মুম্বই: খবরকে খুব উন্নত মানের কনটেন্টে পরিণত করার পথটা খুব সহজ সরল না, তবে এই রূপান্তরের মাধ্যমেই ইন্ডাস্ট্রির সামনে যে চ্যালেঞ্জ সেটা জয় করা সম্ভব। ২৫ এপ্রিল মুম্বইয়ে ‘সংবাদ সাম্রাজ্যে কনটেন্ট কি আলোকস্তম্ভ হয়ে উঠতে পারবে?’ শীর্ষক আলোচনায় এমন মতই পোষণ করেন টিভি৯ গ্রাপের এমডি তথা সিইও বরুণ দাস। খবরের দুনিয়ায় নিউজ ৯ প্লাসের মতো এক অভিনব সৃজনশীল উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে কীভাবে ভারতের সুবৃহৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে উপভোক্তা হিসাবে পাওয়া যেতে পারে এদিন সে কথাই ইন্ডিয়ান টেলিভিশন ডট কম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা-সিইও তথা প্রধান সম্পাদক অনিল ওয়ানভারিকে ব্যাখা করে বলেন বরুণ দাস। এদিনের আলোচনা ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিশ্লেষণী ও মনোজ্ঞ যা থেকে সংবাদ ও কনটেন্ট শিল্পের ভবিষ্যতের দিশা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: বছর তিনেক হতে চলল আপনি টিভি ৯-এর দায়িত্ব নিয়েছেন। আর প্রায় তখন থেকেই সংবাদ বাণিজ্যের অবস্থাও কিঞ্চিত অস্থির। এই পরিস্থিতিতে টিভি ৯ কেমন কাজ করছে? আপনি ঠিক কী কী করলেন?
উত্তর: আমি মনে করি, আমরা খুব ভাল এগোচ্ছি। গত কয়েক বছরে আমরা দারুণ কাজ করেছি। কোভিড অতিমারিতেও আমাদের রাজস্ব প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। আমি যখন দায়িত্ব পেলাম ততদিনে আমাদের সংস্থা ১৫ বছরের পুরনো। যদিও এর মালিকানার হাত বদল হয়েছে। আমি এসে প্রথমেই একটা ম্যানেজমেন্ট টিম গড়েছি। তারপর তিন বছরে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি সত্যিই প্রশংসনীয়। কোভিডকালে যখন অধিকাংশ সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করছিল ঠিক তখনই মানে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে আমরা প্রায় ১০০০ জনকে চাকরি দিয়েছি। দক্ষিণ ভারতে আমাদের দুটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড (টিভি৯ তেলুগু ও টিভি৯ কন্নড়) রয়েছে। এটা পূর্ববর্তী মালিক এবং ম্যানেজমেন্টের সাফল্য। সে জন্য তাঁদের সাধুবাদ। তাঁরা ইতিমধ্যে এই কাজটি এগিয়ে রাখায় আমাদের কাজটা কিছুটা কমে গিয়েছিল। ফলে আমরা মনঃসংযোগ করি উত্তর ভারতে নিজেদের প্রসার ঘটাতে। আমাদের সংস্থার বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত প্রগতিশীল। তাঁরা বোঝেন, একটি সংস্থা সব থেকে ভাল চলে কেবল পেশাদারদের হাতেই। এটাই মূল কথা। আমরা এমন একটা সংবাদ প্রতিষ্ঠান যেখানে বিনিয়োগকারীদের হস্তক্ষেপ শূন্য। কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই এখানে ১৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। আমরা আলোচনার টেবিলে বসি, সিদ্ধান্ত নিই, আর তা বাস্তবায়িত করি এবং সব থেকে বড় কথা সংস্থার বিনিয়োগকারীরা আমাদের পাশে দাঁড়ান। সংবাদ এমনই একটা বিষয় যে আমরা নিজেদের জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী হিসাবেই দেখি। আর তাই কোভিডের সময়েও আমরা পূর্ণ উদ্যমে কাজ করেছি এবং আমাদের সর্বভারতীয় ব্র্যান্ডটিকে নতুন করে লঞ্চ করেছি। এই সব ক’টি পদক্ষেপই আমাদের পক্ষে গিয়েছে। বাকিটা কৌশল, পরিকল্পনা এবং রূপায়ন। আমি মনে করি আমাদের ম্যানেজমেন্ট টিম এই মুহূর্তে ইন্ড্রাস্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
