড় কারণ, যুযুধান দুই পক্ষেরই আস্থা রয়েছে ভারতের উপর। অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামের এবং ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো ওয়াইদোদো ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী মোদীই বিশ্বের একমাত্র নেতা, যিনি যুদ্ধের সময় রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশেই সফর করতে পেরেছেন।

রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েরই আস্থা

প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তাঁর ভালো বন্ধু বলে মনে করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তির জন্য ভারতের মধ্যস্থতা তিনি স্বীকার করেন। একই সময়ে, ইউক্রেনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের পর, সেই দেশের প্রেসিডেন্ট ঝোলোদিমির জেলেনস্কিও বলেছিলেন, পরবর্তী শান্তি আলোচনা ভারতে হওয়া উচিত।

ভারত আর নিরপেক্ষ নয়, ‘মধ্যস্থতাকারী’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আত্মবিশ্বাসী, ভারত যদি শান্তি সম্মেলন আয়োজন করে তাহলে এই যুদ্ধ বন্ধ করা যাবে। জেলেনস্কির সঙ্গে কথোপকথনের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, ভারত নিরপেক্ষ নয়। ভারত শুধুমাত্র শান্তির পক্ষে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বার্তাটি শুধু রাশিয়া-ইউক্রেনের জন্য ছিল না। বার্তা ছিল গোটা বিশ্বর প্রতি। ভারত বলে দিয়েছে, নয়া বৈশ্বিক ব্যবস্থায় ভারতের ভূমিকা কী হতে চলেছে।

আশায় আমেরিকা ও পশ্চিমী দেশগুলিও

রাশিয়া-ইউক্রেন ছাড়াও আমেরিকা-সহ বহু পশ্চিমী দেশও ভারতই এই যুদ্ধর অবসান ঘটাতে পারে বলে আশা করছে। ইউক্রেন-পোল্যান্ড সফর থেকে ভারতে ফেরার পরই, ২৬ অগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এর আগেও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও জো বাইডেনের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক কতটা মজবুত, তা আমেরিকা ভাল করেই জানে। পশ্চিমী দেশগুলির চাপ সত্ত্বেও, এই সংঘাতের শুরু থেকেই ভারত দৃঢ়ভাবে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রতিনিয়ত শান্তির আবেদন করেছেন। এমনকি, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, এটা যুদ্ধের সময় নয়।

শান্তির দূত প্রধানমন্ত্রী মোদী

গত সপ্তাহে রুশ সফরে গিয়েছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, অজিত ডোভাল। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর এক বৈঠকও হয়েছে। তাঁর এই সফরকে ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছে, ভারত কি তবে যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছে? অনেকেই দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘শান্তি পরিকল্পনা’-ই পুতিনকে জানিয়েছেন অজিত ডোভাল। পুতিন যদি তাতে রাজি হন, তাহলে আগামী দিনে কিছু বড় কিছু ঘটতে পারে। এরপর অক্টোবরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যেগ দিতে মস্কো যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রেসিডেন্ট পুতিন সেই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতে চান। তাই সবকিছু এই গতিতে চললে, এই যুদ্ধ থামাতে প্রধানমন্ত্রী মোদী সত্যিই একটা বড় এবং সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেন।

ভারত কি মধ্যপ্রাচ্যেও শান্তি আনতে পারে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যেও চলছে সংঘাত। সেখানেও শান্তি ফেরাতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক ইসলামী দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, সৌদি আরব এবং ইরানের মতো ইসলামী দেশ বা ইজরাইলের মতো মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলির সঙ্গে ক্রমে ভারতের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে দিল্লিতে এসেছিলেন বেশ কয়েকটি আরব দেশের রাষ্ট্রদূতরা। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছিলেন তাঁরা। সোমবারই ইজরাইলের নয়া রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেছেন, গাজা যুদ্ধের সমাধানে ভারত কতটা অংশ নিতে চায়, তার উপরই নির্ভর করছে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরার বিষয়টি।

