মুম্বই: মানসিক অসুস্থতার জন্য চিকিত্সা চলত তাঁর। নিয়মিত ওষুধও খেতে হত। কিন্তু, গত বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি ওষুধ খাননি। আর তার জেরেই ঘটে গেল ভয়ঙ্কর এক ঘটনা। ১১ বছর বয়সী এক কিশোরীকে গলায় ওড়না জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তারই মায়ের বিরুদ্ধে। মেয়েকে হত্যা করার পর, মহিলা নিজেও ছুরি দিয়ে নিজের কব্জি কেটে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, শেষ পর্যন্ত তাঁকে রক্ষা করা গিয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে, মুম্বইয়ের বোরিভালি এলাকায় এক ভাড়া বাড়িতে। মহিলার স্বামীই পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিলেন কস্তুরবা থানার পুলিশ আধিকারিকরা। তাঁরা এসে ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে দেখেছিলেন, রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছেন মহিলা। আর তাঁর পাশে গলায় ওড়না জড়ানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে তাঁর মায়ে।
পুলিশ আধিকারিকরা, সঙ্গে সঙ্গে মা-মেয়েকে নিকটবর্তী শতাব্দী হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ১১ বছরের কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। তবে, তার মাকে রক্ষা করা গিয়েছে। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। অথচ, তার আগে পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। বাবা-মা-মেয়ে তিনজনে একসঙ্গে বসে রাতের খাবারও খেয়েছিল। এর কিছু পরই ওই মহিলা তাঁর মেয়েকে নিয়ে একটি ঘরে ঢুকে, ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। সেই সময় মেয়েচির বাবা ছিলেন ওই তিন কামড়ার ফ্ল্যাটের বসার ঘরে। স্থানীয় এক দোকান মালিক জানিয়েছেন, ওই রাতে তাদের ফ্ল্যাট থেকে কিশোরী মেয়েটির চিৎকার শোনা গিয়েছিল। সে চিৎকার করে বলেছিল, তাকে তার মা আঘাত করার চেষ্টা করছে। এর কিছু পরই তার চিৎকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
মেয়েটির বাবা জানিয়েছেন, ঘরের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর তাঁর স্ত্রী আর দরজা খোলেননি। তিনি সমানে দরজায় ধাক্কা দিয়েছেন, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধই দেখেছিল। দরজা ভেঙে তাদের ভিতরে ঢুকতে হয়। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই তারা অভিযুক্ত মহিলার স্বামীর বয়ান রেকর্ড করেছে। মহিলা একটু সুস্থ হলে, তাঁরও বয়ান রেকর্ড করা হবে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, গত ১০ বছর ধরেই ওই মহিলার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা চলছে। এর আগে আন্ধেরি ও বরোদার দুটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে কিছুদিন ভর্তিও থাকতে হয়েছিল তাঁকে। মহিলার বিরুদ্ধে আপাতত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। কস্তুরবা মার্গ থানার এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, এই ঘটনার বিষয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।”
এদিকে, এই ঘটনায় হতবাক ওই অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই পরিবারকে দেখে তারা কখনও ভাবতে পারেননি, এই রকম কোনও ঘটনা ঘটতে পারে। সম্প্রতি ওই হাউজিং সোসাইটিতে একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ১১ বছরের মেয়েটি নাচ পরিবেশন করেছিল। এমনকি, বুধবার সন্ধ্যাতেও, পোষ্য কুকুরকে নিয়ে বাড়ির নীচে হাঁটতে বেরিয়েছিল সে। খুবই হাসিখুশি ছিল সে।