প্রশ্ন: কোভিডের সময় যখন সবাই মাইনে কাটছিল, আপনারা তখন বেতন বাড়িয়ে ছিলেন। এতে আপনাদের ভাঁড়ারে টান পড়েনি? কারণ, বিজ্ঞাপনদাতারাও সে সময় খরচে লাগাম দিয়েছিলেন।
উত্তর: ওই যে বললাম, কোভিডের সময়তেও এমনকী ২০২১-২২ সালে আমাদের রাজস্ব বেড়েছিল তার আগের বছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশ। আমি নিজেও রোজ দিন অফিসে এসেছি। যেখানে আমার গোটা টিম ময়দানে নেমে কাজ করছিল, সেখানে আমি নিজেকে চার দেওয়ালের সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে রেখে দিতে পারিনি। কোনও ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ব্যাপার ছিল না। প্রত্যেকে তাঁদের ১০০ শতাংশ দিয়ে কাজ করেছিল। হ্যাঁ, তবে আমরা কোভিড সতর্কতা বিধি মেনে চলেছি। এর ফলেই আমাদের মনে হয়েছে, বেতন বাড়ানোর অর্থনৈতিক ঝুঁকিটা নিতে হবে। কারণ, তাহলেই একমাত্র কর্মীরা বুঝতে পারবেন যে সংস্থা তাঁদের কথা ভাবে এবং তাঁদের ভাল কাজকে স্বীকৃতি দেয়।
প্রশ্ন: আপনার মতে, কনটেন্টের দুনিয়ায় খবরের অবস্থান ঠিক কোথায়?
উত্তর: এক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। কারণ, খবর তৈরি করা যায় না। যা ঘটে তা কেবল প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা যায়। কিন্তু এর মধ্যে থেকে কি কনটেন্টকে বের করে আনা যায় না? অবশ্যই যায়। আর সেটা সম্ভব খবরটাকে কীভাবে ব্যবহার এবং উপস্থাপনা করা হচ্ছে, তার উপর। এই ব্যাপারটা আবার মাধ্যম থেকে মাধ্যমে বদলে বদলে যায়। ডিসট্রিবিউশান প্ল্যাটফর্মগুলি যেভাবে বদলাচ্ছে তাতে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খবরের কাগজ দিয়ে শুরু করেছিলাম। তারপর এল টেলিভিশন। চব্বিশ ঘণ্টার খবরের চ্যানেল এসে খবর দেখানোর ধ্যান ধারণাই বদলে দিল। এরপর এল ডিজিটাল মাধ্যম। প্রথমে অনেকেই ভেবেছিল ডিজিটাল হয়তো টিভি বা কাগজের একটা সম্প্রসারিত রূপ। কিন্তু, না। অচিরেই ভুল ভাঙল। বোঝা গেল, এ এক সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। এখন আমার মনে হয়, ওটিটি-ই ভবিষ্যৎ। বিনোদন দুনিয়ায় যা এখন দেখা যাচ্ছে। ওটিটি আসলে আপনাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়। এখানে আমি নিজের ইচ্ছা মতো কনটেন্ট নিজের সময় মতো দেখতে পারি। সুতরাং, এটাই নতুন রূপান্তর। খবরকে এটার মধ্যে দিয়ে যেতেই হবে।
নিউজ ৯ প্লাস আমার কাছে খুবই গর্বের বিষয়। খুব শীঘ্রই কয়েক জন খ্যাতনামা মানুষ বলেছেন, তাঁদের চোখে খবরের দুনিয়ায় এমন সৃজনমূলক ভাবনা এই প্রথম। এটা আসলে খবরের ওটিটি অবতার। খবরকে এখানে আমরা কনটেন্টে রূপান্তরিত করেছি। সবকিছুই এক্সক্লুসিভ, কিন্তু কোনওটাই ব্রেকিং নিউজ নয়।
