Sitaram Yechury and Indira Gandhi: চোখে চোখ রেখে সীতারামের দাবি, ইস্তফা দিতে বাধ্য হন ইন্দিরা!

Sitaram Yechury and Indira Gandhi: সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, এক মাথা চুলের এক ছাত্রনেতা একটি কাগজ পড়ছেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই দিনের সেই ছাত্রনেতা ছিলেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ইন্দিরা গান্ধীর সামনে দাঁড়িয়েই, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যর পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন সেদিনের সীতারাম।

Sitaram Yechury and Indira Gandhi: চোখে চোখ রেখে সীতারামের দাবি, ইস্তফা দিতে বাধ্য হন ইন্দিরা!
ইন্দিরাকে ইস্তফায় বাধ্য করিয়েছিলেন সীতারামImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Sep 12, 2024 | 7:38 PM

নয়া দিল্লি: দিন কয়েক আগে, আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে লালবাজারে কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। বিনীত গোয়েলের ইস্তফার দাবিতেই আন্দোলন করছিলেন তাঁরা। সাক্ষাতের পর, সরাসরি নগরপালকেই প্রশ্ন করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা, ‘পদত্যাগের বিষয়ে কী ভাবছেন?’ এই ঘটনা দেখে অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছিল ১৯৭৭ সালের একটি ছবির কথা। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, এক মাথা চুলের এক ছাত্রনেতা একটি কাগজ পড়ছেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই দিনের সেই ছাত্রনেতা ছিলেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ইন্দিরা গান্ধীর সামনে দাঁড়িয়েই, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যর পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন সেদিনের সীতারাম। যার জেরে শেষ পর্যন্ত ইস্তফা দিতে বাধ্য হন ইন্দিরা।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর), শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা তথা সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক, সীতারাম ইয়েচুরি। ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে, নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তাঁর পাঁচ জশকের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর সাতের দশকে, ছাত্র রাজনীতি থেকে। আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সেই ছবিটি তাঁকে জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ জায়গা করে দিয়েছিল। তবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যুগে তাঁর এই ছবি নিয়ে প্রচুর বিভ্রান্তিকর তথ্যও ছড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে দাবি করা হয়, ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময়, দিল্লি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে জোর করে প্রবেশ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি, সীতারাম ইয়েচুরিকে হেনস্থা করেছিলেন তিনি। জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য তাঁকে পদত্যাগ করতে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছিলেন।

অথচ, বাস্তব পরিস্থিতিটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। ছবিটি জেএনইউ-এ তোলা হয়নি। ছবিটা ছিল ইন্দিরা গান্ধীর বাড়ির বাইরের। ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার অবসানের সময় তোলা হয়েছিল। ওই বছর জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর, প্রতিষ্ঠানের চ্যান্সেলর পদ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর ইস্তফা দাবি করে এক বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। জরুরি অবস্থার পরের লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও এই পদ ধরে রেখেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তারই প্রতিবাদ জানান সীতারামের নেতৃত্বে ছাত্ররা। ব্যাপকবাবে ছড়িয়ে পড়া ছবিটিতে ইন্দিরা গান্ধীর বাড়ির সামনে সীতারাম ইয়েচুরিকে দেখা যাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়নের দাবিগুলো পড়ে শোনাতেই। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়েই সেই সব আবেদন শুনেছিলেন ইন্দিরা। পরে ইস্তফাও দেন তিনি।

ইন্দিরা গান্ধীর সামনেই তাঁর ইস্তফার দাবি পড়ে শোনাচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরি

সিবিএসই বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় গোটা ভারতের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন সীতারাম। তারপর, দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ এবং জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। সিপিআইএম-এর ছাত্র সংগঠন এসএফআই থেকে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি সিপিআইএম-এ যোগ দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী সরকার যখন জরুরি অবস্থা জারি করেছিল, তখন তিনি জেএনইউ-তে অর্থনীতিতে ডক্টরেট করছিলেন। জরুরী অবস্থায় সময় তিনি আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। শেষ হয়ে গিয়েছিল ডক্টরেটের পড়াশোনা। অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল পিএইচডি। ১৯৭৫-এ আরও অনেক নেতার সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন সীতারামও। জেল থেকে বের হওয়ার পর, একই বছরে তিনি তিনবার জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময়ই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল প্রকাশ কারাতের।