‘সচিনকে প্রতি মাসে ১০০ কোটি আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনিল দেশমুখ’, বিস্ফোরক পরমবীর

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Mar 20, 2021 | 8:33 PM

গত বুধবারই মহারাষ্ট্রের পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিং(Param Bir Singh)-কে বদলি করে হোম গার্ড দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নেন হেমন্ত নাগরালে(Hemant Nagrale)।

সচিনকে প্রতি মাসে ১০০ কোটি আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনিল দেশমুখ, বিস্ফোরক পরমবীর
ফাইল চিত্র।

Follow Us

মুম্বই: পুলিশ কমিশনারের বদলি নিয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ(Anil Deshmukh)-র বয়ানে ক্ষুব্ধ মহারাষ্ট্রের হোমগার্ড দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরমবীর সিং (Param Bir Singh)। এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে(Uddhav Thackeray)-কে চিঠিও দিলেন তিনি। চিঠিতে সদ্য বদলি হওয়া পুলিশকর্তার দাবি, নিয়ম মাফিকই তাঁর বদলি হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ এই বিষয়ে ভুল বক্তব্য রেখেছেন। চিঠিতে তিনি এও দাবি করেন, “অম্বানীকাণ্ডে ধৃত পুলিশ অফিসার সচিন ভাজে়কে প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা তোলাবাজির লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলেন রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ।” ইতিমধ্যেই প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের দাবিতে শোরগোল পড়েছে পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলে।

২৫ ফেব্রুয়ারি শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর বাড়ির সামনে থেকে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি উদ্ধারের পরই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিল মুম্বই পুলিশ মহল। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা নিজেদের হাতে তদন্তভার তুলে নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মহারাষ্ট্রের পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিং(Param Bir Singh)-কে বদলি করে দেওয়া হয়। নতুন কমিশনার পদে দায়িত্ব নেন হেমন্ত নাগরালে(Hemant Nagrale), গত বুধবার টুইটে এমনটাই জানান রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ(Anil Deshmukh)।

ছয় পাতার চিঠিতে বহু বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরেছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিং। চিঠিতে তিনি জানান, ১৭ মার্চ কমিশনার পদ থেকে বদলির নির্দেশ পাওয়ার পরদিনই, অর্থাৎ ১৮ মার্চ থেকে তিনি হোম গার্ডের কমান্ড্যান্ট জেনারেলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মহারাষ্ট্র পুলিশ আইনের ২২এন(২) ধারায় তাঁর বদলির নির্দেশের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মুকেশ অম্বানীর বাড়ির সামনে থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্দেশ্যেই তাঁর বদলি করা হয়েছিল।”

চিঠিতে তিনি বলেন, “রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অ্যান্টিলিয়া কাণ্ডে মুম্বই পুলিশ ও তাঁর দফতরের গাফিলতির কথা বলেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন যে আমার গাফিলতিগুলি ক্ষমাযোগ্য নয় এবং বদলিও প্রশাসনিক প্রয়োজনে করা হয়নি।” চিঠিতে তিনি অম্বানীভবনকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, সেই বৈঠকেও তিনি অনিল দেশমুখের বহু বেআইনী কার্যকলাপের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। এই বিষয়ে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস প্রধান শরদ পাওয়ার ও অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বদেরও এই বিষয়ে জানিয়েছিলেন তিনি বলেই দাবি করেছেন চিঠিতে।

আরও পড়ুন: ভিড়ের মধ্যে অনুমতি ছাড়াই হবে করোনা টেস্ট, মুম্বইতে নতুন নিয়ম

অম্বানীকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধৃত ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ অফিসার সচিন ভাজ়ের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ তাঁর সরকারি আবাসন ধ্যানেশ্বরে সচিন ভাজ়েকে ডেকেছিলেন বলে জানান প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। তিনি জানান, সেই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সেক্রেটারি পালান্দেও উপস্থিত ছিলেন। সেই সাক্ষাতে অনিল দেশমুখ বলেছিলেন প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তিনি বলেন, মুম্বইয়ে প্রায় ১৭৫০টি বার, রেস্তরাঁ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে যদি দুই-তিন লাখ টাকা করে প্রতি মাসে আদায় করা হয়, তবে মাসে প্রায় ৪০-৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা যাবে। বাকি টাকার ব্যবস্থা অন্য জায়গা থেকে করা হবে।

পরমবীর সিং জানান, সেই দিনই সচিন ভাজ়ে তাঁর অফিসে এসে গোটা ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। এর কয়েকদিন পর সোশ্যাল সার্ভিস শাখার এসিপি সঞ্জয় পাতিলকেও ডেকে পাঠিয়েছিলেন অনিল দেশমুখ। সেই বৈঠকে আরও দুই অফিসার উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁদের ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, কেবল পালান্দে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকেও মুম্বইয়ের হুক্কা বার থেকে টাকা আদায়ের কথাই বলেছিলেন অনিল দেশমুখ, একথাও চিঠিতে তুলে ধরেন পরমবীর সিং। বৈঠক শেষে তিনি এসিপি পাতিলকে জানান, ১৭৫০ টি বার, রেস্তরাঁ থেকে মাসে ৪০-৫০ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব।

এই বিষয়ে এসিপি পাতিলের সঙ্গে পরমবীর সিংয়ের যে বার্তালাপ হয়েছিল, চিঠিতে তারও বিবরণ তুলে ধরেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সচিন ভাজ়ে ও এসিপি পাতিল-উভয়ই তাঁর কাছে এসে গোটা ঘটনাটি তুলে ধরেছিলেন বলে জানান পরমবীর সিং। তাঁর অভিযোগ, “অনিল দেশমুখ প্রায়সই পুলিশ আধিকারিকদের ডেকে নানাধরনের নির্দেশ দিতেন। টাকা আদায়ে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী নানা পদ্ধতিও বলতেন।”

দাদরা-নগর হাভেলির বিধায়ক মোহন দেলকরের আত্মহত্যার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করে সঠিক তদন্তের দাবি করেন তিনি। পরমবীর সিং জানান, আত্মহত্যার ঘটনাটির তদন্ত দাদরা-নগর হাভেলির পুলিশের করা উচিত বলে জানালেও প্রথম থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাধা দিয়েছিলেন।

বিগত ৩২ বছর ধরে কর্মজীবনে তিনি সৎ ছিলেন বলেই দাবি করে তিনি জানান, তাঁর বদলি প্রসঙ্গে যে ভুয়ো তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে, এই বিষয়ে কোনও প্রমাণ নেই। মুখ্যমন্ত্রী যেন এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে সম্পূর্ণ ঘটনাটি সামনে আনেন, চিঠিতে এই আবেদনই জানান তিনি।

আরও পড়ুন: ‘ভারত-চিনের মধ্যে কখনওই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি’, লাদাখ নিয়ে লঘু আমেরিকা

Next Article