টিভি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা সকলেই খুব বেশি করে বিজ্ঞাপনী রোজগারের উপর নির্ভরশীল। যদি আন্তর্জাতিক দুনিয়ার দিকে তাকানো যায়, সেক্ষেত্রেও দেখা যাবে ৭০-৮০% রাজস্ব আসছে ডিস্ট্রিবিউশন থেকেই। অথচ, ভারতের সব থেকে বড় সম্ভাবনার দিক তার বৃহৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণি, কিন্তু সেই শ্রেণিটাকে ব্যবহার করতেই আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা তাঁদের সঙ্গে সরাসরি আদান-প্রদান করিনি। আমরা তাঁদের থেকে সাবসক্রিপশন ফি চাইছি না। তাই এই সুযোগটাও হাতছাড়া হচ্ছে। নিউজ ৯ প্লাস আগামী দিনে অর্থের বিনিময়ে দেখতে হবে। তবে যতদিন না পর্যন্ত আমাদের কনটেন্ট মানুষের মূল্য দিয়ে দেখার মতো মূল্যবান মনে হবে, ততদিন অবধি আমরা তা পেড অ্যাপ করব না।
প্রশ্ন: যতই আপনি বিশ্লেষণ করুন আর রিপ্যাকেজ করুন, মানুষ যে অর্থ খরচ করে খবর দেখবে এ বিষয়ে এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?
উত্তর: ভারতে ইংরেজিতে কথা বলা জনতার মধ্যে ভাল মানের কনটেন্টের জন্য খরচ করার একটা প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে, এমনটাই বলছে আমাদের সমীক্ষা। অনেক ওয়েবসাইটই এখন পেইড। তাই এ বিষয়ে এগনোর জন্য এটাই সেরা সময়। অমি যথেষ্ট সময় খরচ করেছি বিষয়টা বোঝার জন্য। আমাকে এর আগেও বহুবার প্রশ্ন করা হয়েছে: মানুষ কি খবরের জন্য টাকা খরচ করবে? আমার এ ক্ষেত্রে উত্তর খুব সহজ, পছন্দটা আপনার। আপনি কি পঞ্চম, দশম বা পনেরতম হতে চান না প্রথম হতে চান? যদি প্রথম হতে চান, তাহলে পথিকৃত হিসাবে আপনাকে বিনিয়োগ তো করতেই হবে।
প্রশ্ন: এই অ্যাপের কনটেন্ট নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমার বিশ্বাস, প্রয়োজনীয় খবরের জন্য মানুষ অর্থ ব্যয় করবে। কনটেন্টকে সেই প্রায়োজনিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। ফিল গুড খবর বা বিনোদন দিয়ে হবে না। খবরকে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে হবে, তবেই সেটা সম্ভব। এমন কিছু পেশা আছে যা নিতান্তই সংখ্যা কেন্দ্রিক। যেমন, ফিনান্স, রিসার্চ বা তথ্যপ্রযুক্তি। তাই এ নিয়ে কথা বলতে গেলে, আলোচনায় অংশ নিতে হবে অত্যন্ত ভালভাবে প্রস্তুত হয়ে। আমরা ঠিক এই জিনিসটাই আপনাদের জন্য তৈরি করব। আগামী দিনে একটা বড় অংশের কনটেন্টই তৈরি হবে বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে মাথায় রেখে যা মানুষ অর্থ ব্যয় করে দেখবে।
প্রশ্ন: আমার কাছে যখন বিকল্প আছে, তাহলে আমি কেন খরচ করে সাবসক্রাইব করব?
উত্তর: বইয়ের দোকান তো রয়েছে, তাহলে মানুষ কেন গ্রন্থাগারে যায়? কারণ, পাঠকের পছন্দের কথা মাথায় রেখে কোনও এক জন বা একাধিক ব্যক্তি বইগুলি সাজিয়ে রেখেছে, তাই। ফলে সহজেই যে বইটা চাইছিলাম সেটা তাক থেকে তুলে নেওয়া যায়। আসলে আমাদের জীবনে এখন সব থেকে বড় অভাব হল সময়ের। তাই সাবসক্রাইবারের পছন্দ, রুচি মাথায় রেখে কনটেন্ট তৈরি হবে এবং সাজিয়ে রাখা হবে যা তিনি নিজের ইচ্ছা ও সময় মতো দেখবেন। এ ক্ষেত্রে উপভোক্তাকে ভাল করে চেনা এবং জানাটা খুবই জরুরি।
প্রশ্ন: তার মানে নিউজ ৯ প্লাস খবরের নেটফ্লিক্স হতে চলেছে?