প্যালেস্তাইন ও ইজরাইল – দুই পক্ষর সঙ্গেই সুসম্পর্ক

গত ৭ অক্টোবর, হামাস গোষ্ঠী যখন ইজরাইলে হামলা চালিয়েছিল, তখন সেই ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’র নিন্দা করা প্রথম দেশগুলির অন্যতম ছিল ভারত। এই হামলার মাত্র তিন দিন পর, ১০ অক্টোবর ইজরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। এর থেকে বোঝা যায়, ইজরাইলের কাছে ভারতের ভমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। গত মাসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংঘাত ছেড়ে আলোচনা ও কূটনৈতিক পথে সকল দ্বন্দ্বের মীমাংসা করার জন্য আবেদন করেছিলেন। আবার ভারত বরাবরই প্যালেস্তাইন-ইজরাইল বিবাদে, ‘দুই রাষ্ট্র’ সমাধানকে সমর্থন করেছে। স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের দাবিকেও সমর্থন করে ভারত। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্যালেস্তাইনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ধরে রেখেছে নয়া দিল্লি। এক সপ্তাহ আগেই ভারতে নিযুক্ত প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্রদূত, আবু আল-হাইজা শান্তি ফেরাতে ভারতের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, প্যালেস্তাইনও মধ্যস্থতার জন্য ভারতের মতো বন্ধু খুঁজছে।

‘বিশ্ব ভ্রাতা’ ভারত

প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমলে ভারতের বিদেশ নীতিতে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। এই ১০ বছরে, প্রধানমন্ত্রী এমন অনেক দেশে সফর করেছেন, যেখানে এর আগে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পা পড়েনি। এতে একদিকে সেই সব দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে, অন্যদিকে বিশ্ব মঞ্চে বিশ্বভ্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। গত বছরের অগস্টে, ‘পিউ রিসার্চ’ সংস্থা ভারত সম্পর্কে ২৩টি দেশে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। দেখা গিয়েছিল ভারতের প্রতি প্রত্যেকটি দেশেরই মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক। জানা যায়, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইটালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ইজরাইল-সহ ৯টি দেশের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ভারত সম্পর্কে অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

বিদেশ নীতিতে বড় পরিবর্তন

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রায় ১১ বছরের মেয়াদে, ভারত তার বিদেশ নীতিতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেছে। বস্তুত মোদীর কার্যকালের অন্যতম সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর দৃঢ় এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি। বিদেশ নীতিতে ভারতের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদে ফিরেছেন ভারতীয়রা

পরিস্থিতি যাই হোক, গত এক দশকে বহু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে এনেছে ভারত সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়, অপারেশন গঙ্গার মাধ্যমে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছিল। সিরিয়া এবং ইয়েমেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরির পরও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। আসে, এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বার্তা স্পষ্ট, আমরা কোনও নাগরিককে পিছনে ফেলে আসব না।

শক্তিশালী হয়েছে বিশ্বনেতার ভাবমূর্তি

করোনা মহামারি চলাকালীন, ছোট এবং দরিদ্র দেশগুলিকে তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল বিশ্বের তাবড় উন্নত দেশগুলি। কিন্তু, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ১০০টি দেশে ১০ কোটি ডোজ টিকা পাঠিয়েছে নয়া দিল্লি। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলি উপকৃত হয়েছে। ভারতের সহায়তায় এই দেশগুলির ভ্যাকসিনের ঘাটতি পূরণ হয়েছে। আবার সেই সঙ্গে এই সমস্ত দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিশ্ব মঞ্চে বিশ্বনেতা হিসাবে শক্তিশালী হয়েছে ভারতের ভাবমূর্তি। সারা বিশ্ব বুঝেছে, ভারত শুধুমাত্র বড় এবং উন্নত দেশগুলিরই বন্ধু নয়, ছোট এবং দরিদ্র দেশগুলিরও প্রতিও নয়া দিল্লি সমান যত্নশীল।

অগ্রাধিকার পেয়েছে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ

প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারতের অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের সবথেকে বড় উদাহরণ দেখা গিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। আমেরিকা-সহ পশ্চিমী শক্তিগুলি বারংবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। আসলে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় একদিকে যেমন যুদ্ধকে সমর্থন করেনি, আবার তার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকেও প্রাধান্য দিয়েছে মোদী সরকার। দক্ষতার সঙ্গে এই জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছে। বারবার এই নিয়ে পশ্চিমী শক্তিগুলির চাপের মুখে পড়েছে ভারত। কড়া হাতে সেই সব চাপ সামলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সাফ জানিয়েছেন, পশ্চিমী দেশগুলি যদি তাদের নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করে চলে, তাহলে ভারত কী দোষ করল? এরপরও কিন্তু কোনও দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়নি। নরেন্দ্র মোদীর এই পদক্ষেপ, পরিবর্তনশীল বিশ্বে কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষমতাও দেখিয়ে দিয়েছে।