‘ভ্রূণেরও নিজস্ব প্রাণ রয়েছে’, গর্ভাবস্থার ৩১ সপ্তাহে গর্ভপাতের আবেদন খারিজ কেরল হাইকোর্টের

TV9 Bangla Digital | Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী

Sep 04, 2021 | 1:35 PM

৩১ সপ্তাহের গর্ভবতী এক মহিলা সম্প্রতিই কেরল হাইকোর্টে গর্ভপাতের আবেদন জানিয়েছিলেন। কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছিলেন, গর্ভস্থ ওই শিশু মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা ধরা পড়েছে মেডিক্যাল পরীক্ষায়।

ভ্রূণেরও নিজস্ব প্রাণ রয়েছে, গর্ভাবস্থার ৩১ সপ্তাহে গর্ভপাতের আবেদন খারিজ কেরল হাইকোর্টের
প্রতীকী চিত্র।

Follow Us

তিরুবনন্তপুরম: ভূমিষ্ট হলে তবেই কি তাঁকে জীবিত বা প্রাণের অস্তিত্ব হিসাবে ধরা হবে? গর্ভেও তো ভ্রূণের প্রাণ থাকে, তবে গর্ভপাতের সময় সেই ভ্রূণটির কথা ভাবা হবে না কেন? -এমনই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলল কেরল হাইকোর্ট। গর্ভাবস্থার ৩১ সপ্তাহ চলাকালীন এক মহিলার গর্ভপাতের আবেদন খারিজ করে এই পর্যবেক্ষণ রাখল আদালত।

বিচারপতি পিবু সুরেশ কুমার ওই আর্জি খারিজ করে দিয়ে বলেন, “ভ্রূণ তৈরির মুহূর্ত থেকেই গর্ভস্থ শিশুর প্রাণ থাকে। সুতরাং একটি গর্ভস্থ শিশুকে ভূমিষ্ট শিশুর থেকে আলাদাভাবে দেখার কোনও কারণ নেই। একটি গর্ভস্থ শিশুরও প্রাণ রয়েছে এবং আইনেও গর্ভস্থ শিশুর অধিকারকে মান্যতা দেওয়া হয়। যদি একটি গর্ভস্থ সন্তানকে একজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা যায়, তবে গর্ভস্থ সন্তানের জীবনের অধিকারকে সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে নিশ্চিত মায়ের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সমতুল্য বলে মনে করা যেতে পারে। ”

৩১ সপ্তাহের গর্ভবতী এক মহিলা সম্প্রতিই কেরল হাইকোর্টে গর্ভপাতের আবেদন জানিয়েছিলেন। কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছিলেন, গর্ভস্থ ওই শিশু মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা ধরা পড়েছে মেডিক্যাল পরীক্ষায়। তবে গর্ভপাত আইন ১৯৭১ অনুযায়ী, ২০ সপ্তাহের পর গর্ভপাত করানো যায় না। আদালতের তরফেও সেই আইনের উল্লেখ করেই জানানো হয় যে, গর্ভপাত করানোর সেই নির্দিষ্ট সময়সীমা তিনি পার করে ফেলেছেন, সুতরাং গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

আবেদনকারীর আর্জির ভিত্তিতেই আলাপ্পুজা মেডিক্যাল কলেজের সুপারিন্টেন্ডেন্ট একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ওই মহিলার পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছিল। মেডিক্যাল বোর্ডের তরফে জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়, গর্ভপাত না করানো হলে এবং অপরিণত অবস্থায় ওই সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে শারীরিক জটিলতার কারণে তাঁকে দীর্ঘসময় হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।

গর্ভপাত আিনের ৩২(২) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি গর্ভবতী মহিলার প্রাণের ঝুঁকি থাকে বা সন্তানধারণের কারণে তাঁর মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে কিংবা শিশুটি জন্মের পর শারীরিক বা মানসিকভাবে গুরুতর অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবেই গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কত সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করানো যায়, তা উল্লেখ করা ছিল। যদিও আদালতের পর্য়বেক্ষণ, গর্ভবতী মহিলার প্রাণের ঝুঁকি থাকলে বা শিশুটির জটিল অসুস্থতার সম্ভাবনা থাকলে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন আদালত।

আবেদনকারীর হয়ে সরকারি পক্ষে হাজির ভিনিতা বি আদালতে জানান, ওই মহিলার মেডিক্যাল রিপোর্টেও গর্ভপাত করানোর সপক্ষেই বলা হয়েছে। এর জবাবে বিচারপতি বলেন, “গর্ভবতী মহিলার মৌলিক অধিকার সর্বতভাবে রক্ষা করা হলেও মায়ের পাশাপাশি গর্ভস্থ সন্তানের অধিকারের ভারসাম্য বজায় রেখেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। যদি মায়ের প্রাণেোর ঝুঁকি থাকে, তবে রায় অবশ্যই গর্ভবতী মহিলার সপক্ষেই দেওয়া হবে। কারণ মায়ের জীবন বাঁচানো না গেলে শিশুর জীবনও বাঁচানো যাবে না। ”

মেডিকেল বোর্ড যদি জানায় যে, গর্ভাবস্থার  মায়ের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য কোনও ঝুঁকি নেই, সেক্ষেত্রে  সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে মৌলিক অধিকার অনুযায়ী জন্মের অধিকার দেওয়া হবে গর্ভস্থ সন্তানকে। আরও পড়ুন: চাকরিদাতার দেওয়া ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস’ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারেন কর্মী: সুপ্রিম কোর্ট

Next Article