উত্তর: ২০২২ সালে আমরা যখন প্রথম এই ভাবনাটা সামনে এনেছিলাম, সিএনএন প্লাসও তাদের অ্যাপ লঞ্চ করেছিল। কিন্তু এপ্রিলের মধ্যেই ওরা তুলে দিল। তাই এই মুহূর্তে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ঠিক করেছি প্রথম হব, পঞ্চম বা পনেরতম না।
প্রশ্ন: আপনি কি এটাকে বিশ্বের জন্য ভারতের ওটিটি হিসাবে গড়ে তুলতে চাইছেন নাকি ভারতীয়দের জন্য ভারতের ওটিটি?
উত্তর: নিউজ ৯ প্লাসকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি আমরা। তেমন হলে নিউজ ৯ হবে ইংরেজি ভাষার এক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। ভারতের অনুকুলে এখন অনেকগুলি বিষয় ঘটছে, বিশ্ব মানচিত্রে ভারতের অবস্থানও খুবই সুদৃঢ়। কিন্তু কেবল একটা বিষয়েরই অভাব, আর তা হল আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটা বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর নেই।
প্রশ্ন: তার মানে কি এখানে আন্তর্জাতিক স্তরের সাংবাদিকদের জন্য অনেক কর্মসংস্থান হবে?
উত্তর: ইংল্যান্ডে একটা অফিস তৈরি করে আমরা ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা উদযাপন করছি। সেই কর্ণার অফিসে বসবেন বাদামি চামড়ার মানুষেরা, আর তার বাইরে দিয়ে ঘুর ঘুর করবে শ্বেতাঙ্গরা। এটা বিপরীত উপনিবেশিকতা, এটাই আমরা করতে চাই।
প্রশ্ন: ‘ডুয়োলগ উইথ বরুণ দাস’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আপনাকে পর্দায় দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের খ্যতনামাদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতাটা কেমন? আপনি সুভাষচন্দ্র, এন আর নারায়ণমূর্তি, সুধা মূর্তি, বিজয় দেবারেকোন্ডার মতো মানুষদের সঙ্গে কথা বললেন- এটা কি কনটেন্ট নাকি নিউজ?
উত্তর: এটা ঠিক সাক্ষাৎকার নয়, ডুয়োলগ। পার্থক্যটা হচ্ছে, আমি এখানো কোনও প্রশ্ন করি না। আমি কেবল আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা ব্যক্ত করে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করি। এভাবেই কথোপকথন এগিয়ে চলে এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে। ডুয়োলগটা দারুণ হচ্ছে। সত্যি বলতে, আমি এতটা প্রত্যাশা করিনি। আমি সাংবাদিক নই এবং শিরোনাম শিকার করাও আমার লক্ষ্য নয়। তাই আমি কেবল অর্থবহ কথোপকথন চালিয়ে যাই। বহু ক্ষেত্রেই অনেক অতিথি এমন অনেক কথা এই অনুষ্ঠানে বলেছেন যা তাঁরা আগে কোথাও বলেননি। তবে সাম্প্রতিক একটি ডুয়োলগ (এন আর নারায়ণমূর্তি, সুধা মূর্তি যেখানে অতিথি) সকলের দেখা উচিত। দ্বিতীয় এপিসোডে আমি একটা প্রশ্ন করি। আমি বলি, ভারত তার ৫০ শতাংশ ক্ষমতা আসলে কোনও দিন ব্যবহারই করল না। আর সেটা হল ভারতীয় নারী সমাজ। আপনি ৪০ বছর আগে কেন কর্ণার অফিসে বসলেন না? তাহলে হয়তো এতো দিনে অক্সফোর্ড-কোমব্রিজে ‘চেয়ারওম্যান’ শব্দটা পরিচিতি পেয়ে যেত।
প্রশ্ন: আপনারা একটি বিনোদন স্টুডিও তৈরি করছেন, পরিকল্পনাটা ঠিক কী?
