নয়া দিল্লি: বুকের উপর চেপে বসে গলা টিপে খুন, দেহ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে ভরে রাখা থেকে শুরু করে প্রতিদিন রাতে বেরিয়ে জঙ্গলে দেহের টুকরো ফেলে আসা, দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকারের খুনের সঙ্গে প্রচুর মিল রয়েছে ২০১০ সালের দেহরাদুনে অনুপমা গুলাটির খুনের ঘটনায়। তদন্তে নেমে পুলিশের চোখেও এই অদ্ভুত মিল ধরা পড়েছিল। তবে আফতাবের দাবি ছিল, ‘ডেক্সটার’ নামক একটি সিরিজ দেখেই শ্রদ্ধাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে। তবে আফতাবের মোবাইলের সার্চ হিস্ট্রি খুটিয়ে দেখতেই মিলল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রদ্ধাকে খুনের আগে ২০১০ সালের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের যাবতীয় তথ্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছিল অভিযুক্ত আফতাব।
চলতি বছরে ১৮ মে প্রেমিকা তথা লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধা ওয়াকারকে খুন করে আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। তবে গত মাসে শ্রদ্ধার বাবা মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে পুলিশের দ্বারস্থ হলে, তখন ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শ্রদ্ধার খুনের সঙ্গে ২০১০ সালে দেহরাদুনের খুনের ঘটনার কী মিল রয়েছে?
২০১০ সালে উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনে খুন হন অনুপমা গুলাটি। তাঁকে খুন করেছিলেন তাঁরই স্বামী রাজেশ গুলাটি। আফতাব যেভাবে শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল, একইভাবে ১২ বছর আগে রাজেশ গুলাটিও স্ত্রী অনুপমার দেহ ৭০ টুকরো করে ফেলেছিল। আফতাব ও রাজেশ, দুইজনই মৃতদেহ সংগ্রহ করে রেখেছিল ফ্রিজের ভিতরে।
দেহরাদুনের ঘটনায় রাজেশ দুই মাসের জন্য স্ত্রীকে খুনের কথা লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল। সেখানেই আফতাব প্রায় ছয় মাস শ্রদ্ধার দেহ লুকিয়ে রেখেছিল। শ্রদ্ধার দেহের টুকরো ফ্রিজে রেখেই বাড়িতে বন্ধুবান্ধব, এমনকী অনলাইন ডেটিং সাইট থেকে পরিচিত মেয়েদেরও বাড়িতে নিয়ে আসতেন আফতাব।
আফতাব ও রাজেশ, দুজনেই যথাক্রমে তাঁদের প্রেমিকা ও স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন। সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে প্রায়সময়ই ঝগড়াও হত।
আফতাব যেমন ‘ডেক্সটার’ টিভি সিরিজ দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। একইভাবে রাজেশ গুলাটিও হলিউডের সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। স্ত্রীকে গলা টিপে খুনের পর কীভাবে তার দেহ লোপাট করবেন, তার বুদ্ধি হলিউড সিনেমা দেখেই পেয়েছিলেন।
শুধু খুনের ঘটনাতেই মিল নয়, কীভাবে সেই খুন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাতেও প্রচুর মিল রয়েছে। শ্রদ্ধার খুনের পরও সে জীবিত আছে, তা প্রমাণ করতে আফতাব শ্রদ্ধার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছবি পোস্ট করত, বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করত। অন্য়দিকে, ২০২০ সালে স্ত্রী অনুপমাকে খুনের পর রাজেশ তাঁর শ্যালকের সঙ্গেও ফোনে কথা বলত স্বর বদলে, যাতে তারা ভাবেন যে অনুপমা ঠিক আছে।
আফতাব পুনাওয়ালা শ্রদ্ধার দেহের সমস্ত টুকরোই দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দিলেও, রাজেশ দুই মাসের মধ্যে তাঁর স্ত্রীর দেহের ৭০টি টুকরো ‘উধাও’ করে দিতে পারেনি। অনুপমার মা-বাবা মেয়ের খোঁজে এসেই, তাঁকে না পেয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশে যান। পুলিশ যখন রাজেশের বাড়িতে এসে পৌঁছয়, তখন তাঁর ফ্রিজ থেকে বেশ কিছু টুকরো খুঁজে পেয়েছিল।
রাজেশ গুলাটি কীভাবে তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছিল, সেই কাহিনী পড়েই শ্রদ্ধাকে খুন করেও ‘জীবিত’ রাখার চেষ্টা করেছিল আফতাব। কিন্তু ইন্সটাগ্রাম চ্যাটই বিপদ ডেকে আনে। শ্রদ্ধার বন্ধুরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের খবর দেন।