নয়া দিল্লি: একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসছে ‘দেবভূমি’-তে। অতিবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিধসে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড। চলতি বছর তো বর্ষার শুরু থেকেই বিপর্যয় নেমে এসেছে এই দুই রাজ্যে। বিশেষত, গত এক সপ্তাহ ধরে অতিবৃষ্টি ও ভূমিধসে জেরবার হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই দুই রাজ্য। ইতিমধ্যে দুই রাজ্যে প্রায় শ’খানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভেসে গিয়েছে বহু ঘর-বাড়ি, রাস্তা, সেতু। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে এবার বিশেষ পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে সমীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে যে বিপর্যয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে, তার জন্য বেআইনি নির্মাণই দায়ী বলে মনে করছে শীর্ষ আদালত। এব্যাপারে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ঘটনাটি ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু’। তাই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে সম্পূর্ণ ও বিস্তারিত সমীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ সর্বাধিক কত পরিমাণ জনসংখ্যা এবং পরিকাঠামো কোনওরকম অবক্ষয় ছাড়াই বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে পারে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট তথ্য প্রয়োজন বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। এই সমীক্ষার জন্য সোমবার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করারও প্রস্তাব দিয়েছে আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে হিমালয়-সংলগ্ন ১৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ধারণ ক্ষমতা এবং মাস্টার প্ল্যানের মূল্যায়নের জন্য একটি জনস্বার্থ আবেদনের শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে আবেদনকারীর আইনজীবী অশোক কুমার রাঘব জানান, প্রতিদিন হিমালয় অঞ্চলে অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা আটকাতে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এই অঞ্চলের সামগ্রিক মূল্যায়ণ করা জরুরি। তাঁর সেই আবেদন মেনে বিচারপতি জে.বি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র বলেন, “হিমালয় অঞ্চলের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে সম্পূর্ণ এবং বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য আমরা ৩-৪টি ইনস্টিটিউটের নাম মনোনয়ন করতে পারি।” এরপরই কেন্দ্রের তরফে উপস্থিতি অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল (ASG) ঐশ্বর্য ভাটিকে এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করার কথা জানায় শীর্ষ আদালত। এব্যাপারে কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যদিও পূর্বতন সরকারও হিমালয়ের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে একটি মানদণ্ড নিয়ামক তৈরি করেছিল। এপ্রসঙ্গে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (NGT)-র একটি নির্দেশের উল্লেখ করে ভাটি আদালতে জানান, কেন্দ্র আগেও রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। তারা এব্যাপারে কী করেছে এখন তাদের জানাতে হবে। এরপরই শীর্ষ আদালত জানায়, কেন্দ্রের মানদণ্ড নিয়ামকের প্রেক্ষিতে ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কী পদক্ষেপ করেছে, সে ব্যাপারে আগামী ৪-৮ সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছে জবাব নেবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন স্থির হয়েছে আগামী ২৮ অগস্ট।