চেন্নাই: জাতিভিত্তিক বৈষম্যের এক নিদারুণ ছবি উঠে এসেছে তামিলনাড়ুর এক গ্রাম থেকে। এই ভূমেই শুরু হয়েছিল পেরিয়ার আন্দোলন। যেখানে প্রচলিত জাত ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং তামিলনাড়ুর ব্রাহ্মণদের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন পেরিয়ার। সেই ভূমেই ফের বৈষম্যের শিকার তফসিলি জাতির মানুষেরা। এরকমই এক ঘটনার ছবি উঠে এল তামিলনাড়ুর এক গ্রাম থেকে। তফসিলি জনজাতির জন্য নির্দিষ্ট একটি জলের ট্যাঙ্কে মানুষের মল ফেলা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তবে এখানেই নৃশংসতার শেষ নয়। সেই গ্রামের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনও জাতি বৈষম্য বহুল ভাবে প্রচলিত। ঘটনার তদন্তে সেই গ্রামে গিয়ে পুলিশের কাছে এসেছে বৈষম্যের আরও কিছু নজির।
এই গ্রামে এখনও পর্যন্ত অস্পৃশ্যতা মেনে চলা হয়। এবং তা এতটা চরম পর্যায়ে যে, সেই গ্রামে স্থানীয় এক চায়ের দোকানে চা খাওয়ার জন্য দুটি পৃথক গ্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে। মন্দিরে দলিতদের প্রবেশ নিষেধ। আজই এই এলাকায় তদন্তের জন্য বিজেপি একটি দল পাঠাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, তামিল নাড়ুর ইরায়ুর গ্রামের প্রায় ১০০ জন দলিতদের বাড়ি জল যায় ওই ট্যাঙ্ক থেকেই। ১০ হাজার লিটারের জলের ট্যাঙ্ক থেকে অনেকটা পরিমাণে মানুষের মল পাওয়া গিয়েছে। এই অভিযোগ পেতেই গ্রামে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যান পুদুকোট্টাই কালেক্টর কবিতা রামু।
সেখানকার গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁদের ছেলে মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। ডাক্তার পরামর্শ দেন, পানীয় জলের কারণে এইভাবে ছেলে মেয়েরা অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে। আর তারপর কয়েকজন ব্যক্তি সেই ট্যাঙ্কে চড়ে দেখেন জলে কিছু পড়ে রয়েছে কি না। সেই সময়ই জলের ট্যাঙ্কে মানুষের মল দেখতে পাওয়া যায়। এলাকার এক সমাজ কর্মী বলেছেন, “জলের ট্যাঙ্কের ভিতরে অনেকটা পরিমাণে মানুষের মল পাওয়া গিয়েছে। এতটাই মল ছিল যে জল হলুদ রঙের হয়ে গিয়েছে। এসব না জেনেই গত এক সপ্তাহ ধরেই তাঁরা এই জল খাচ্ছিল। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়তেই সত্যিটা সামনে এল।” তবে এর পিছনে কার হাত রয়েছে সেই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। যখন ব্যক্তিরা ট্যাঙ্কের কাছে গিয়েছিল তার ঢাকনা খোলা ছিল এবং গত কয়েকদিনে ট্যাঙ্কের চারধারে বেড়া খুলে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কালেক্টর।
কালেক্টরকে কাছে পেয়ে নিজেদের মনে জমে থাকা ক্ষোভ ভাগ করে নেন গ্রামবাসীরা। সেই গ্রামে রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে বৈষম্য দানা বেঁধে রয়েছে সেকথা বলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গ্রামের মন্দিরে গত তিন পুরুষ ধরে তাঁদের মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। স্থানীয় চায়ের দোকানে তফসিলি জাতির জন্য অন্য গ্লাস দেওয়া হয় শুনে চায়ের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে> তবে এই বৈষম্য দূর করতেও কড়া পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। কালেক্টর ও জেলা পুলিশের প্রধান তফসিলি জাতিদের নিয়ে মন্দিরেও যান। সেই সময় উচ্চ বর্ণের এক মহিলা জানান, তাঁর মধ্যে দেবতা ভর করেছেন এবং তিনি চাননা নিচু জাতির মানুষ এই মন্দিরে পা রাখুক। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছে।