লখনউ: যেদিকেই তাকাবেন, চোখে পড়বে কেবল রোগীর ঢল। কারোর ধুম জ্বর (High Fever), কারোর আবার খিঁচুনি হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই আবার শিশু। অজানা জ্বর ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর প্রদেশে (Uttar Pradesh) যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, তার তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় দল জানিয়েছে, অজানা জ্বর আসলে ডেঙ্গুই (Dengue)। রোগ চিহ্নিতকরণ হলেও চিকিৎসা নিয়ে সমস্যা রয়েই গিয়েছে, কারণ ডেঙ্গুর কবলে থাকা জেলাগুলিতে কোনও হাসপাতালেই আর ফাঁকা নেই বেড।
সারি সারি রোগী শুয়ে রয়েছে মেঝেতে, অধিকাংশই শিশু। হাসপাতালগুলিতে ফাঁকা নেই বেড। সন্তানদের সুস্থ করার আশায় পাগলের মতো ছোটাছুটি করছেন অভিভাবকরা। এমনই দৃশ্য ধরা পড়ছে ফিরোজাবাদ (Firozabad), আগ্রা (Agra) সহ উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশের একাধিক জায়গায়। দু-তিনদিনের জ্বরেই মৃত্যু হচ্ছে ছোট বাচ্চাদের। একবার জ্বরে পড়লে সুস্থ হতে সময় লাগছে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ। শিশুদের ক্ষেত্রে সময়টা আরও বেশি।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেও থাবা বসিয়েছে অজানা জ্বর। তবে চলতি মাসের শুরু থেকেই একই সমস্যায় ভুক্তভোগী যোগীরাজ্যও। সেখানেও দৈনিক প্রায় শতাধিক মানুষ জ্বর, গা-হাত-পা ব্যাথ্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। প্রবল জ্বর, খিঁচুনি, রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং শরীরে জল শুকিয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়াতেই চিকিৎসকরা সন্দেহ করেছিলেন ডেঙ্গু সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
পরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ(Yogi Adityanath)-র নির্দেশে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়, পাঠানো হয় ৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় দলও। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষার পর “ডেঙ্গু হেমারোজিক ফিভার”-কেই মান্যতা দেন চিকিৎসক-গবেষকরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, ফিরোজাবাদ ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জনের দেহের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের রিপোর্টই ডেঙ্গু পজেটিভ আসে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে ডেঙ্গুর পাশাপাশি স্ক্রাব টাইফাস বা বুস টাইফাসের কারণে জ্বর আসার প্রমাণ মিলেছে। পরীক্ষায় একাধিক নমুনায় সবজি বা ঝোপঝাড়ে পাওয়া যাওয়া এই পোকার উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে।
এ তো গেল রোগের কথা, এ বার আসা যাক রোগীর কথায়। অজানা জ্বরে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ফিরোজাবাদের বাসিন্দারাই। সেখানে এখনও অবধি ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডঃ দীনেশ কুমার জানান, মৃতদের মধ্যে পাঁচজনের ডেঙ্গুর কারণেই মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের মৃত্যুর কারণ এখনও অস্পষ্ট।
গতকাল, অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর অবধি ফিরোজাবাদের সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৪৫৮ জন রোগী। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই ২০৭ জন ভর্তি হয়েছেন। ১৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি জানা গিয়েছে। এদিকে, হাসপাতালে এত শয্যা না থাকায়, যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তারা রোগীদের আগ্রা নিয়ে যাচ্ছেন। যারা যেতে পারছেন না, তারা হাসপাতালের দোরগোড়াতেই বসে থাকছেন চিকিৎসার আশায়।
একই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। সেখানেও প্রতিটি ওয়ার্ডে জ্বরের রোগী ভর্তি। নতুন করে শয্যা এনেও হাসপাতালের করিডরেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাজ্য প্রশাসনের তরফে মুখে আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও অবধি গ্রামে গ্রামে স্যানিটাইজেশন ও মশা দূর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলছে না।
আরও পড়ুন: টিকাকরণের গতিতেই হার মানছে করোনা, ‘শেষের শুরু’ কবে, জানালেন বিশেষজ্ঞ