কখনও ধমক, কখনও ভর্ৎসনা, কখনও হুঁশিয়ারি – কৃষি মামলায় হাল ধরল সুপ্রিম কোর্টই

ঈপ্সা চ্যাটার্জী | Edited By: সুমন মহাপাত্র

Jan 11, 2021 | 7:48 PM

সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, "আন্দোলনকারীদের রক্ত উত্তেজনায় ফুটছে। কিন্তু দয়া করে তাঁদের (বৃদ্ধ ও মহিলা) ফিরে যেতে বলুন। প্রবল ঠান্ডার পাশাপাশি করোনাও রয়েছে। বৃদ্ধ বা মহিলারাও আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, তার কোনও প্রয়োজন নেই।"

কখনও ধমক, কখনও ভর্ৎসনা, কখনও হুঁশিয়ারি - কৃষি মামলায় হাল ধরল সুপ্রিম কোর্টই
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ।

Follow Us

নয়া দিল্লি: কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষক আন্দোলনকে যেভাবে সামাল দিচ্ছে কেন্দ্র, তাতে ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার কৃষি আইনের বৈধতা ও দিল্লি সীমান্ত থেকে আন্দোলনকারী কৃষকদের হঠানোর আর্জি সংক্রান্ত একাধিক মামলার শুনানিতে কেন্দ্রকে কার্যত তুলোধনা করে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি এ বোপান্নার বেঞ্চে শুনানির সময় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। এক নজরে জেনে নেওয়া যাক কৃষি আন্দোলন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণগুলি।

১. কৃষি আইনের বৈধতা দাবিতে একাধিক আর্জি জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। পাশাপাশি কৃষকদের আন্দোলনস্থল থেকে সরানোর দাবিতেও আদালতে আর্জি জমা পড়েছে। এই বিষয়গুলি নিয়েই একাধিক মামলার শুনানি বসে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে (SA Bobde)-র নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

২. প্রধান বিচারপতি বলেন, “সরকার যেভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা জানিনা আপনারা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে আইন কার্যকর করেছিলেন! একাধিক রাজ্যে আন্দোলন শুরু হয়েছে। গতবার বলেছিলেন, আলোচনা চলছে। কী ধরনের আলোচনা হচ্ছে? আমরা আশাহত।”

৩.শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, “আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। আমরা এই সমস্যার একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান চাই। এইজন্যই আমরা শেষবারও আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপনারাই সময় চেয়েছিলেন। যদি আপনাদের মধ্যে সামান্য দায়িত্ববোধটুকুও থাকে এবং যদি আপনারা আইন কার্যকর প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করেন, তবে আমরা কমিটি গঠন করা সিদ্ধান্ত নেব। যেনতেন প্রকারে আইন কার্যকর করার কারণ কী, তা বুঝতে পারছি না।”

৪. কেন্দ্রকে রীতিমতো ধমক দিয়েই বলা হয়, “আপনারা বলুন, আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়ায় কী স্থগিতাদেশ জারি করবেন? না হলে আমরা করব। গতবারও এই বিষয়ে আপনাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিন্তু জবাব মেলেনি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। মানুষ আত্মহত্যা করছে, ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে।”

৫. সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়, আমরা একটি কমিটি গঠনের কাজ শুরু করা হচ্ছে। একইসঙ্গে কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ জারি করার প্রস্তাবও দিচ্ছি। এই বিষয়ে কেউ তর্ক করতে চাইলে করুক। শুনানির মাঝেই কথা বলা তাঁকে চুপ করিয়ে বলা হয়, “আপনাদের সরকারের উপর বিশ্বাস রয়েছে কিনা, তা প্রয়োজনীয় নয়। আমরা সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রয়োজনীয় যা করতে হয়, তাই করব।”

আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন পেতে রাজনীতিবিদরা যেন বেশি লম্ফঝম্ফ না করেন: প্রধানমন্ত্রী

৬. আন্দোলনকারী কৃষকদের শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে বলে, “আমরা আন্দোলনের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যদি আইন স্থগিত করে দেওয়া হয়, তবে কি আপনারা সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আন্দোলনস্থল পরিবর্তন করবেন?”

৭. পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে চেয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “যদি খারাপ কিছু হয়, তারজন্য আমরা সকলে দায়ী থাকব। আমরা নিজেদের হাতে কারোর রক্ত দেখতে চাই না।”

৮. কৃষকদের সপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, “কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন কৃষকরা। কমিটির সামনে তাঁদের সমস্যাগুলি বলার সুযোগ দেওয়া হোক। কমিটি রিপোর্ট জমা দিলে তারপর কৃষি আইন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এই বিষয়ে কেন্দ্রের তরফে হাজির আইনজীবী হরিশ সালভে আন্দোলন প্রত্যাহারের দাবি তুললে আদালতের তরফে বলা হয়, “একদিনের নির্দেশেই সবকিছু থাকতে পারে না। কৃষকরা আগে কমিটির সামনে যাক। দেশের নাগরিকরা আন্দোলন করতে পারবে না, কখনওই এমন নির্দেশ জারি করবে না আদালত।”

৯. আইনজীবী এম এল শর্মা ১৯৫৪ সালের সংবিধান সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করার বিষয়টি উল্লেখ করলে শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, ১৯৫৪ সংবিধান সংশোধনী আইনে স্থগিতাদেশ জারি করা হচ্ছে না। সংবিধান সম্পর্কিত বিষয়টি নিয়ে পরে শুনানি হবে।

১০. সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ভারত সরকার সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ। আপনারা প্রয়োজনীয় আলোচনা ছাড়াই এমন একটি আইন তৈরি করেছেন, যার ফলে আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছে। আপনাদেরই এই অবরোধ-আন্দোলনের সমাধান করতে হবে।”

এছাড়াও বয়স্ক ব্যক্তি ও মহিলাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, “আন্দোলনকারীদের রক্ত উত্তেজনায় ফুটছে। কিন্তু দয়া করে তাঁদের (বৃদ্ধ ও মহিলা) ফিরে যেতে বলুন। প্রবল ঠান্ডার পাশাপাশি করোনাও রয়েছে। বৃদ্ধ বা মহিলারাও আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, তার কোনও প্রয়োজন নেই। পরবর্তী সময়ে হয়তো আমরাও এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করব। আপনারা তাঁদের বলুন যে সুপ্রিম কোর্ট বৃদ্ধ ও মহিলাদের ফিরে যেতে বলেছেন।”

আরও পড়ুন: ২০০ টাকায় ভ্যাকসিন পেতে সেরামের সঙ্গে চুক্তি সারল কেন্দ্র

Next Article