Wayanad landslides: ৪ ঘণ্টায় সব শেষ, আগেই সতর্ক করেছিল IIT, ওয়েনারে কী ঘটল মঙ্গল ভোরে?

Jul 30, 2024 | 8:18 PM

Wayanad landslides: সোমবার গভীর রাতে, কেরলের ওয়েনাড় জেলায় মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিনটি ধস নেমেছিল। আর তাতেই তছনছ হয়ে গিয়েছে চা বাগানে ঘেরা এই জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে, চার ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিন বিধ্বংসী ধস নামে। ঠিক কী ঘটেছিল?

Wayanad landslides: ৪ ঘণ্টায় সব শেষ, আগেই সতর্ক করেছিল IIT, ওয়েনারে কী ঘটল মঙ্গল ভোরে?
ঈশ্বরের নিজের দেশ এখন যেন নরক
Image Credit source: PTI

Follow Us

ওয়েনাড়: বলা হয় গডস ওন কান্ট্রি, অর্থাৎ, ঈশ্বরের নিজস্ব দেশ। আর ঈশ্বরের এই নিজস্ব দেশই এক রাতের মধ্যে পরিণত হয়েছে নরকে। সোমবার গভীর রাতে, কেরলের ওয়েনাড় জেলায় মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিনটি ধস নেমেছিল। আর তাতেই তছনছ হয়ে গিয়েছে চা বাগানে ঘেরা এই জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে, চার ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিন বিধ্বংসী ধস নামে। চা বাগান এবং গ্রামের মধ্য দিয়ে নেমে আসে কাদা, জল এবং পাথর। চাপা পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৯৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আরও অন্তত ১২৮ জন আহত বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। নিহতদের অধিকাংশই চা বাগানের শ্রমিক এবং তাদের পরিবার। অস্থায়ী বাসস্থানে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁরা। আর ঘুমের মধ্যেই তাঁদের উপর ভেঙে নেমে আসে পাহাড়। অথচ, এই ধরনের বিপর্যয় যে হতে পারে, তার সতর্কতা অনেক আগেই দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

চার ঘণ্টায় তিন বিধ্বংসী ধস

জানা গিয়েছে, মধ্যরাতের কিছু পরই প্রথম ধস নেমেছিল। এটাই ছিল সবথেকে মারাত্মক। আঘাত নেমে এসেছিল ওয়ানাড়ের চুরমালা গ্রামে। প্রথম ধসেই প্রায় পুরো গ্রামটাই বিলীন হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, চুরমালার ২০০টিরও বেশি বাড়ি ভেসে গিয়েছে। ভেঙে পড়ে গ্রামের রাস্তা ও সেতু। গ্রামের সংযোগকারী সেতুটি ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকারী দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সমস্যায় পড়ে। ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, উপড়ে পড়েছে গাছ। মাটিতে মিশে গিয়েছে চা বাগানের শ্রমিকদের টিনের তৈরি অস্থায়ী বাড়িগুলি। গাছ-বাড়ি-মানুষ সব কাদামাটির মধ্যে তাল পাকিয়ে গিয়েছে। যেখানে ছিল অন্তত ২৫০ পরিবারের বাস, সেখানে এখন পড়ে রয়েছে শুধু পাথর আর কাদা। একপাশ দিয়ে স্রোতে বয়ে চলেছে কাদামাখা জল। পরের দুটি ধসের প্রতিটি চুরমালার বিপদ আরও বেড়েছে।

তছনছ ওয়েনাড়

গরম আরব সাগরে তৈরি হয়েছিল গভীর মেঘ

মঙ্গলবার ভোরের ধস নামার পিছনে ওয়েনাড় জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতকেই দায়ী করেছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। কোচি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অ্যাডভান্সড সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রাডার রিসার্চের ডিরেক্টর, এস. অভিলাশ জানিয়েছেন আরব সাগরের উষ্ণতা গভীর মেঘ তৈরি করেছিল। যা অল্প সময়ের মধ্যে কেরল জুড়ে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে এবং জায়গায় জায়গায় ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরেই কাসারগড, কান্নুর, ওয়েনাড়, কালিকট এবং মলপ্পুরমে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। ফলে, মাটি ইতিমধ্যেই আলগা হয়ে গিয়েছিল। সোমবার আরব সাগরের উপকূলে গভীর ‘মেসোস্কেল মেঘ’ তৈরির ফলে ওয়েনাড়, কালিকট, মলপ্পুরম এবং কান্নুরের বিভিন্ন জায়গায় ধস নামে। আইএমডি জানিয়েছে, ত্রিশুর, পালাক্কাড়, কোঝিকোড়, ওয়েনাড়, কান্নুর, মলপ্পুরম এবং এর্নাকুলাম জেলা জুড়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় ১৯ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আগেই ছিল সতর্কবার্তা

