Centre’s Decision on Farm Laws: কৃষি আইন কেন প্রত্যাহার করল সরকার? বললেন নমো
Key Points of PM Modi's Speech: ২৬ নভেম্বর এক বছর পূর্ণ হত কৃষক আন্দোলনের। তার আগেই কৃষকদের দাবি মেনে আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঠিক কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী, দেখে নেওয়া যাক একনজরে-
১. কৃষকদের দুর্দশার কথা: বক্তব্যের শুরুতে গুরু নানক জয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানানোর পরই কৃষকদের নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানান, কৃষকদের পরিশ্রম, দুর্দশা, নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কৃষকদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
২. কৃষক কল্যাণে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার: প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই হয়তো এই কথাটি অজানা যে, আমাদের দেশের ১০০ জন কৃষকের মধ্যে ৮০ জনই ছোট কৃষক। তাদের কাছে দুই হেক্টরেরও কম জমি রয়েছে। এই ছোট কৃষকদের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। আমরা কৃষকদের উন্নয়ন ও মঙ্গল কামনাতেই সয়েল হেলথ কার্ড, ইউরিয়া, উন্নত মানের বীজ প্রদান করে কৃষিকাজে যথাসাধ্য় সাহায্য করেছি। ফসল বীমা যোজনার অধীনে আরও কৃষকদের আনা হয়েছে। এরফলে বিগত চার বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে কৃষকরা।”
৩. কৃষকদের বিভিন্ন সুবিধা: কৃষিকাজে সাহায্যের পাশাপাশি কৃষকদের সামগ্রিক জীবনযাত্রা উন্নয়নে কেন্দ্রের তরফে কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানান, কৃষকদের জন্য আলাদাভাবে বিমা ও পেনশনের সুবিধা আনা হয়েছে। কৃষক সম্মাননিধি যোজনার অধীনে সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হচ্ছে। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপিও বাড়ানো হয়েছে। ই-নাম যোজনার অধীনে দেশের মাণ্ডিগুলিকে এনে কৃষকদের ফসল বিক্রিতে এক বিশাল সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এরফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল দেশের যেকোনও প্রান্তে বিক্রি করতে পারেন সরাসরি। বর্তমানে কেন্দ্র সরকারের কৃষি বাজেটও আগের সরকারের তুলনায় পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে।
৪. কৃষি আইন আনার কারণ: দেশের অন্নদাতা যারা, তারাই আর্থিক কষ্টে ভোগেন। এই দুর্দশা দূর করতেই বাকি প্রকল্পগুলির মতোই কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করতে এবং সরাসরি ক্রেতার কাছে ফসল বিক্রির সুবিধা দিতেই এই কৃষি আইন আনা হয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের কৃষক, বিশেষত ছোট কৃষকরা যাতে নায্য দামে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই আইন আনা হয়েছিল।
৫. কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা আগেও হয়েছিল: কৃষিক্ষেত্রে সংশোধনের দাবি বহু বছর ধরেই উঠে আসছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী। এর আগেও বহু সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করেছিল। এ বারও সংসদে আলোচনার মাধ্য়মেই এই আইনগুলি আনা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা ও সংগঠনগুলি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তাদের সকলকে ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।
৬. কৃষকদের বোঝাতে না পারা আমাদের অক্ষমতা: তিন কৃষি আইন আনার সিদ্ধান্ত দেশের অধিকাংশ কৃষকই স্বাগত জানালেও এক অংশের কৃষকরা এর বিরোধিতা করেছে। এই এক অংশের বিরোধিতাকেও সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখেছিল। সেই কারণেই আন্দোলনকারীদের নতুন কৃষি আইন সম্পর্কে বোঝাতে একাধিক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, এমনটাই জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দেশের কৃষিবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, কৃষি বিশেষজ্ঞরা আন্দোলনকারী কৃষকদের নতুন তিন কৃষি আইনের সুবিধা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমরা দুই বছরের জন্য আইন স্থগিত রাখার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। আইনের যে অংশ গুলি নিয়ে তাদের সমস্যা ছিল, তা সংশোধনের প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। এরইমধ্যে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছয়।”
৭. ক্ষমা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী: দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন বা বারংবার আলোচনাতেও সমাধানসূত্র না মেলার জন্য কৃষকদের দোষারোপ করেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং তাদের কৃষি আইনের সুফল বোঝাতে না পারায় নিজেই ক্ষমা চেয়ে নেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “হয়তো আমাদের প্রচেষ্টাতেই কোনও খামতি রয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই আমরা কৃষকদের বোঝাতে পারিনি। আমি গোটা দেশকে জানাচ্ছি যে আমরা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চলতি মাসের শেষেই যে সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে, তাতে কৃষি আইন প্রত্যাহার করার যাবতীয় কাজ শেষ হবে।”
৮. কৃষকদের ঘরে ফেরার অনুরোধ: গুরুনানকের জন্মজয়ন্তীতে কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করার পরই আন্দোলনকারী কৃষকদের এবার ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি আন্দোলনরত কৃষক ভাইদের অনুরোধ করছি, এ বার আপনারা ঘরে ফিরে যান, আপনাদের চাষের জমিতে ফিরে যান। আসুন আমরা সবাই মিলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করি।”
৯. কৃষি বিষয়ক কমিটি গঠন: আইন প্রত্যাহার করে নিলেও কৃষকদের মঙ্গল কামনায় আগামিদিনেও কাজ চালিয়ে যাবেন, একথাই জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, জিরো বাজেট কৃষিকাজের সূচনা করা হবে। কৃষি বিষয়ক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের ঘোষণাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, এই কমিটিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এছাড়াও কৃষক এবং কৃষি বিশেষজ্ঞরাও এই কমিটির সদস্য হবেন।
১০. আগামিদিনেও জারি থাকবে উন্নয়নকার্য: কৃষি আইনের সুফল বোঝাতে ব্যর্থ হলেও দেশের অন্নদাতাদের দিক থেকে নজর ফেরাবেন না বলেই জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানান, আগামিদিনেও একসঙ্গে মিলিত হয়ে কৃষকদের উন্নয়নের লক্ষ্য়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।