AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Rahul Gandhi: হেরেও জিতে গেলেন, আর কি তাঁকে বলা যাবে, ‘শাহজাদা’ বা ‘পাপ্পু’?

Rahul Gandhi: সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালের নির্বাচনেও একের পর এক মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বারংবার তাঁকে 'শাহজাদা' বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু, মঙ্গলবারের (৪ জুন), ভোটের ফলের পর, আর তাঁকে এই ধরনের কটাক্ষ, উপহাস করা যাবে কি? আসলে গত কয়েক মাসে, একটু একটু করে নিজের ভাবমূর্তি আমূল বদলে ফেলেছেন রাহুল গান্ধী।

Rahul Gandhi: হেরেও জিতে গেলেন, আর কি তাঁকে বলা যাবে, 'শাহজাদা' বা 'পাপ্পু'?
গণনা চলাকালীন সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধীImage Credit: PTI
| Updated on: Jun 05, 2024 | 2:03 AM
Share

নয়া দিল্লি: গত ১০ বছর ধরে তাঁকে বারবার বিজেপি নেতারা বলেছেন ‘পাপ্পু’। তার এই কটাক্ষের নাম তো ছেয়ে গিয়েছিল নেট-দুনিয়ায়। এমনকি, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সংসদের মধ্যে রাহুল নিজেও তাঁর এই উফহাসের নামটির উল্লেখ করেছিলেন। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালের নির্বাচনেও একের পর এক মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বারংবার তাঁকে ‘শাহজাদা’ বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু, মঙ্গলবারের (৪ জুন), ভোটের ফলের পর, আর তাঁকে এই ধরনের কটাক্ষ, উপহাস করা যাবে কি? ৯৯ আসনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। ২০১৯-এর প্রায় দ্বিগুণ! ব্যর্থ সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা। বিজেপির ৪০০ পারের হুঙ্কারের সামনে গুটিয়ে না গিয়ে, মাঠে নেমে লড়াই করেছে। এই সবের নেতৃত্বে ছিলেন রাহুল গান্ধী। হলই বা সভাপতির নাম, মল্লিকার্জুন খাড়্গে।

আসলে গত কয়েক মাসে, একটু একটু করে নিজের ভাবমূর্তি আমূল বদলে ফেলেছেন রাহুল গান্ধী। মানুষের মনে তাঁর প্রতি ভরসা তৈরি হয়েছে। আগে তাঁকে বলা হত অনিচ্ছুক রাজনীতিক। মাঝে মাঝেই রাজনীতি থেকে ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে যেতেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদী কোনোদিন ছুটি নেন না বলে, দুজনের তুলনা করতেন বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু, গত কয়েক মাসে এই ধারণাটার মূলে আঘাত করেছেন রাহুল। গত বছর কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমেই তিনি কার্যত প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন। সেই যাত্রাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উজ্জীবিত হয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। সেই যাত্রার পরও রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক হার হয়েছিল কংগ্রেসের। তাই, লোকসভায় আসন জয়ে সেই যাত্রার কী প্রভাব ছিল, তা তথ্যভিত্তিক তর্কের বিষয়। তবে, এই যাত্রা যে রাহুল নামের রাজাকে মাঠে নামিয়ে এনে দিয়েছিল,তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে সোশ্য়াল মিডিয়াকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও, আগের তুলনায় অনেকটাই চোস্ত তিনি। এটা ঠিক যে, ছোটবেলা থেকেই নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনির মধ্যে থাকার কারণে, কখনই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশার বিশেষ সুযোগ হয়নি তাঁর। কিন্তু গত কয়েক মাসে, তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে তাঁকে এই কাজটাই করতে দেখা গিয়েছে। ভারত জোড়ো যাত্রার সময় তিনি সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনেছেন। নিজেই জানিয়েছেন, আগে তিনি শুধু বলতেন। এখন বলেন না, মানুষের কতা শোনেন। যাত্রা ছাড়াও সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষদের সঙ্গে মিশতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিশেষ করে মেহনতি মানুষ। কখনও ট্রাক চালকের সঙ্গে ট্রাক চালিয়েছেন, কখনও মেকানিকের সঙ্গে বাইক সারিয়েছেন, কখনও কৃষকের সঙ্গে প্যান্ট মুড়ে নেমে পড়েছেন খেতে চাষ করত, মাঝ সমুদ্রে ঝাঁপ মেরেছেন মৎসজীবীদের সঙ্গে। তার এই রূপ, এর আগে দেশ দেখেনি।

শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক পরিপক্ততার দিক থেকেও অনেকটাই এগিয়ে এসেছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে, কর্মসংস্থানের অভাব, মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলি নিয়ে তিনি লাগাতার আক্রমণ করে গিয়েছেন মোদী সরকারকে। বিকল্পের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে হার-জিত যাই হোক না কেন, এই বিষয়গুলি নিয়ে তিনি মাটিতে পড়ে থাকবেন। আন্দোলনের পথে থাকবেন। ভোটে পরাজিত হলেই, ছুটি কাটাতে চলে যাবেন না।

বুথ ফেরত সমীক্ষার দিনটাই ধরা যাক। যে সময়ে একের পর এক সমীক্ষা সংস্থা, কংগ্রেসের বড় পরাজয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেই সময় রাহুল কী করলেন? রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে একটি খোলা চিঠি লিখলেন। বিষয় অগ্নিবীর প্রকল্পে নিযুক্ত সেনা সদস্যদের, আগের নিয়মে নিযুক্ত সেনাদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আর্জি। এই বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক প্রচার সভায় অগ্নিবীর প্রসঙ্গ তুলেছেন। বিশেষ করে, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানের মতো রাজ্যে। ফল যে মিলেছে, তা এই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের পারফরম্যান্সেই পরিষ্কার। তবে, রাহুলের ওই খোলা চিঠি এক বার্তা, ভোটের ফল যাই হোক, অগ্নিবীর নিয়ে তিনি আওয়াজ তুলে যাবেন। থামবেন না।

আর এভাবেই জনতার মনে এক লড়াকু যোদ্ধার ছবি তৈরি হয়েছে রাহুল গান্ধীর। রাহুল গান্ধীর যে, ‘রাজ পরিবারের পাপ্পু’ ভাবমূর্তি বিজেপি তৈরি করেছিল, তা ভেঙে গিয়েছে। তাঁর ‘শাহজাদা’ পরিচয় অনেকটাই ফিকে হয়ে গিছে। বরং, ‘হারকার জিতনে ওয়ালো কো’ কী যেন বলে?