নয়াদিল্লি: অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফ্ল্য়াট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ দিল্লি সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার থেকেই আপ পরিচালিত দিল্লি সরকারি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। পাল্টা ডিটেনশন সেন্টার ঘোষণা নিয়ে গড়িমসির জন্য আপ প্রশাসনকে বিঁধেছে কেন্দ্র। তবে কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে আম আদমি পার্টির নেতারা হাতিয়ার করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর বুধবার করা রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট সংক্রান্ত টুইট। সেই টুইটে রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিলস। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মন্ত্রীর টুইটের দাবিকে নস্যাৎ করে জানায় ‘অবৈধ বিদেশি’ রোহিঙ্গাদের কোনও ফ্ল্যাট দেওয়া হবে না। উল্টে তাঁরা এখন দিল্লির যে এলাকায় রয়েছেন, সেই এলাকাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণার জন্যও দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
বুধবার হরদীপ সিং পুরী ঘোষণা করেন রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা। এর পর কেন্দ্রকে বিঁধে অরবিন্দ কেজরীবালের নেতৃত্বাধীন দিল্লি সরকারের অভিযোগ, রাজধানীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘গোপনে’ ‘স্থায়ী বাসিন্দা’র করার চক্রান্ত করছে। দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া পুরীর টুইটকে উদ্ধৃত করে লেখেন, “সকালে কেন্দ্র এই খবরকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসাবে তুলে ধরতে ক্লান্তি বোধ করছিল না। কিন্তু আপের প্রতিবাদের পর দিল্লি সরকারের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্র। কিন্তু বিষয় হল কেন্দ্র সরকার গোপনে রোহিঙ্গাদের দিল্লির স্থায়ী বাসিন্দা বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।” তিনি আরও বলেছেন, “কেন্দ্র সরকার এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নরের ইশারায় অফিসার এবং পুলিশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে তা না দেখিয়েই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ ভাবে দিল্লির বাসিন্দা বানানোর চক্রান্ত মানবে না দিল্লি সরকার।”
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কেন্দ্র আবার দিল্লি সরকারকে দুষেছে অন্য বিষয় নিয়ে। ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে দিল্লির সরকারের গড়িমসিকে বিঁধেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির মদনপুর খাদারের কাঞ্চন কুঞ্জ এলাকায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা থাকেন। সেখানে প্রায় ২৫০টি পরিবারে ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গা থাকেন। সেই এলাকাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণার জন্য দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু দিল্লি সরকার তা করছে না বলে অভিযোগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক প্রবীণ অফিসার বলেছেন, “ওই এলাকার রোহিঙ্গারা এখান ওখান প্রায়শই চলে যায়। কিন্তু ওই এলাকাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণা করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সুবিধা হবে তাঁদের উপর নজর রাখা। ক্যাম্পের মধ্যে তাঁদের ঘোরাফেরায় কোনও বাধা থাকবে না। কিন্তু দিল্লি পুলিশে সহজে যাচাইয়ের কাজ করতে পারবে।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, আইন অনুসারে অবৈধ বিদেশিদের ডিটেনশন ক্য়াম্পে রাখার কথা। কিন্তু দিল্লি সরকার তা করতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ কেন্দ্রের। এ নিয়ে ওই অফিসার বলেছেন, “অনেক দিন ধরে আমরা দিল্লি সরকারকে বলেছি ওই ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণার জন্য। তা দ্রুত করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
দিল্লিতে রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার ব্যাপারে হরদীপ সিং পুরীর টুইট ঘিরে বিতর্ক ছড়ায়। তার পরই সেই টুইটের বক্তব্য নস্যাৎ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তিনটি টুইটে নিজেদের অবস্থার জানিয়ে দেয় কেন্দ্র। তার মধ্যে একটি টুইটে লেখা হয়েছে, “প্রত্যাবর্তন আইন অনুযায়ী অবৈধ বিদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের থাকার বর্তমান জায়গাকে ডিটেনশন ক্যাম্প ঘোষণা করেনি দিল্লি সরকার। সেই কাজ এখনই করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।”