Supreme Court: ‘যৌন জীবন নিয়ে প্রশ্ন নয়, সম্মানজনক প্রশ্ন করতে হবে নির্যাতিতাকে’, পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

Supreme Court: সামাজিক লজ্জার জেরে আগে থেকেই মানসিক চাপ থাকে, সেটা মনে রেখে আদালতের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করছে শীর্ষ আদালত।

Supreme Court: 'যৌন জীবন নিয়ে প্রশ্ন নয়, সম্মানজনক প্রশ্ন করতে হবে নির্যাতিতাকে', পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ পর্যবেক্ষণ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 14, 2022 | 8:52 AM

ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রতিনিয়ত সামনে আসে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ন্যয়বিচার মেলে না কারণ সাহস করে অভিযোগ জানাতে যান না অনেকেই। লোকলজ্জার ভয়ে চাপা পড়ে যায় সমাজের অনেক ঘৃণ্য অপরাধ। বিচারের আশায় আদালতে গেলে এমন অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, যার মুখোমুখি হওয়ার মানসিক শক্তি থাকে না অনেক মহিলারই। তাই বিচার প্রক্রিয়া যাতে আরও একটি সহানুভূতিশীল হয়, তেমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এক মামলার শুনানিতে শুক্রবার নিম্ন আদালতগুলিকে বেশ কিছু নির্দেশিকা দিল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

‘অনেক বেশি সংবেদনশীর হওয়া উচিত নিম্ন আদালতের’

বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ারা ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে নিম্ন আদালতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছে যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী বা অভিযোগকারীর আইনি লড়াই অনেক বেশি কঠিন কারণ সামাজিক কারণে আগে থেকেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত থাকেন নির্যাতিতা বা নির্যাতিত। এই সব ক্ষেত্রে আদালতের অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত।

নির্যাতিত বা নির্যাতিতার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত, তা উল্লেখ করেছে আদালত।

১. ক্যামেরার সামনে বিচার প্রক্রিয়া করা যাবে উপযুক্ত ক্ষেত্রেই।

২. যদি স্ক্রিন লাগিয়ে অনলাইনে বিচার প্রক্রিয়া চলে, তাহলে আদালতকে নিশ্চিত করতে হবে, নির্যাতিতা যাতে কোনও ভাবেই অভিযুক্তকে দেখতে না পান। আর নির্যাতিতার বয়ান নেওয়ার সময় অভিযুক্তকে আদালত কক্ষের বাইরে বের করে দিতে হবে।

৩. অভিযুক্ত ও নির্যাতিতার বয়ান মিলিয়ে নিতে হবে, তবে সম্মানজনক প্রশ্ন করে তবেই বয়ান মেলাতে হবে। কোনও অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা যাবে না। নির্যাতিতার যৌনজীবন নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না।

৪. দুজনের বয়ান মেলানোর প্রক্রিয়া একদিনেই সম্পন্ন করতে হবে।

‘যৌন নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে আদালতের দায়িত্ব অনেক বেশি’

ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, সামাজিক লজ্জার জেরে আগে থেকেই মানসিক চাপ থাকে, সেটা মনে রেখে আদালতের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ যৌন নির্যাতনের শিকার হলে একজন মহিলার প্রতি আজও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী অন্যরকম। সে সব ক্ষেত্রে পুলিশ যদি তৎপর না হয়, তাহলে আদালতের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়।

কী সেই মামলা?

মধ্য়প্রদেশের একটি মামলায় এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত। ওই মামলায় নিম্ন আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট।

মধ্য প্রদেশের এক যোগা শিক্ষিকা একটি প্রতিষ্ঠানের উপাচার্যের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন। ২০১৯ সালে সেই অভিযোগ জানান তিনি। উপাচার্য আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করায় ওই শিক্ষিকা নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এরপর ওই শিক্ষিকাকে বহিষ্কার করা হয়।

ওই ঘটনার পর মহিলা থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় পুলিশ সুপারের কাছে পরপর দুবার অভিযোগ জানান তিনি। তাতেও কোনও লাভ না হওয়ায় নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বিচার প্রক্রিয়া এগোয়নি। পরে নিম্ন আদালতের তরফে বলা হয়, ওই মামলায় যথেষ্ট প্রমাণ নেই। অভিযোগকারিণীকেই প্রমাণ জোগাড় করতে বলা হয়।

সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযোগকারিণী। কিন্তু হাইকোর্টে তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০০ ও ২০২ ধারা অনুযায়ী নিম্ন আদালত অভিযোগকারিণীকে প্রমাণ জোগাড় করতে বলতে পারে। এরপরই ওই মহিলা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

কী বলল সুপ্রিম কোর্ট?

সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়েছে, যৌন হেনস্থার মতো ঘটনায় নির্যাতিতা অনেক মানসিক সমস্যায় থাকে, তাই তাঁর ওপর আর বোঝা বাড়ানো উচিত নয়। তাঁকে প্রমাণ জোগাড় করতে না বলে পুলিশকেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া উচিত। নাহলে প্রকৃত বিচার হবে না বলে মন্তব্য করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। নিম্ন আদালতের পুলিশকেই নির্দেশ দেওয়া উচিৎ বলেই উল্লেখ করেছে শীর্ষ আদালত।