পানাজি: একদিন আগেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ক্রেমলিনে ড্রোন হামলার অভিযোগ করেছে রাশিয়া। চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধও এখনও দগদগে, সীমান্তের দুই পারেই এখনও মজুত বিপুল সংখ্যক সেনা এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে গোয়ায় চিন ও রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শুক্রবার, গোয়ার বেনাউলিমে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও গোষ্ঠীর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক। ঠিক তার আগেরদিন পরপর এই দুই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন জয়শঙ্কর। একদিকে, চিনের বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং-এর সঙ্গে বৈঠকে সীমান্ত বিরোধ প্রসঙ্গ তোলেন জয়শঙ্কর। অন্যদিকে, রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলা বিষয়ে আলোচনা করেন বিদেশমন্ত্রী।
চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে, দুই দেশের নিষ্পত্তি না হওয়া সমস্যাগুলির সমাধান এবং সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। আসন্ন জি২০ (G20) এবং ব্রিকস (BRICS) বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয় দুই বিদেশমন্ত্রীর। এর আগে মার্চ মাসেও জি২০ গোষ্ঠীর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের সময়, দুই বিদেশমন্ত্রী এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। তখন চিনা বিদেশমন্ত্রীকে জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি ‘অস্বাভাবিক’। গত সপ্তাহেই চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে রাজনাথ সিং স্পষ্ট বলেছেন, “সমস্ত সীমান্ত প্রোটোকল লঙ্ঘন করেছে চিন যার ফলে সামগ্রিকভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। এই মুহুর্তে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা এলাকায় দুই দেশের সেনাই মজুত রয়েছে। সেনা প্রত্যাহারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, গত এক বছরে সেই প্রক্রিয়াও মন্থর হয়ে গিয়েছে।
কিন গ্যাং-এর সঙ্গে বৈঠকের আগে, রুশ বিদেশমন্ত্রী লাভরভের সঙ্গেও আলোচনা করেন এস জয়শঙ্কর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়ার উপর যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তার কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে এদিনের বৈঠকে। বৈঠকের পর জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ‘আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ন্যায্য বহুমুখী ব্যবস্থা’ অনুসরণ করতে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষ। জয়শঙ্কর টুইট করেছেন, “রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক, বৈশ্বিক এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিস্তৃত পর্যালোচনা করলাম। ভারতের এসসিও সভাপতিত্বের প্রতি রুশ সমর্থনের প্রশংসা করেছি। এছাড়া জি২০ এবং ব্রিকস সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।” জয়শঙ্কর আরও জানিয়েছেন, দুই বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রধান বিষয়গুলি নিয়ে আস্থা-ভিত্তিক মতবিনিময় হয়েছে এবং সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এসসিও, ব্রিকস, রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং জি২০-র মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলিতে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।”