নয়া দিল্লি: সন্তানদের লিভ-ইন সম্পর্কে অভিভাবকদের সম্মতি দেওয়া উচিত। সম্মতি দেওয়া হয় না বলেই সন্তানেরা তাঁদের সম্পর্কের সমস্যা বা ভাবনার কথা অভিভাবকদের বলতে পারে না। লিভ-ইন সম্পর্কে থাকাকালীন একের পর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার এমনই মন্তব্য করলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন (NCW) রেখা শর্মা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শ্রদ্ধা ওয়াকার, মেঘা ও নিক্কির হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই প্রত্যেকটি ঘটনাতেই অভিভাবকেরা সন্তানদের লিভ-ইন সম্পর্ককে সমর্থন করেননি।
দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকার থেকে নিক্কি যাদব এবং মহারাষ্ট্রের মেঘার পরিণতি একই। লিভ-ইনে থাকাকালীন সঙ্গীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে পরপর এই তিনটি ঘটনা সারা দেশে শিরহণ জাগিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় মহিলা কমিশনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এই ধরনের ঘটনা বেড়ে চলাকর উৎস খুঁজতে গিয়েই জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান রেখা শর্মা বলেন, “নিক্কি যাদেবর ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, যুবকের পরিবার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। সন্তানদের পছন্দকে সমর্থন ও শ্রদ্ধা জানানো উচিত অভিভাবকদের। আবার শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি পরিবার। যার পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ।”
সন্তানদের লিভ-ইন সম্পর্ককেও অভিভাবকদের মেনে নেওয়া উচিত জানিয়ে রেখা শর্মা আরও বলেন, “সন্তানেরা যদি লিভ-ইন সম্পর্ক করেন সেটাকেও সমর্থন জানানো উচিত অভিভাবকদের। আমাদের এটাও নিশ্চিত করা উচিত যে, আমরা সন্তানদের সঙ্গে সম্মানীয় আচরণ করব এবং তাদের সম্পদ হিসাবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকব। না হলে এই ধরনের আচরণে সন্তানেরা তাদের অনুভূতি ও ভাবনা-চিন্তা প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করতে পারে। সন্তানদের সঙ্গে আমাদের আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যখন তারা প্রাপ্ত বয়সে আসে, আমাদের বন্ধুর মতো আচরণ করা উচিত, যাতে আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারে।”
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষে দক্ষিণ দিল্লিতে লিভ-ইন সঙ্গী আফতাব পুনাওয়ালার হাতে শ্রদ্ধা ওয়াকারের খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। তাঁকে খুন করার পর দেহ ৩৫ টুকরো করে দীর্ঘদিন ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল আফতাব। পরে সেগুলি জঙ্গলে ফেলে দেয়। লিভ-ইন সম্পর্কের জন্য শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগ ছিল না। এর মধ্যেই মহারাষ্ট্রের পালঘরে একটি ফ্ল্যাটের ভিতরে বক্স খাটের গদির নীচে থেকে উদ্ধার হয় মেঘার দেহ। তাঁকেও লিভ-ইন সঙ্গী হার্দিক শাহ খুন করার পর দেহ গদির নীচে রেখে ঘরে সুগন্ধি ধূপ জ্বালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রেও লিভ-ইন সম্পর্কের জন্য হার্দিককে ত্যজ্যপুত্র করেছিলেন তাঁর বাবা। এবার গত ১০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির মিত্রাও গ্রামে একটি ধাবার ফ্রিজ থেকে উদ্ধার হয়েছে নিক্কি যাদবের খণ্ডিত দেহ। নিক্কি যাদবকেও শ্রদ্ধার মতো খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে রাখার অভিযোগ উঠেছে তাঁর লিভ-ইন পার্টনার সাহিলের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রেও সাহিলের সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই নিক্কির সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগাযোগ ছিল না এবং সাহিলকে বিয়ের অন্যত্র জন্য চাপ দিত তার পরিবার।