নয়া দিল্লি: করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজ্যগুলি। বছর ঘুরলেও এখনও রাজস্বের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি অধিকাংশ রাজ্যই। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের তরফে রাজস্ব ঘাটতি তহবিলে (Revenue Deficit Grant) মোট ৬১৯৫ কোটি টাকা দিয়ে মোট ১৪টি রাজ্যকে আর্থিক সাহায্য করার ঘোষণা করা হল।
প্রতিবছরই কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলির আদায় করা রাজস্বের পরিমাণ যাচাই করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয় ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে। গতবছর করোনা সংক্রমণের কারণে কেন্দ্রের আদায় করা রাজস্বেই ঘাটতি দেখা দেওয়ায় রাজ্যগুলিকে ঘাটতিপূরণে অর্থ সাহায্য করার কাজে বাধা পড়ে। তবে চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যগুলিকে বেশ কয়েক দফায় রাজস্বের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করা হয়। আজ একাদশ দফার আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করা হল অর্থমন্ত্রকের তরফে।
শুক্রবার তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, অর্থমন্ত্রকের ব্যয় মঞ্জুরি বিভাগের তরফে চলতি বছরে বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে রাজস্বের যে ঘাটতি হয়েছে, তা পূরণে মোট ৬১৯৫ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশন যে রাজ্যগুলির জন্য পোস্ট ডেভিলিউশন রাজস্ব ঘাটতি (Post Devolution Revenue Deficit) অনুদানের সুপারিশ করা হয়েছে, সেই রাজ্যগুলি হল অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, হিমাচল প্রদেশ, কেরালা, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পাঞ্জাব, সিকিম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ।
গতবছর করোনা ছাড়াও আমপানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ায় রাজ্যের রাজস্ব আদায়ে বড়সড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তবে পরিবর্তন আসেনি বরাদ্দে। গত বছরের মতোই চলতি অর্থবর্ষেও রাজ্যের রাজস্বের ঘাটতি পূরণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪১৭,৭৫ কোটি টাকা। এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ চলতি অর্থবর্ষে রাজস্বের ঘাটতিপূরণে মোট ৪৫৯৫.২৫ কোটি টাকা পেয়েছে।
আরও পড়ুন: কৃষক আন্দোলনের তরজা তুঙ্গে, সংসদেই শাহ-যোশীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যকে ১১ দফায় মোট ৬৮,১৪৫.৯১ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছরে একাদশতম দফায় ৬১৯৫ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে। এই দফায় সব থেকে বেশি আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে কেরলকে, মোট ১২৭৬.৯২ কোটি টাকা। চলতি বছরে এই রাজ্য রাজস্ব ঘাটতি পূরণে মোট ১৪,০৪৬.০৯ কোটি টাকা পেয়েছে। এরপরই রয়েছে হিমাচল প্রদেশের নাম। করোনা সংক্রমণের কারণে যে বিপুল ঘাটতির মুখে পড়েছিল হিমাচল, তা পূরণে একাদশ দফায় মোট ৯৫২.৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে মোট ১০,৪৭৮.৪১ কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে।
তালিকায় এরপরে রয়েছে পঞ্জাবের নাম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং আগেই জানিয়েছিলেন করোনা সংক্রমণের কারণে রাজ্যের রাজস্বে বিপুল ঘাটতি হয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণেই কেন্দ্রের তরফে এই দফায় ৬৩৮.২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে এই নিয়ে মোট ৭০২০.৭৫ কোটি টাকা। অসমের রাজস্ব ঘাটতি পূরণে ৬৩১.৫৮ কোটি টাকার অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড, ত্রিপুরার জন্য যথাক্রমে ৩৩৫ কোটি, ৪২৩ কোটি ও ২৬৯ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজস্বের ঘাটতি পূরণে যে ১৪টি রাজ্য অনুদান পাবে, তারমধ্যে সবথেকে কম বরাদ্দ করা হয়েছে সিকিমের জন্য। রাজস্বের ঘাটতি পূরণে একাদশ দফায় মোট ৩৭.৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মিলিয়ে মোট ৪১০ কোটি টাকা পেল সিকিম। এছাড়াও মেঘালয়েও রাজস্বের ঘাটতির পরিমাম বাকি রাজ্যগুলির তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় ঘাটতি পূরণে ৪০.৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই নিয়ে চলতি অর্থবর্ষে মোট ৪৫০.০৯ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক।
আরও পড়ুন: ‘রিহানা, গ্রেটার টুইটে ভয় কেন?’, প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে প্রশ্ন অধীর চৌধুরীর