সেহোর: হরিয়ানার প্রিন্স পেরেছে। কিন্তু, মধ্যপ্রদেশের সৃষ্টি পারল না। প্রায় আড়াই দিন ধরে ৩০০ ফুট গভীর কুয়োয় পড়ে থাকার পর উদ্ধার হল আড়াই বছরের সৃষ্টি। রোবট বাহিনীর সাহায্যে উদ্ধারকারী দলের তৎপরতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অবশেষে উদ্ধার হয়েছে মধ্যপ্রদেশের সেহোর জেলার এই খুদে। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না। সৃষ্টিকে যখন কুয়ো থেকে বের করা হয়, তখন সে অচৈতন্য অবস্থায় ছিল বলে উদ্ধারকারী দলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
গত মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ খেলতে-খেলতে কুয়োয় পড়ে যায়। খবর পেয়েই উদ্ধারকাজে নামে পুলিশ, দমকলবাহিনী ও উদ্ধারকারী দল। কিন্তু, মেশিনের মাধ্যমে দড়ি ফেলে উদ্ধারকাজ শুরু করতেই মাটি কাঁপতে শুরু করে। তখন বালিকাটি স্লিপ করে প্রথমে ৫০ ফুট, তারপর ১০০ ফুট গভীরে চলে যায়। তারপর উদ্ধারকাজ যত এগোয়, ততই বালিকাটি গভীরে চলে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৩০০ ফুট গভীরে যায় বালিকাটি। শিশুটিকে যেনতেন প্রকারে উদ্ধার করতে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, এমনকি সেনাও নামানো হয়। কুয়োর ভিতরে অক্সিজেন পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন উদ্ধারকারী দলের আধিকারিকেরা। কিন্তু, তারপরেও বালিকাটিকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে গুজরাট থেকে ৩ সদস্যের রোবট বাহিনী নিয়ে আসা হয়। রোবট বাহিনীর ইন-চার্জ মহেশ আর্য জানান, কুয়োর ভিতরে রোবট পাঠিয়ে শিশুটির অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়। শিশুটি কী অবস্থায় রয়েছে জানার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয়। টানা ৫১ ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চলার পর অবশেষে এদিন সন্ধ্যায় খুদেটিকে উদ্ধার করা হলেও বাঁচানো যায়নি।
৫১ ঘণ্টা ধরে উদ্ধারকাজ চালানোর পর সৃষ্টির কুয়ো থেকে উদ্ধার হওয়ার ঘটনা ১৭ বছর আগের প্রিন্সকে মনে করিয়ে দেয়। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রর বাসিন্দা প্রিন্স ২০০৬ সালে ৬০ ফুট গভীর কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪ বছর। ৪৮ ঘণ্টা ধরে কুয়োর ভিতর ছিলেন তিনি। সেই সময়ও প্রিন্সকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে রাত-দিন এক করে ফেলেন উদ্ধারকারী দলের প্রতিনিধিরা। গোটা দেশবাসীর তখন নজর ছিল টিভির পর্দায়, প্রিন্সের উদ্ধারকাজ দেখতে। ৪ বছরের বালকটি যাতে জীবিত কুয়ো থেকে বেরোতে পারে, সেই প্রার্থনাই ছিল সকলের মনে। শেষ পর্যন্ত, সকলের প্রার্থনাকে সফল হয় এবং জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয় প্রিন্স। কিন্তু, আড়াই বছরের সৃষ্টি বাঁচতে পারল না।
যদিও সৃষ্টিকে জীবিত উদ্ধার করতে কোনও খামতি রাখেননি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। বালিকাটি ১০০ ফুট গভীরে চলে যেতেই উদ্ধারকাজে নামানো হয় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তারপর জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সাহায্যও নেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত, ৪৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও বালিকাটিকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় গুজরাট থেকে নিয়ে আসা হয় ৩ সদস্যের রোবট বাহিনী। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল।