Delhi High Court: পুরুষদের জন্য স্ত্রীকে বিধবা দেখার থেকে বেদনাদায়ক কিছু নেই: দিল্লি হাইকোর্ট
Delhi High Court: ২০১১-র এপ্রিলে গুরুতর আহত হয়েছিলেন স্বামী। সেই সময় তাঁর যত্ন নেওয়ার পরিবর্তে, স্ত্রী নিজের কপাল থেকে সিঁদুর মুছে, চুড়ি ভেঙে এবং সাদা থান পরে নিজেকে বিধবা বলে ঘোষণা করেছিলেন। আদালত বলল, স্বামীর জন্য এর থেকে বেদনাদায়ক আর কিছু হতে পারে না।
নয়া দিল্লি: জীবিত থাকা অবস্থায় কোনও স্বামীর পক্ষে, তাঁর স্ত্রীকে বিধবার মতো আচরণ করতে দেখার মতো বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আর হতে পারে না। এই ধরনের আচরণ ‘চরম নিষ্ঠুরতার’ সমান। কোনও স্ত্রী যদি তঁর স্বামীকে দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে সেই বিয়ে টিকতে পারে না। স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন স্ত্রী। সেই আবেদন খারিজ করার সময়, এই পর্যবেক্ষণ করল দিল্লি হাইকোর্ট।
বিচারপতি সুরেশ কুমার কাইত এবং নীনা বনসল কৃষ্ণের বেঞ্চ বলেছে, “কোনও স্বামীর পক্ষে, তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর স্ত্রীকে বিধবার মতো আচরণ করতে দেখার থেকে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আর কিছুই হতে পারে না। তাও এমন এক পরিস্থিতিতে, যেখানে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে তিনি একটু যত্ন এবং সহানুভূতি ছাড়া আর কিছুই আশা করেননি। নিঃসন্দেহে, আবেদনকারী স্ত্রীর এই ধরনের আচরণকে শুধুমাত্র স্বামীর প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা বলা যেতে পারে। আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, উভয় পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার আর কোনও সুযোগ নেই। মিথ্যা অভিযোগ, পুলিশে রিপোর্ট করা এবং ফৌজদারি বিচার-এর মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এই দম্পতির মধ্যে দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছেছে। তঁদের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা, বোঝাপড়া, প্রেম, স্নেহ কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। এই মৃত সম্পর্ক ক্ষোভ, মতপার্থক্য এবং দীর্ঘস্থায়ী মামলা-মোকদ্দমায় আক্রান্ত। এই সম্পর্ক চালিয়ে গেলে শুধুমাত্র দুই পক্ষের মধ্যে নিষ্ঠুরতা আরও বাড়বে।”
২০০৯ সালে এই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল। ২০১১-র অক্টোবরে তাঁদের এক কন্যা সন্তান হয়। সন্তান প্রসবের কয়েক দিন আগেই তাঁর বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী। তারপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বশুরবাড়িতে ফেরেননি বলে অভিযোগ স্বামীর। তাঁর আরও অভিযোগ, বিবাহিত জীবনের শুরু থেকেই তাঁর স্ত্রী তাঁর প্রতি উদাসীন ছিলেন। বৈবাহিক সম্পর্কের বাধ্যবাধকতা পালনে তাঁর কোনও আগ্রহ ছিল না। তিনি গৃহস্থালির কাজ করতে চাইতেন না। ফলে, তাঁর শ্বশুরকে রান্বান্নানার মতো গৃহস্থালীর কাজগুলি করতে হত। ছোটখাটো বিষয় নিয়েও ঝগড়া করতেন তিনি। মোবাইল ফোন রিচার্জ করে না দেওয়ায় একবার তিনি স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং মঙ্গল কামনায় ‘করওয়াচৌথ’-এর উপবাসও পালন করেননি। সবথেকে বড় কথা, ২০১১-র এপ্রিলে গুরুতর আহত হয়েছিলেন স্বামী। সেই সময় তাঁর যত্ন নেওয়ার পরিবর্তে, স্ত্রী নিজের কপাল থেকে সিঁদুর মুছে, চুড়ি ভেঙে এবং সাদা থান পরে নিজেকে বিধবা বলে ঘোষণা করেছিলেন।
পারিবারিক আদালতে এই সকল অভিযোগ জানিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন স্বামী। সেই মামলাকে দিল্লি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন মহিলা। সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, তাঁর স্বামীই তাঁকে প্রসবের আগে তাঁর বাপের বাড়িতে যেতে উত্সাহ দিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি তিন দিন পরই ফিরে এসেছিলেন। তবে, হাইকোর্ট তাঁর কোনও যুক্তি মানতে চায়নি।
আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘করওয়াচৌথ’ উপবাস করা-না করা, কারও ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। ত নিয়ে বলার কিছু নেই। ভিন্নধর্মীদের মধ্যেও বিয়ে হয়, কাজেই ধর্মীয় দায়িত্ব পালন না করাকে নিষ্ঠুরতা বলা যায় না। কিন্তু, হিন্দু সংস্কৃতির প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠানগুলি স্বামীর প্রতি ভালবাসা এবং শ্রদ্ধারও প্রতীক। কোনও বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তি হল সহবাস এবং দাম্পত্য সম্পর্ক। এই ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্কের প্রতি স্ত্রীর যে কোনও সম্মান ছিল না, তা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিয়ের সম্পর্কে থাকার কোনও আগ্রহ স্ত্রীর ছিল না। শেষ পর্যন্ত রায় স্বামীর পক্ষেই দিয়েছে আদালত।