তিরুবনন্তপুরম: কেরলে ফের মুখ্যমন্ত্রী বনাম রাজ্যপাল। নতুন উচ্চতায় পৌঁছল রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর বিবাদ। রবিবার (২৩ অক্টোবর) কেরলের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। সোমবার (২৪ অক্টোবর), এই প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের তীব্র সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তাঁর মতে, রাজ্যপালের এই আহ্বান জানানোর এক্তিয়ারই নেই। তিনি সংবিধান এবং গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছেন। বিজয়ন বলেছেন, “গণতন্ত্রকে সম্মান করে এমন কেউই এই ধরনের প্রবণতা মেনে নিতে পারবেন না।”
সম্প্রতি, সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য কেরলের এপিজে আব্দুল কালাম টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নিয়োগকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে, রবিবার রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান, কেরলের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ২৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে এগারোটার মধ্যে পদত্যাগ করার নির্দেশ জারি করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ, ইউজিসির নিয়ম মেনে করা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন আরিফ মহম্মদ খান।
এদিন রাজ্যপালের ওই নির্দেশের সমালোচনা করে, পিনারাই বিজয়ন বলেন, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করেছে। তাঁর মতে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে “ধ্বংস” করার লক্ষ্যে “যুদ্ধ ঘোষণা” করেছেন আরিফ মহম্মদ খান। মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, রাজ্যপালই এই নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়োগকর্তা। যদি এই নির্বাচনগুলিতে ভুল থাকে, তাহলে রাজ্যপালেরই তার দায় নেওয়া উচিত। উপাচার্যদের পদত্যাগ করার অনুরোধ খোদ আচার্যও জানাতে পারেন না। বিজয়ন আরও বলেন, “রাজ্যপাল তাঁর আচার্য পদের অপব্যবহার করছেন। নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। এটা অগণতান্ত্রিক উপায়ে উপাচার্যদের ক্ষমতা দখল করে নেওয়া। রাজ্য়পালের পদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য নয়, সংবিধানের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য। উনি আরএসএস-এর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।”
শুধু মৌখিক সমালোচনাই নয়, ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক জোট, আগামী মাসে রাজ্যপালের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে রাজ্যের সবকটি বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি আদালতেও এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবে তারা। সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, “রাজ্যপালের এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। এটি স্বেচ্ছাচারী, বেআইনি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওরা কেরলের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংস করতে চায়। ওরা সেখানে আরএসএস কর্মীদের নিয়োগ করতে চায়, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শ প্রচার করতে পারে। আদালতে এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা হবে। কারণ, সংবিধান রাজ্যপালকে এমন কোনও আদেশ জারি করার অনুমতি দেয়নি।”