দুঃখের বিষয় হল, এই মাত্রার একটা বিপর্যয় যে এই এলাকায় ঘটতে পারে, মাত্র কয়েক মাস আগেই তার ইঙ্গিত দিয়েছিল দিল্লি আইআইটি-র গবেষকরা। কেরলের কোথায় কোথায় ধস নামতে পারে, তার একটা মানচিত্র প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। সেই মানচিত্রে, ওয়ানাড়ের ৫৮.৫২ শতাংশ এলাকাতেই ধস নামার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি বলে জানানো হয়েছিল। মুন্ডক্কাই, চুরমালা, আত্তামালা, এবং নুলপুঝা – নাম করে এই গ্রামগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এদিন, তাঁদের সতর্কবার্তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে।

২০১১ সালে, ওয়েস্টার্ন ঘাট ইকোলজি এক্সপার্টস প্যানেল ইদুক্কি এবং ওয়ানাডৃ জেলাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বলেছিল। কৃষি এবং বেশ কিছু কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু, পরে ওই সকল সুপারিশগুলি শিথিল করা হয়। বেলাগাম ভূমি ব্যবহার অব্যাহত থাকে। বনাঞ্চল কেটে উজাড় করে দেওয়া এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন কেরলের ধসের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃষ্টিপাতের ধরণ পাল্টে গিয়েছে। বর্ষা আসছে দেরিতে। মাঝেমধ্যে প্রবল ভারী বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি বিগড়ে দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন

২০১৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে, কেরলে বন্যা ও ধসের তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ২০১৯ এবং ২০২০ সালেও কেরলে বর্ষা একই রকমের বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। ১০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০২১ সালে, কোট্টায়াম এবং ইদুক্কি জেলায় ভূমিধস এবং বন্যায় প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। ২০২২ সালে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছিল, চরম আবহাওয়ার কারণে কেরলে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সারা দেশের যত ধসের ঘটনা ঘটেছে, তার ৫৯.২ শতাংশই হয়েছে কেরলে। উপকূলীয় জেলা আলাপ্পুঝা বাদে, কেরলের ১৩টি জেলাকেই ধস-প্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

উদ্ধারে নেমেছে সেনারা

৪৫ ত্রাণ শিবির

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৪৫টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে। তিন হাজার মানুষকে সেই ত্রাণ শিবিরগুলিতে রাখা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং এনডিআরএফ উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে। অতিরিক্ত ১০৮টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়েছে। পাঁচজন মন্ত্রী উদ্ধারকাজে সমন্বয় করছেন। উদ্ধার অভিযানে দমকল বাহিনীর ৩২১ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এনডিআরএফ-এর একটি ৬০ সদস্যের দল ওয়ানাড়ে পৌঁছেছে। বেঙ্গালুরু থেকে আরও একটি ৮৯ সদস্যের দল আসছে। উদ্ধার অভিযানে কাজে লাগানো হচ্ছে ডগ স্কোয়াডও। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে ভারতীয় সেনাও। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিবিরে থাকা মানুষদের পানীয় জল, খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় হেলিকপ্টারে করে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ

কেরল ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী ২ কোটি টাকা এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ৫ কোটি টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার কেলে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী-সহ বিভিন্ন দলের নেতারা কেরলকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজয়ন। এর পাশাপাশি, নিহতদের প্রত্যেকের আত্মীয়স্বজনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ড থেকে ২ লক্ষ টাকা করে এক্স-গ্রাশিয়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আহতদের দেওয়া হবে ৫০,০০০ টাকা। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানোর আবেদন করেছেন।

Next Article