উত্তর: আমার মনে হয়, বাস্তব আসলে গল্পের থেকে অনেক বেশী বিস্ময়কর। জ্ঞান, গবেষণা, ঘটনা এবং প্রতিবেদনকে কনটেন্টে পরিণত করা আমাদের জন্য খুব কঠিন কাজ না। তবে উন্নতমানের প্রোডাকশনটা জরুরি। তাই আমরা স্টুডিও ৯ তৈরি করলাম। এখানে আমরা কনটেন্ট প্রোডিউস করব। সব ঠিকঠাক এগোলে এ বছরেই এখান থেকে তৈরি কমপক্ষে ২টি কনটেন্ট আমরা ওটিটি-তে নিয়ে আসব। আমরা এটাকে খুব বড় আকারে প্রকাশ করতে চাই। আমার মতে, কনটেন্ট বিজনেসের ক্ষমতা অপরিসীম। যে কনটেন্টই তৈরি করা হোক তা যদি অডিয়েন্সের কথা সঠিকভাবে মাথায় রেখে তৈরি হয় তবে তা সফল হবেই। আমরা শীঘ্রই একটা পার্টনারশিপ ঘোষণা করতে পারি। তবে আমি এখনই কথা দিচ্ছি, এতে সৃজনশীল ভাবনার বৌদ্ধিক দিকের সঙ্গে কোনও আপোস করা হবে না। LGBTQ সম্প্রদায়কে নিয়ে ‘দিস ইজ মি’ নামে একটা অনুষ্ঠান আমরা আনতে চলেছি। প্রাইড মান্থ (জুন)-এর মধ্যেই সেটা তৈরি হয়ে যাবে। এখানে আমরা অনেক বিখ্যাত মানুষকে পেয়েছি। তাঁরা কীভাবে নিজেরা নিজেদের চিনলেন, কেমন করে নিজেদের প্রকাশ করেন, সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন কীভাবে, পেশাদার দুনিয়াতেই বা কেমন অভিজ্ঞতা–এইসব আঙ্গিকে গল্পটা বোনা হবে। চিকিৎসক, মনোবিদ, আইনজ্ঞ, সমাজ বিজ্ঞানী-সকলেই থাকবেন এখানে। আমার অনুমান, এটা ভারতের অন্যতম ‘মোস্ট ভিউড’ কনটেন্ট হতে চলেছে।
প্রশ্ন: সমলিঙ্গে বিবাহ নিয়ে আপনার মত কী?
উত্তর: আমার মতে, নিজের ইচ্ছা মতো জীবন ধারণের অধিকার থাকা উচিত যতক্ষণ না তা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। শেষ পর্যন্ত, আমার জীবনটা তো শুধু আমারই।
প্রশ্ন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আঞ্চলিকতার দিকটি কি ভেবে দেখেছেন নাকি শুধু হিন্দিতেই মন দেবেন?
একেকটা মার্কেট একেক রকমভাবে চলে। কয়েক বছর আগে মারাঠি মার্কেটে বিনোদনমূলক কনটেন্টের একটা জোয়ার এসেছিল যেটা এখন আবার মালায়লাম মার্কেটে হচ্ছে। আমার মনে হয়, ওটিটি-র মাধ্যমে আমরা আসলে ব্লক বাস্টার সংস্কৃতি থেকে ক্রমশ বিষবস্তুর দিকে ঝুঁকছি। আমার কাছে ওটিটি আর বড় পর্দার সম্পর্কটা অনেকটা রেস্তোরাঁ আর বাড়ির রান্নাঘরের মতো। দুটোই থাকবে। ওটিটি আসলে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের গল্পের মাধ্যমে কনটেন্ট লেখার সুযোগ দিয়েছে। বাজেট এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অরিজিনাল কনটেন্ট তৈরি সত্যিই কঠিন। তাই আমার মনে হয়, আঞ্চলিক ভাষায় সম্প্রসারণ হতে একটু সময় লাগবে। আপাতত আমার মনে হয় আমরা বিষয়টা শিখছি।