Manmohan Singh: বিশ্বাস করতেন ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে, মনমোহন কেন ছিলেন ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’ প্রধানমন্ত্রী?
Manmohan Singh: প্রবল বিরোধিতার মুখে পিছু হটেন সোনিয়া গান্ধী। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সোনিয়া নয়, প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন অন্য কেউ। ইউপি এর মধ্যে তখন প্রধানমন্ত্রী খোঁজা শুরু। সেই সময়ই উঠে আসে বর্ষীয়ান নেতা মনমোহন সিং এর নাম।
১০ বছর ধরে যাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখেছে দেশ, সেই মনমোহন সিং – এর নাকি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথাই ছিল না। তাই তাঁর বায়োপিকের নামকরণ করা হয়, ‘ অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’। তাঁর নাম নিয়ে সেভাবে জল্পনাও ছিল না। হাই কমান্ডের ঘোষণায় চমকেই গিয়েছিলেন অনেকে।
২০০৪ সালে নতুন করে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস তথা ইউপিএ। দেশের ১৪ তম প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হওয়ার আগে ছিল জোর জল্পনা। গান্ধী পরিবারের ধারা বজায় রেখে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হবেন এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। আবার জন্মসূত্রে ভারতীয় না হওয়ায় সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না তা নিয়েও ছিল সন্দেহ। আচমকাই হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী করা হল কংগ্রেস নেতা তথা দেশের অন্যতম বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং কে। অনেকেই বলেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথাই ছিল না, ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন। তাই তিনি যেন অ্যাক্সিডেন্টাল প্রধানমন্ত্রী।
তবে জানা যায় মনমোহনকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত অতটা সহজ ছিল না। দলের অন্দরে এবং শরিকদের মধ্যে বারবার আলোচনা চলছিল সোনিয়া গান্ধীর নাম নিয়ে। তবে সব জল্পনা আর বিতর্ক শেষে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পা রাখলেন মনমোহন সিং। একবার নয়, পরপর দুবার। একটানা ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়লেন মনমোহন।
এই খবরটিও পড়ুন
সোনিয়া গান্ধী পিছিয়ে গেলেন বলেই মনমোহনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া
২০০৪- এর লোকসভা নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট প্রায় কংগ্রেস, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া হয় না একটুর জন্য। এরপর শরিকদের নিয়ে তৈরি হয় ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ আলায়েন্স বা ইউপিএ। শরিকদের নিয়ে যখন সোনিয়া গান্ধী সরকার গঠনের পথে, তখন বিরোধীদের পক্ষ থেকে নানা রকমের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সোনিয়া গান্ধী জন্ম সূত্রে ভারতীয় নন, তিনি কীভাবে হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী?
প্রবল বিরোধিতার মুখে পিছু হটেন সোনিয়া গান্ধী। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সোনিয়া নয়, প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন অন্য কেউ। ইউপি এর মধ্যে তখন প্রধানমন্ত্রী খোঁজা শুরু। সেই সময়ই উঠে আসে বর্ষীয়ান নেতা মনমোহন সিং এর নাম। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসেবে তাঁর পরিচিত ছিলই। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতাও ছিল মনমোহনের। তাই তাঁকেই পছন্দ ছিল একাংশের। তবে এই দৌড়ে ছিল আরও একজনের নাম। প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাই মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। সেই সময় সংসদও ছিলেন না মনমোহন সিং।
তাঁর ঝুলিতে ছিল কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ডের ডিগ্রি। তবে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া দলের অনেকেই মেনে নেন নি বলে মনে করা হত। তাঁর সিদ্ধান্ত আদৌ দলের মধ্যে কোন গুরুত্ব পেতো কি না তা নিয়েও চর্চা হয়েছে বহু। এমনটাও বলা হত, শুধুমাত্র খাতায়-কলমে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রয়েছেন মনমোহন সিং আদতে সরকার চলে সোনিয়া গান্ধীর কথায়। মনমোহনের জায়গায় প্রণব মুখোপাধ্যায় কে কেন প্রধানমন্ত্রী করা হলো না তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছিল। তবে এসবের কোনও কিছুই বিশেষ বিচলিত করতে পারেনি মনমোহন সিং কে। তিনি ধীর, স্থির, অবিচল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে, এমনকি পরেও বেশ কিছুদিন প্রণব মুখোপাধ্যায় কে স্যার বলে সম্বোধন করতেন তিনি।
তবে মনমোহন সিং কে প্রধানমন্ত্রী করার পিছনে কংগ্রেসের অন্য একটি তাৎপর্য খুঁজে পান বিশ্লেষকরা। মনমোহন সিং ছিলেন শিখ। তিনি ছিলেন প্রথম শিখ যিনি দেশের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর যে শিখ দাঙ্গা হয়েছিল, সে কথা কারো অজানা নয়। শিখ সমাজে ভাবমূর্তি ফেরাতেই মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রী করে দেওয়া হয়? তবে আলোচনা বা চর্চা যাই হোক, মনমোহন সিং বিশ্বাস করতেন, ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যখন তাঁর দ্বিতীয় টার্ম চলছে, তখন তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে যখন নানারকম কানাঘুষো শোনা যায়, তখন মনমোহন সিং বলেছিলেন, মিডিয়ার থেকে ইতিহাস তাঁকে বেশি মনে রাখবে। আজ চলে যাওয়ার পর সে কথাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি।