Indore beggar: ভারতে চাকরির থেকে রোজগার অনেক বেশি ভিক্ষায়! জানেন কত?
Indore beggar: ভারতে কতজন বছরে ২০ লক্ষ টাকার বেশি আয় করেন? করদাতাদের হিসেবে মাত্র ৫ লক্ষ। কিন্তু তাদের থেকেও রোজগার বেশি মধ্য ভারতের ভিখারীদের। শুধু ইন্দোরেই ভিক্ষা করেন ৭০০০। বিনা লগ্নিতে বিপুল আয়ের এই সুযোগ নিতে বাড়ছে আগ্রহ।
ইন্দোর: লগ্নি শূন্য, কিন্তু উপার্জন কোটিপতিদের মতো। তার উপর কোনও করও দিতে হয় না। না আছে আয়কর, না আছে জিএসটি দেওয়ার ঝক্কি। বলুন তো কোন ব্যবসার কথা বলা হচ্ছে? ভিক্ষাবৃত্তি। শুনে অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, শুধুমাত্র ভিক্ষাবৃত্তি করেই জমি, বাড়ি, গাড়ি, স্মার্ট ফোন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের মালিক রাজস্থানের এক পরিবার। রাজস্থনের গ্রাম থেকে মধ্য প্রদেশের ইন্দোর শহরে এসে, এখানকার এক রাস্তার মোড়ে সপরিবারে ভিক্ষা করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে এই পরিবার। স্বামী-স্ত্রী নিজেরা তো ভিক্ষা করেনই, একই কাজে লাগিয়েছেন তাঁদের পাঁচ সন্তানের তিনজনকে। বাকি দুই সন্তানকে তাঁরা রেখে এসেছেন গ্রামের বাড়িতে, তাদের ঠাকুর্দা-ঠাকুমার কাছে। সম্প্রতি, ইন্দোরের লব কুশ স্কোয়ার মোড়ে, প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছেন এই মহিলা। তিনি জানিয়েছেন, গত ৪৫ দিনে তিনি আড়াই লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করেছেন!
উজ্জয়িনে মহাকাল লোক নির্মাণের পর, লব-কুশ স্কোয়ারে ভক্তের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। তবে, এটা কোনও ছুটির সময় নয়। এখনই যদি আয় এত বেশি হয়, তাহলে ছুটির সময় তাঁর আয় কোথায় পৌঁছয়, তা সহজেই কল্পনা করা যায়। ৪৫ দিনে যে আড়াই লক্ষ টাকা রোজগার হয়েছিল, তার থেকে ১ লক্ষ টাকা তিনি গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। আর, ৫০,০০০ টাকা দিয়ে তিনি ছেলেমেয়েদের নামে একটি ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন। বাকি টাকা, নিজেদের খরচ-খরচায় ব্যবহার করেছেন। ৪৫ দিনে ২.৫ লক্ষ টাকা আয়ের অর্থ, মহিলার বার্ষিক আয় প্রায় ২০.২৭ লক্ষ টাকা। মহিলা জানিয়েছেন, উত্সব বা বিবাহের মরসুমে, দুই সপ্তাহে তাঁর ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়েছে। ভারত সরকারের প্রকাশিত সাম্প্রতিক আয়কর তথ্য অনুসারে, ৩.২৫ কোটি করদাতার মধ্যে, মাত্র ৫ লক্ষের বার্ষিক আয় ২০ লক্ষ টাকার বেশি। এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, ভিক্ষাবৃত্তি এই মহিলা এবং তাঁর পরিবারকে কতটা ধনী করেছে।
বস্তুত, ভিক্ষাবৃত্তিকে একেবারে পারিবারিক ব্যবসার পরিণত করেছেন এই পরিবার। স্বামী-স্ত্রী এবং তাঁদের ৩ সন্তানের সকলেই ভিক্ষা করেন। শুধু তাই নয়, ওই মহিলার বোন এবং ভগ্নিপতিও একই কাজে যুক্ত। মহিলাকে আটকের সময়, তাঁর কাছে ১৯,২০০ টাকা ছিল। মহিলা জানিয়েছেন, সাত দিনে তিনি ওই টাকা উপার্জন করেছেন। তার আট বছর বয়সী মেয়েও দুপুর না গড়াতেই ভিক্ষা করে গড়ে ৬০০ টাকা আয় করে। এই মা-মেয়ে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লেও, পালিয়ে গিয়েছেন বাবা এবং তাঁদের অন্য দুই ছেলে-মেয়ে। ধরা পড়েছেন মহিলার বোন ও ভগ্নিপতিও।
মজার বিষয় হল, গত বছর ইন্দোরের অন্য এক জায়গায় ভিক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন এই মহিলা। তাঁকে ভিক্ষাবৃত্তির পথ থেকে সরিয়ে আনার জন্য তাঁর কাউন্সেলিংও করা হয়েছিল। সেই সময় তিনি একটি ক্রাচ নিয়ে ভিক্ষা করতেন। কোনও প্রতিবন্ধকতা ছিল না। শুধুমাত্র দাতাদের মন গলাতে, তাদের বিভ্রান্ত করতে ক্রাচ ব্যবহার করতেন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে বোঝানোর পর, তিনি ক্রাচ ত্যাগ করেছেন, কিন্তু ভিক্ষা করার জন্য তাঁর বাচ্চাদের ব্যবহার করা শুরু করেছেন। সাম্প্রতিক আটকের পর অবশ্য তিনি বলেছেন, “আমি কোনও চুরি করিনি, আমি শুধু ভিক্ষা করেছি।”
তবে, এটা কোনও একটি পরিবারের কাহিনি নয়। মধ্য ভারতে বর্তমানে সবথেকে বড় এবং সহজ ব্যবসা হয়ে উঠেছে ‘ভিক্ষাবৃত্তি’। শুধুমাত্র ইন্দোর শহরেই সাত হাজারেরও বেশি ভিক্ষুক রয়েছে। তাদের সকলেরই রোজগার জনসংখ্যার ৯৮.৭ শতাংশের থেকে অনেক বেশি। এই সাত হাজার ভিক্ষুকের মধ্যে, শিশুরই সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের মতো। চালকরা সিগন্যালে গাড়ি থামলেই ঘিরে ধরে ভিক্ষুকের দল। কাউন্সেলিং সংস্থাগুলি জৈানিয়েছে, ভিক্ষাকে অনেকেই তাঁদের উপার্জনের পথ বলে বিবেচনা করছেন। এটা অত্যন্ত খারাপ মানসিকতা। এতে সমাজে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ইন্দোরের জেলাশাসক সম্প্রতি, শহরে ভিক্ষা করা শিশুদের উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই অভিযানে বেরিয়েই ভিক্ষা ব্যবসার এই রমরমা ধরা পড়েছে।