Former PM Manmohan Singh: মিতভাষী মনমোহন কি কংগ্রেসের ‘কাঠপুতুল’ ছিলেন? উত্তর নিজেই দিয়ে গেলেন…

Former PM Manmohan Singh: ২০০৪ সালে ইউপিএ জোট কেন্দ্রে সরকার গড়ার সময় প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের দূরে রেখে মনমোহনের নাম ঘোষণা করেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধী।

Former PM Manmohan Singh: মিতভাষী মনমোহন কি কংগ্রেসের ‘কাঠপুতুল’ ছিলেন? উত্তর নিজেই দিয়ে গেলেন...
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং (ফাইল ফোটো)
Follow Us:
| Updated on: Dec 27, 2024 | 8:01 AM

নয়াদিল্লি: তিনি গান্ধী পরিবারের কেউ নন। পোড়খাওয়া রাজনীতিকও নন। ছিলেন অর্থনীতির অধ্যাপক। সেখান থেকে দশ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকেছেন মনমোহন সিং। ২০০৪ সালে তাবড় তাবড় রাজনীতিকদের পিছনে ফেলে তাঁকেই বেছে নেন সনিয়া গান্ধী। অনেকে বলেন, তিনি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার। বিজেপি-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, ১০ বছর তাঁকে কাঠপুতুল বানিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে মনমোহন সিংয়ের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাঁরা সততা নিয়ে কোনওদিন প্রশ্ন না উঠলেও তাঁকে সামনে রেখে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।

মিতভাষী মনমোহনকে ১৯৯১ সালে দেশের অর্থমন্ত্রী করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও। তখনও রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। মন্ত্রী হওয়ার পর কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হন। ২০০৪ সালে ইউপিএ জোট কেন্দ্রে সরকার গড়ার সময় প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের দূরে রেখে মনমোহনের নাম ঘোষণা করেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধী।

২০০৪ সালের ২২ মে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন মনমোহন। আর তার কয়েকদিন পরই গঠন করা হয় ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল (এনএসি)। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কাউন্সিল। এনএসি-র চেয়ারপার্সন হন সনিয়া গান্ধী। বিরোধীরা বলতে শুরু করে, মনমোহনকে সামনে রেখে বকলমে সরকার চালাতে এই উপদেষ্টা কাউন্সিল তৈরি করা হয়েছে। আর তা থেকেই মনমোহনকে কাঠপুতুল বলে আক্রমণ শুরু হয়। বিজেপি-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, মনমোহনকে সামনে রেখে কেন্দ্রের সব সিদ্ধান্ত নিত এনসিএ।

এই খবরটিও পড়ুন

কয়েকদিন আগে সংসদে সংবিধান বিতর্কে অংশ নিয়ে এই ইস্যুতে গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জমানায় ক্যাবিনেটের উপর ছিল ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল। প্রধানমন্ত্রীর উপরে কংগ্রেস এই অসাংবিধানিক কাউন্সিলকে বসিয়েছিল।”

প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন মনমোহন সিং কতটা ‘অসহায়’ ছিলেন, তা নিয়েও বারবার কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। সাজাপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিদের পদ বাঁচাতে ২০১৩ সালে অর্ডিন্যান্স এনেছিল ইউপিএ সরকার। সেইসময় সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল গান্ধী তার বিরোধিতা করেন। এবং সর্বসমক্ষে অর্ডিন্যান্সের কপি ছিঁড়েও ফেলেন রাহুল। সংবিধান বিতর্কে রাহুলের নাম না নিয়েই সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেন মোদী। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে এক ‘অহংকারী’ নেতা ছিঁড়ে দিয়েছিলেন বলে আক্রমণ করেন।

১০ বছর তিনি প্রধানমন্ত্রী থেকেছেন। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী এবং নরেন্দ্র মোদী- এই তিনজন শুধু তাঁর চেয়ে বেশিদিন প্রধানমন্ত্রী থেকেছেন। এই দশ বছরে মনমোহন সিংয়ের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে কোনওদিন প্রশ্ন তোলার সুযোগ পায়নি বিরোধীরা। কিন্তু, তাঁর দশ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে টু-জি স্পেকট্রাম, কমনওয়েলথ গেমস, কয়লা কেলেঙ্কারির মতো দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তারপরও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নীরব থেকেছেন। এমনকি, রাহুল গান্ধী অর্ডিন্যান্স নিয়ে তীব্র আক্রমণের পরও মুখ খোলেননি মনমোহন। তাই তাঁকে ‘মৌনীমোহন’, ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বলে আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। বিরোধীদের শত আক্রমণেও নীরব থেকেছেন মিতভাষী মনমোহন।

তবে ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শেষ সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে নিয়ে সমালোচনার জবাব ২ লাইনে দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। বলেছিলেন, “আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, সমকালীন সংবাদমাধ্যম কিংবা সংসদে বিরোধী দলের তুলনায় ইতিহাস আমার প্রতি সদয় থাকবে। সরকারের ক্যাবিনেট ব্যবস্থায় যা হয়েছে, তা সব প্রকাশ করতে পারি না। তবে জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার পরিপ্রেক্ষিতে আমি যা করতে পারতাম, তা করেছি।”