নয়া দিল্লি: আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে মোদী সরকারের যোগাযোগ কতদূর? সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। সংসদের মধ্যে গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছবি দেখিয়েছিলেন। আদানি ইস্যুতে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত চেয়ে সংসদের দুই কক্ষ অচল করে দিয়েছিল বিরোধীরা। তারপর যমুনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের কারাবাসের সাজার জেরে সাংসদ পদ খুইয়েছিলেন রাহুল। সদ্য সেই পদ ফিরে পেয়েছেন। বুধবার (৯ অগস্ট), সংসদে আরও একবার বক্তৃতা দিলেন তিনি। আর এই বারও বিজেপিকে আদানি খোঁচা দিতে ছাড়েননি রাহুল। তবে, ইটের জবাবে পাল্টা পাটকেল খেতে হয়েছে স্মৃতি ইরানির কাছ থেকে। কংগ্রেস সরকারের আমলে আদানি গোষ্ঠীকে কেন সহায়তা করা হয়েছিল, কেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে আদানিদের প্রকল্পের বরাত দেওয়া হচ্ছে – ইন্ডিয়া জোটকে এই রকম অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শুধু তাই নয়, রবার্ট বঢরার সঙ্গে গৌতম আদানির একটি ছবিও এদিন দেখান তিনি। বাংলায় হলদিয়া বন্দরের বরাতও আদানীদের দেওয়া হয়েছে, সেই প্রসঙ্গও তোলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
এদিন অনাস্থা প্রস্তাবের উপর দ্বিতীয় দিনের বিতর্ক শুরু করেন রাহুল গান্ধী। বক্তৃতার শুরুতেই তাকে সংসদে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে ধন্যবাদ জানান রাহুল। তারপরই আদানি নিয়ে খোঁচা দেন সরকারকে। তিনি বলেন, “অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাকে লোকসভার সাংসদ হিসেবে পুনর্বহাল করার জন্য, প্রথমেই আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি যখন শেষবার বলেছিলাম, সম্ভবত আমি আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করেছিলাম। কারণ আমার বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল আদানি। হয়তো আপনার সিনিয়র নেতা ব্যথা পেয়েছিলেন। সেই ব্যথা আপনার উপরও প্রভাব ফেলে থাকতে পারে। আমি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু, আজ আমার বিজেপির বন্ধুদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। কারণ আমার আজকের বক্তৃতায় আদানির কথা নেই। চিন্তা করবেন না, আজ আদানি নিয়ে কথা বলব না। আমি অবশ্যই কিছু বোমা ছুড়ব, তবে গতবারের মতো মারাত্মক হবে না সেগুলি।”
বক্তৃতার শেষ অংশে ফের একবার মোদী সরকারকে আদানির নাম করে খোঁচা মারেন কংগ্রেস নেতা। বক্তৃতায় শেষ অংশে রাহুল গান্ধী বলেন, অহঙ্কারের বশে লঙ্কারাজ রাবণ সাধারণ মানুষের কথা শুনতেন না। তিনি শুধুমাত্র দুজনের কথা শুনতেন – মেঘনাদ এবং কুম্ভকর্ণ। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীও, সাধারণ মানুষের কথা না শুনে শুধুমাত্র অমিকত শাহ আর গৌতম আদানির কথাই শোনেন বলে অভিযোগ করেন রাহুল গান্ধী।
রাহুলের পরই বক্তৃতা দেন স্মৃতি ইরানি। মুন্দ্রা বন্দর থেকে শুরু করে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলের যোগাযোগের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, “১৯৯৩ সালে মুন্দ্রা বন্দরের জন্য যে জমি দেওয়া হয়েছিল, তা কংগ্রেস সরকার দিয়েছিল। সেই সময় গুজরাটে এবং কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার ছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন? কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। ইউপিএ জমানায় আদানিকে ৭২ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছিল। কেন দেওয়া হয়েছিল সেই টাকা? রাজস্থানে কংগ্রেসের অশোক গেহলটের সরকার আদানির সঙ্গে ৬০ হাজার কোটির চুক্তি করেছে। কেরলে আদানিকে বন্দর তৈরির জমি দেওয়া হয়েছে। বাংলায় হলদিয়া বন্দরের বরাত দেওয়া হয়েছে। আদিবাসীারা আপত্তি করা সত্ত্বেও, ছত্তীসগড়ে আদানিকে জমি দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে?’ আসলে নিশিকান্ত দুবে যেমন বলেছিলেন, ওদের নীতি হল, ছেলেকে সেট করো, আর জামাইকে ভেট দাও। ছেলে কীভাবে সেট হয়েছে, আর জামাই কি ভেট পেয়েছে, তার আমরা কি জানি?