Manmohan Singh: কেমন ছিল মনমোহনী সংস্কার? কেন তাঁকে বলা হয় উদার অর্থনীতির ভগীরথ?

Manmohan Singh: দিনটা ছিল ২৪ জুলাই, সালটা ১৯৯১। মাত্র একমাস আগে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন নরসিমা রাও। রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই বলেন আসলে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার সুযোগ করে দিয়েছিল রাজনীতি থেকে প্রায় অবসর নেওয়া নরসিমাকে। এই ১৯৯১ সালে, ভারত যখন একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের কাঁধে তুলে দেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।

Manmohan Singh: কেমন ছিল মনমোহনী সংস্কার? কেন তাঁকে বলা হয় উদার অর্থনীতির ভগীরথ?
কী বলছে ইতিহাস? Image Credit source: Facebook
Follow Us:
| Updated on: Dec 27, 2024 | 12:42 AM

কলকাতা: আধুনিক ভারতের অর্থনীতির রূপকারের বিদায়। গভীর শোকে জাতীয় রাজনীতি। ব্যতিক্রমী নেতাকে হারাল ভারত। ইতিমধ্যেই শোকবার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শোকজ্ঞাপন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্য রাজনৈতিক নেতাদের। ১৯৯১ সালে প্রথমবার রাজ্যসভার সদস্য হন মনমোহন সিং। ‘উদার অর্থনীতিকরণের মুখ্য রূপকার’ বলা হয় মনমোহনকে। অনেকেই বলেন উদার অর্থনীতির যে রাস্তায় হেঁটে ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে গিয়েছে তার পিছনেও বড় অবদান রয়েছে মনমোহনেরই। 

২০০৪ সালে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৯ সালেও তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সব মিলিয়ে ১০ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন। তবে তার আগেও ১৯৯৮-২০০৪ সাল পর্যন্ত লোকসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন তিনি। অর্থনীতির খোলনলচে বদলে দেশ বদলের স্বপ্ন দেখা শুরু সেই সময় থেকেই। এক সময় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদেও ছিলেন তিনি। সেই সময় থেকেই একের পর এক অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক কাজে হাত। 

দিনটা ছিল ২৪ জুলাই, সালটা একানব্বই। মাত্র একমাস আগে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন নরসিমা রাও। রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই বলেন আসলে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার সুযোগ করে দিয়েছিল রাজনীতি থেকে প্রায় অবসর নেওয়া নরসিমাকে। এই ১৯৯১ সালে, ভারত যখন একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের কাঁধে তুলে দেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ওই ২৪ জুলাইয়েই অর্থমন্ত্রী মনমোহন তাঁর প্রথম মতো বাজেট পেশ করলেন লোকসভায়। একেবারে গেম-চেঞ্জিং নতুন শিল্প নীতি নিয়ে হাজির হয়ে যান মনমোহন। তাতেই পড়ে যায় সাড়া। 

এই খবরটিও পড়ুন

ঠিক কী হয়েছিল একানব্বইয়ে? 

১৯৯১ সালে ভারতের মসনদে তখন চন্দ্রশেখর সরকার। তীব্র ডামাডোল রাজনীতির আঙিনায়। ইরানে হয়ে গিয়েছে ইসলামি বিপ্লব। অন্যদিকে ধসে গিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের অবস্থাও শোচনীয়। এহেন অবস্থায় তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়ে ভারত। বাজেট পেশ করতে গিয়ে একেবারে মুখ খুবড়ে পড়ে চন্দ্রশেখর সরকার। ফরেক্স রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পৌঁছায় ১.২ বিলিয়ন ডলারে। অনেকেই বলেন, সেই সময় একেবারে বর্তমান পাকিস্তানের মতো অবস্থা হয়েছিল ভারতের। গোটা দেশে তখন ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট সঙ্কট বা মুদ্রা সঙ্কট। মাথার উপর ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে, যা শোধ করতে ব্যর্থ সরকার। বেড়ে গিয়েছে সরকারি আয়ের থেকে ব্যয়ের পরিমাণ। হু হু করে কমে যায় বিনিয়োগ। শাপ মুক্তি চেয়ে চন্দ্রশেখর সরকার তখন আইএমএফ এর দ্বারস্থ হয়েছে। আইএমএফ থেকে ২.২ বিলিয়ন ঋণ পেলেও জামানত হিসেবে রাখতে হয় টন টন সোনা। এরইমধ্যে এসে যায় ভোট। মানুষের ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যায় ব্যালটে। ক্ষমতায় আসে নরসিমা সরকার। ভারতের ততদিনে ওই কালো সময়কে পিছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দরকার ছিল একটা ম্যাজিকের। আর সেই ম্যাজিশিয়ান হয়েই যেন উঠে এসেছিলেন মনমোহন। 

কোন পথে হয়েছিল শাপ মুক্তি? 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৯১ সালের সেই সঙ্কটই ভারতের অর্থনীতিতে উদারীকরণের রাস্তা চওড়া করে দেয়। মনমোহনের হাত ধরে ভারত তার অর্থনীতিকে আরও বাজার ভিত্তিক করে। ফলে ব্যক্তিগত এবং বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা আরও প্রশস্ত হয়ে যায়। শুল্ক প্রত্যাহার, ট্যাক্স কমানো-সহ একাধিক সংস্কারের পথে হাঁটেন মনমোহন। বাজার নিয়ন্ত্রিত চাহিদা ও যোগানের উপর জোর দিয়েই যাবতীয় রূপরেখা ঠিক করতে থাকেন মনমোহন। অর্থনীতির সেই নয়া উদারীকরণের ফলে দেশে বাড়তে থাকে বিদেশি বিনিয়োগ। কিছুদিনের মধ্যে যার ছাপ দেখা যায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। নরসিমা সরকার ও অর্থমন্ত্রী মনমোহনের যৌথ উদ্যোগে বাণিজ্য নীতিতেও আসে একগুচ্ছ সংস্কার। যা আমদানি-রফতানির দীর্ঘসময়ের ভাটা রুখতে একেবারে নতুন ওষুধের মতো কাজ করে। রফতানি ক্ষেত্রে দেওয়া হয় বিশেষ ভর্তুকি। একইসঙ্গে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিকে দেওয়া হয় ‘স্বশাসনের’ অধিকার। স্বতন্ত্রভাবে আমদানি-রপ্তানির অধিকার দেওয়া হয় তাদের হাতে। উঠে যায় লাইসেন্স রাজ ব্যবস্থা। শিল্প ক্ষেত্রে চলতে থাকা মনোপলি ভেঙে যায় বহু ক্ষেত্রেই। বলে বিনিয়োগের রাস্তা আরও চওড়া হয়ে যায়। ইতিহাস বলছে, যার ফলে প্রায় ১৮টি সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগের একেবারে ঝড় ওঠে। 

১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। যদিও এই ৫ বছরেই ভারত পেয়ে গিয়েছিল তার ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন দিশা। মনমোহনের মুকুটেও জুড়েছিল নতুন পালক। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে পান ‘এশিয়া মানি’ পুরস্কার (সেরা অর্থমন্ত্রী)।