নয়া দিল্লি: মানহানির মামলায় মুক্তি পেলেন প্রিয়া রমানি। ২০১৭ সালে প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী এম জে আকবরের নামে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন প্রিয়া রমানি। তার প্রেক্ষিতেই আকবর মানহানির মামলা করেছিলেন। বুধবার সেই মামলা থেকেই প্রিয়াকে নিস্তার দিল দিল্লি আদালত। আদালতের রায়ে প্রিয়া রমানিকেই সমর্থন করে বলা হয়, “কয়েক দশক বাদেও একজন মহিলা যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনতে পারেন।” অন্যদিকে, মামলা থেকে সসম্মানে মুক্তি পাওয়ায় প্রিয়া রমানি বললেন, “যৌন হেনস্থাকে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা দেওয়া হয়েছে।”
রমানি বনাম আকবরের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ২০১৭ সালে। গোটা দেশ যখন মিটু ঝড়ে কাঁপছিল, সেইসময় একটি পত্রিকায় সাংবাদিক প্রিয়া রমানি লেখেন যে, ১৯৯৪ সালে চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় তৎকালীন এডিটর এমজে আকবর তাঁকে হোটেলের ঘরে ডেকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে পরের বছর তিনি একটি টুইটও করেন। রমানির দেখাদেখি একাধিক মহিলাও আকবরের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনেন।
চাপে পড়ে মন্ত্রীত্বের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এমজে আকবর। এরপরই ২০১৮ সালে সাংবাদিক প্রিয়া রমানির বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ আনেন আকবর। অভিযোগে তিনি বলেছিলেন, “যদি সত্যিই রমানিকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছিল, তবে এতবছর পর তিনি কেন অভিযোগ আনলেন?”। আজ রমানির অভিযোগকেই মান্যতা দিয়ে দিল্লি আদালতের তরফে জানানো হয়, বহু বছর পরও একজন মহিলার অভিযোগ জানানোর অধিকার রয়েছে।
আরও পড়ুন: মহার্ঘ তরল সোনা! ‘এটাই বিকল্প শক্তির জন্য সঠিক সময়’, দাবি গড়করির
প্রিয়া রমানির টুইটেই দীর্ঘ অর্জিত সম্মান ভূলুন্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছিলেন এমজে আকবর। এরপ্রেক্ষিতেই রমানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন আকবর। আজ আদালতের শুনানিতে বলা হয়, “সম্মানজনক কোনও ব্যক্তিও হেনস্থাকারী হতে পারেন।”
প্রিয়া রমানির বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে আদালতের তরফে বলা হয়, “যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনার প্রেক্ষিতে অভিযোগকারিণীকে শাস্তি দেওয়া যায় না। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী মহিলাদের যেকোনও সময়ে, যেকোনও মঞ্চে অভিযোগ জানাতে পারেন।” বিচারপতি আরও যোগ করে বলেন, “অধিকাংশ যৌন হেনস্থাই বন্ধ দরজার পিছনে হয়, একথা অস্বীকার করা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাঁরা হেনস্থা বা নির্যাতনের শিকার হন, তাঁরা সামাজিক দ্বন্দ্ব ও চরিত্রের উপর আক্রমণের ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন না।”
এমজে আকবর অভিযোগ করেছিলেন, প্রিয়া রমানি তাঁর বিরুদ্ধে মিটু-র অভিযোগ আনার পরই তাঁর দীর্ঘদিনের অর্জিত সম্মান ধুলোয় মিশে গিয়েছে। আকবরের এই দাবির ভিত্তিতে দিল্লি আদালতের তরফে বলা হয়, “যৌন হেনস্থা একজন মহিলার আত্ববিশ্বাস ও মর্যাদাকে কেড়ে নেয়। সম্মানের অধিকার রক্ষায় কারোর মর্যাদার অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। আমাদের সমাজের বোঝা উচিত যে যৌন হেনস্থা ও নির্যাতনের কী প্রভাব পড়তে পারে। যৌন হেনস্থায় যে মানসিক প্রভাব পড়ে, তারফলে অনেকসময়ই মহিলারা বছরের পর বছর মুখ খোলেন না। এই বিষয়টি সমাজকে বুঝতে হবে। যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণে কোনও মহিলাকে শাস্তি দেওয়া যায় না।”
আরও পড়ুন: টুলকিটকাণ্ড: তিন সপ্তাহের জন্য গ্রেফতার করা যাবে না নিকিতাকে, নির্দেশ বম্বে হাইকোর্টের
রায় ঘোষণার পরই নিজের খুশি প্রকাশ করেন প্রিয়া রমানি। তিনি বলেন, “যৌন হেনস্থা নিয়ে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, তা পেয়েছে। আমি নির্যাতিতা হলেও আদালতে আমাকেই অভিযুক্ত হিসাবে দাঁড়াতে হয়েছিল। যাঁরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, বিশেষত সাক্ষীরা, তাঁদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আদালত, আমার আইনজীবী রেবেকা জন ও তাঁর দলকেও ধন্যবাদ জানাই আমার উপর বিশ্বাস করার জন্য। তাঁরা মামলাটি লড়ার জন্য জান-প্রাণ লড়িয়ে দিয়েছিলেন।”
রায়ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও। তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি নারীদের যথাযথ সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আইনের রক্ষাকর্তারা তাঁদের বয়ানের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে পারেন।”