নয়া দিল্লি: অপরিবর্তিতই থাকল এবারের রেপো রেট (Repo Rate) ও রিভার্স রেপো রেট (Reverse Repo Rate)। ২০২১-২২ সালের আর্থিক বাজেট পেশের পর শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India)-র প্রথম মিটিংয়ের পর এমনটাই জানালেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ (Shaktikanta Das)। তিনি জানান, রেপো রেট ৪ শতাংশ ও রিভার্স রেপো রেট ৩.৩৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখা হল।
করোনা সংক্রমণের পরই গতবছরের মার্চ মাসে রেপো রেট ১১৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দেওয়া হয়। মে মাসের ২২ তারিখ শেষবার পলিসি রেট পরিবর্তন করা হয়। তারপর থেকেই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল রেপো রেট। ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশের পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে প্রথম বৈঠকে বসা হয়। ছয় সদস্যের মনিটারি পলিসি কমিটি (Monitary Policy Committee)-র বৈঠকে স্থির করা হয়, এইবছরও অপরিবর্তিতই রাখা হবে রেপো ও রিভার্স রেপো রেট।
উল্লেখ্য, যেই হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অন্যান্য ব্যাঙ্ককে ঋণ দেয়, তাকে রেপো রেট বলা হয় এবং যেই হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অন্যান্য ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেয়, তাকে রিভার্স রেপো রেট বলে।
আরও পড়ুন: চাক্কা জ্যামে বাদ দিল্লি, ব্যারিকেড নিয়ে মোদীকে টিপ্পনী রাকেশ তিকাইতের
এর কারণ হিসাবে গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ বলেন, “করোনার প্রভাব কাটিয়ে তুলে বর্তমানে দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। সেই কারণেই মনিটারি পলিসি কমিটি রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষ ও আগামী অর্থবর্ষেও প্রয়োজন অনুযায়ী আপাতত এই রেট অপরিবর্তিতই রাখা হবে।”
MPC (Monetary Policy Committee) voted unanimously to leave policy repo rates unchanged at 4%: RBI Governor Shaktikanta Das pic.twitter.com/PUDdF25OOe
— ANI (@ANI) February 5, 2021
তিনি আরও বলেন, “রিভার্স রেপো রেটও ৩.৩৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক রেট ও মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটি রেটও ৪.২৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে।” আগামী অর্থবর্ষে জিডিপির আনুমানিক বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, “২০২১-২২ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধি হয়ে ১০.৫ শতাংশে পৌঁছতে পারে।”
নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিতে নতুন আশার আলো দেখছেন বলেই জানা গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ। তিনি বলেন, “২০২০ সালে আমাদের সহ্যক্ষমতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০২১ সাল আমাদের জন্য নতুন একটি অর্থনৈতিক ইতিহাস গড়ার সুযোগ এনে দিচ্ছে। বর্তমানে ক্রেতাদের বিশ্বাস ও ক্রয়ক্ষমতা ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নির্মাণ, পরিষেবা ও অবকাঠামো ব্যবসাও উর্ধ্বমুখী।”
While the year 2020 tested our capabilities and endurance, 2021 is setting the stage for a new economic era in the course of our history: RBI Governor Shaktikanta Das pic.twitter.com/5smtmAqUqr
— ANI (@ANI) February 5, 2021
ডিজিটাল পেমেন্টের উপর জোর দিয়ে আরবিআই গভর্নর বলেন, “ডিজিটাল পেমেন্ট ইকেসিস্টেমকে ক্রমাগত উন্নত করার প্রয়োজন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, করোনার কারণে অর্থনীতি যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তা ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কাটিয়ে তোলা সম্ভব হবে।”
It is our strong conviction, backed by forecast, that in 2021-22 we will undo the damage inflicted by COVID-19 on the economy: RBI Governor Shaktikanta Das pic.twitter.com/B6W35PlY1I
— ANI (@ANI) February 5, 2021
এদিকে রেপো রেট অপরিবর্তিত থাকায় হোম লোন, কার লোনে সুদ কমার আশায় জল ঢেলে দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। রেপো রেট কমলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কম সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিতে পারে। অন্যদিকে, রিভার্স রেপো রেট কমলে তারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে টাকা রেখে কম সুদ পায়। ফলে, এই দুটি রেট একইসঙ্গে কমলে বাজারে ঋণের জোগান বাড়ে। করোনা-কালে অর্থনীতির হাল ফেরাতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকরী বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
তবে পড়তি রেপো রেটে বাজারে টাকার জোগান বেড়ে গেলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কাও থাকে, বিশেষ করে যদি জোগান পর্যাপ্ত না হয়। বর্তমানে তেলের দামও লাফিয়ে বাড়ার ফলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতিতে এই দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্যের ছোঁয়াই দেখছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। ঋণনীতি ঘোষণা করতে গিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও বলেছেন, আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গেই মুদ্রাস্ফীতিকে বেঁধে রাখা তাঁদের লক্ষ্য। আর্থিক সমীক্ষায় আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার এগারো শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাসে আজ তা সাড়ে দশ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘নীতিবোধ’ শক্তিশালী করার পরামর্শ তাপসীর, মা তুলে অপমান কঙ্গনার