বেঙ্গালুরু: চন্দ্রযান-৩ অভিযানের সময়ই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেছিলেন। তবে, কী হয়েছে তখনও স্পষ্ট ছিল না তাঁর কাছে। ২০২৩-এর ২ সেপ্টেম্বরটা ছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় দিন। ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল মহাকাশে ভারতের প্রথম সৌর মানমন্দির, আদিত্য এল১। ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট হল পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে অবস্থিত এমন এক জায়গা, যেখান থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণের পথে আর কোনও বাধা থাকে না। এমন এক মহা গুরুত্বপূর্ণ দিনেই জোর ধাক্কা খেয়েছিলেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে এক রুটিন স্ক্যান করিয়েছিলেন তিনি। ধরা পড়েছিল তাঁর পেটে বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ, অর্থাৎ, ক্যানসার! সম্প্রতি টার্মাক মিডিয়া হাউসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, নিজেই তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পর্কে জানিয়েছেন ইসরো প্রধান।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডক্টর অনন্ত কৃষ্ণন এম। তাঁকে সোমনাথ জানিয়েছেন, চন্দ্রযান-৩ অভিযানের সময় থেকেই তিনি শরীরে কিছু সমস্যা অনুভব করছিলেন। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। তবে, শরীরে যে কর্কটরোগ বাসা বেঁধেছে, সেই সম্পর্কে তখনও কোনও ধারণা ছিল না এস সোমনাথের। সোমনাথ বলেছেন, “আদিত্য এল-১ লঞ্চের দিন সকালে, আমি কিছু স্ক্যান করিয়েছিলাম। সেই স্কান রিপোর্টে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, আমার শরীরে ক্যান্সার বাড়ছে। পেটে একটা টিউমার হয়েছে।”
ক্যানসার নির্ণয়, ইসরো প্রধানের কাছেও যেমন বড় ধাক্কা ছিল, তেমনই তাঁর পরিবার এবং তাঁর সহকর্মীদের কাছে বিরাট ধাক্কা ছিল। পরিবার এবং তাঁর সহকর্মীরা সকলেই এই সময় তাঁর পাশে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সোমনাথ। তিনি বলেছেন, “আমার পরিবারের জোর ধাক্কা খেয়েছিল। কিন্তু, আমি ক্যানসারকে সহজভাবে নিয়েছিলাম এবং এর চিকিৎসা শুরু করেছিলাম। সেই সময় জানতাম না এটা সম্পূর্ণরূপে সারবে কিনা। তবে চিকিৎসা শুরু করেছিলাম।”
এস সোমনাথ জানিয়েছেন, এই অপ্রত্যাশিত খবর সামনে আসার পর অতিরিক্ত কিছু স্ক্যানের জন্য তাঁকে চেন্নাইয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, বংশগত কারণেই তাঁর ক্যানসার হয়েছে। রোগ নির্ণয়ের পর দ্রুত কেমোথেরাপি শুরু হয়েছিল। তারপর, অস্ত্রোপচার করে ওই টিউমারটি বেরও করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে হাসপাতালে মাত্র চার দিন ছিলেন তিনি। পঞ্চম দিন থেকেই ফের ইসরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছিলেন তিনি। সেই সময় কোনও ব্যথা অনুভব করেননি তিনি। এখন অবশ্য ক্যানসার মুক্ত হয়েছেন সোমনাথ। তবে, তাঁকে নিয়মিত চেকআপ করাতে হচ্ছে এবং তাঁর ক্যানসারের জায়গাটিও নিয়মিত স্ক্যান করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, “আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। ফের সব কাজ করা শুরু করেছি।”