নয়া দিল্লি: তাপমাত্রার পারদ চল্লিশের গণ্ডি পার করতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত, গরমে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। তাপপ্রবাহের জেরে বহু মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। শুধুমাত্র উত্তর বা পূর্ব ভারত নয়, প্রায় গোটা দেশজুড়েই এবার তাপপ্রবাহের (Heatwave) দাপট দেখা গিয়েছে। পশ্চিমী ঝঞ্চার কারণে হালকা থেকে মাঝারি পরিমাণ বৃষ্টিপাতে বিগত কয়েক দিন স্বস্তি মিললেও, ফের বাড়তে চলেছে গরমের দাপট। এরইমধ্যে তাপপ্রবাহ নিয়ে ভয়ঙ্কর পূর্বাভাস দিল জাতীয় আবহাওয়া দফতর। বর্তমানে যে তাপপ্রবাহ চলছে, তা আগামিদিনে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে চলেছে। ২০৬০ সালের মধ্যেই দেশে তাপপ্রবাহের মেয়াদ ১২ থেকে ১৮ দিন বাড়তে চলেছে। শুধুমাত্র দেশের নির্দিষ্ট কোনও একটি প্রান্ত নয়, দক্ষিণ ভারতের উপকূল অঞ্চল থেকে শুরু করে উপকূলবর্তী সমস্ত রাজ্য়গুলিতেও এই তাপপ্রবাহের প্রভাব টের পাওয়া যাবে। এই তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক, প্রযুক্তগত ও ইকোসিস্টেম ভিত্তিক বিভিন্ন পরিকল্পনা অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মঙ্গলবারই “হিট অ্যান্ড কোল্ডওয়েভস ইন ইন্ডিয়া প্রসেসস অ্যান্ড প্রেডিক্টেবিলিটি” নামক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় আবহাওয়া দফতরের তরফে। সেখানেই তাপপ্রবাহ, তার আগাম সতর্কতা এবং মোকাবিলায় শীতল ছাউনি তৈরির মতো বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএমডির প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় বাদ দিয়ে অন্য়ান্য় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তুলনায় তাপপ্রবাহেই দেশে সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে। ১৯৬১ সাল থেকে ২০২০ সালের তথ্য়ের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, যখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে সাড়ে ৪ ডিগ্রি বেশি হয়, তখন তাকে তাপপ্রবাহ বলা হয়। যখন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে সাড়ে ৬ ডিগ্রি বেশি থাকে, তখন তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়। সাধারণত মার্চ থেতে জুন মাসের মধ্যে মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপপ্রবাহ হয়। এছাড়া অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশার উপকূলেও তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হয়, তবে তা মধ্য় ভারতের তুলনায় কম শক্তিশালী হয়।
দেশের উত্তর অংশ ও অন্ধ্র প্রদেশ-ওড়িশা উপকূলে গড়ে দুটি তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চারটি তাপপ্রবাহও প্রবাহিত হয়। আবহাওয়া দফতরগুলির পূর্বাভাসে দেখা গিয়েছে, আগামী ৬০ বছরের মধ্য়ে তাপপ্রবাহ আরও বাড়তে চলেছে। এর মেয়াদ যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই তাপপ্রবাহের প্রভাবও গুরুতর হবে। আগামী ৩০ বছরের মধ্য়েই তাপপ্রবাহের গড় মেয়াদ ন্য়ূনতম তিনদিন বাড়তে চলেছে। অর্থাৎ আগে যেখানে ৭ থেকে ১১ দিন ধরে জারি থাকত তাপপ্রবাহ, তা এবার থেকে বেড়ে ১২-১৮ দিনে পৌঁছতে চলেছে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, আগে যেখানে দক্ষিণ ভারত ও উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে সেভাবে তাপপ্রবাহ হত না , আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে সেখানেও তাপপ্রবাহ বইতে চলেছে।