নয়া দিল্লি: সারা দেশে শিহরণ। লিভ-ইন পার্টনারকে হত্যা করে, তার দেহ টুকরো টুকরো করে ১৮ দিন ধরে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দিয়েছিল আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। তার আগে রেফ্রিজেটরে রেখে দিয়েছিল প্রেমিকার দেহের টুকরো। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও, ২৮ বছরের আফতাব প্রায় ছয় মাস ধরে তার অপরাধ গোপন রাখতে পেরেছিল। কিন্তু, তার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখলে বোঝার উপায় নেই, তার ভিতর এমন এক ভয়ঙ্কর খুনে সুপ্ত রয়েছে। বরং, সোশ্যাল মিডিয়ায় সে নিজেকে একজন নারীবাদী, পরিবেশবাদী, উদারপন্থী এবং এলডিবিটিকিউ প্লাস আন্দোলনের সমর্থক হিসেবে তুলে ধরেছিল।
চুপচাপ
আফতাব পুনাওয়ালার পারিবারিক বন্ধু জানিয়েছেন, প্রকৃতিগতভাবে আফতাব ছিল চুপচাপ। জীবনে কী করবে তা নিয়ে সে বিভ্রান্ত ছিল। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে ওই পারিবারিক বন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “ও এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আফতাবের আত্মীয় এবং বন্ধুরা আরও জানিয়েছেন, ছাত্র হিসেবে সে ছিল একজন গড়পড়তা। সে কখনই সংঘর্ষে জড়ায়নি।
ফুড ব্লগার
আফতাব ইনস্টাগ্রামে একটি ফুড ব্লগের অ্যাকাউন্ট চালাত। ২৮ হাজারের বেশি ফলোয়ারও ছিল। সেই অ্যাকাউন্টে অনেক ভারতীয় এবং চিনা খাবারের ছবি রয়েছে। তবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় রয়েছে।
পরিবেশবাদী এবং উদারপন্থী
বিভিন্ন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আফতাবকে পরিবেশবাদী এবং উদারপন্থী পোস্টকরতে দেখা গিয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে, মুম্বাইয়ের আরে বনাঞ্চল বাঁচাতে সে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিল। ২০১৫ সালে, আফতাব ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছিল। সেই ছবিটি ছিল একটি ছোট মেয়ের। তার হাতে ছিল একটি প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ছিল, “এই দীপাবলিতে আপনার অহংকারের বিস্ফোরণ ঘটান, পটকার নয়।” ২০১৬-তে জল সংরক্ষণের বিষয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদনও শেয়ার করেছিল আফতাব।
নারীবাদী
২০১৫ সালে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অ্যাসিড হামলা বন্ধ করা এবং এই ধরনের অপরাধ বন্ধের বিষয়ে বলিউড অভিনেতা জন আব্রাহাম একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছিলেন। এই পোস্টটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছিল আফতাব পুনাওয়ালা।
এলজিবিটিকিউ প্লাস সমর্থক
আফতাব এলজিবিটিকিউ প্লাস আন্দোলনের সমর্থকও। ২০১৫ সালের জুনে, সে ‘প্রাইড উইক’ উদযাপন করতে তার ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করেছিল। ছবিতে একটি রামধনু ফিল্টার যোগ করেছিল সে।
সমাজবিদরা বলছেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া আসলে কতটা ভ্রান্ত। সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখে কোনও মানুষের বাস্তব প্রকৃতি বোঝা কখনই সম্ভব নয়।