মুম্বই: সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ (Third Wave of COVID-19) যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তা জানান দিচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য়ের দৈনিক আক্রান্তের পরিসংখ্য়ানই। কেবল মুম্বই(Mumbai)-তেই মঙ্গলবার দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের গণ্ডি পার করল। গতকালই এই সংখ্যাটি ছিল ৮ হাজারের ঘরে, অর্থাৎ একদিনেই ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে সংক্রমণে। মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৬৬।
মুম্বইয়ের মেয়র কিশোরী পেডনেকর (Kishori Pednekar) আজই জানিয়েছিলেন যে, শহরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্য়া ২০ হাজার পার করলেই লকডাউন ঘোষণা করতে হবে। ধীরে ধীরে গোটা শহর তথা রাজ্য যে সেই পরিস্থিতির দিকেই এগোচ্ছে, তা বোঝা গেল স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে।
স্বাস্থ্য় দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৬০ জন। সোমবার শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৮২, অর্থাৎ একদিনেই ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে সংক্রমণে। এদের মধ্যে ৮৩৪ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তিকরাতে হয়েছে। ৫২জন রোগীকে মেডিকেল অক্সিজেনও দিতে হচ্ছে।
সংক্রমণের ব্যপক বৃদ্ধি হলেও, কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে রোগীদের স্বাস্থ্যের অবস্থা। রাজ্য় স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে যে ১০ হাজারেরও বেশি মুম্বইবাসী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই উপসর্গহীন। আক্রান্তের ৮৯ শতাংশ অর্থাৎ ৯৬৬৫ জনই উপসর্গহীন বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্য তথা দেশজুড়ে হঠাৎ করোনার বাড়ন্তের জন্য করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনকেই দায়ী করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মেলা এই অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যেই বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশেরও ২৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন। কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ বার অভিযোজিত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
মুম্বইতেও সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে এই ওমিক্রনই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টাতেই মহারাষ্ট্রে নতুন করে ৭৫ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। দেশে প্রায় ১৯০০ জন ওমিক্রন আক্রান্তের মধ্য়েও সর্বাধিক আক্রান্তের সংখ্যা মহারাষ্ট্রেই।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মুম্বইয়ে বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৭ হাজারের বেশি, এরমধ্যে ৪৪৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। শহরে এখনও অবধি ১৬টি কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে এবং ৩৬৯টি বিল্ডিংকে সিল করে দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে চরম অক্সিজেন সঙ্কট ও হাসপাতালে শয্যার আকাল দেখা দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়েই রাজ্য এবার আরও ভাল প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানান মুম্বইয়ের মেয়র। তিনি বলেন, “গতবার কী কী খামতি থেকে গিয়েছিল, তা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। হাসপাতাল ছাড়াও ৩০ হাজারেরও বেশি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অক্সিজেন প্ল্যান্টও কাজ করছে। প্রয়োজনীয় জনবলও রয়েছে, আমরা তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত।”
মুম্বইয়ের মেয়র কিশোরী পেডনেকর জানান, এখনও লকডাউন নিয়ে চিন্তাভাবনা না করা হলেও, মুম্বইয়ে দৈনিক সংক্রমণ যদি ২০ হাজারের গণ্ডি পার করে, তবে লকডাউনের পথে হাঁটতে হবে। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ যদি থিয়েটার, বাগান বা মার্কেটের মতো জনবহুল জায়গায় নিয়ম ভেঙে ক্রমাগত ভিড় জমাতে থাকেন, তবে মুম্বইয়ে মিনি লকডাউনও জারি করা হতে পারে।”