নয়া দিল্লি: মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ করার প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়ার পর তা শীতকালীন অধিবেশনে পেশও করা হয়েছিল, কিন্তু একাধিক বিরোধী দলের তরফে সেই বিলের বিরোধিতা করা হলে, তা সংসদীয় কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়। ৩১ সদস্যের ওই কমিটিতে একমাত্র মহিলা সদস্য তৃণমূল কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব। রবিবারই তিনি জানান, বাল্য বিবাহ (সংশোধনী) বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সকলের কন্ঠস্বরই যাতে শোনা হয়, তা নিশ্চিত করবেন।
গত বছর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর থেকে বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, “আমাদের সরকার দেশের মেয়ে-বোনেদের স্বাস্থ্য নিয়ে ক্রমাগত উদ্বিগ্ন থাকে। মেয়েদের অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে, সঠিক বয়সে তাদের বিয়ে হওয়া জরুরি।”
সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই চিন্তাভাবনা করে কেন্দ্রের তরফে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছর করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সর্বসম্মতিতে তা পাশ হয়ে যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। কিন্তু শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল পেশ করা হলেই কংগ্রেস, সিপিএম সহ একাধিক বিরোধী দল এই খসড়া বিলের বিরোধিতা করে।
কংগ্রেসের তরফে এই আইন সরাসরি পাশের বিরোধিতা করে বলা হয়েছে, “এই বিল নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ও সন্দেহ রয়েছে। বিলটি সংসদে পেশ করার আগে স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে বিলটি পর্যালোচনার জন্য পাঠানো উচিত”। অন্যদিকে, সিপিএমের তরফেও এই প্রস্তাবিত বিলের বিরোধিতা করা হয়েছে।
তাদের দাবি, মেয়েদের বিয়ের বয়স না বাড়িয়ে কেন্দ্রের আগে নারীশিক্ষা ও পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া উচিত। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “১৮ বছর বয়সী একজন মহিলা আইনত প্রাপ্তবয়স্ক। শুধুমাত্র বিয়ের জন্য তাঁকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে গণ্য করা আইনেরই বিরোধিতা করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকারকে লঙ্ঘন করছে এই প্রস্তাবিত আইন। এই আইনে মহিলাদের নিজেদের জীবনের গতিপথ নির্ধারণের অধিকার থেকেই বঞ্চিত করে।”
মহিলাদের বিয়ের বয়স আদৌই ১৮ থেকে ২১ করা উচিত কিনা, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য় যে ৩১ সদস্যের সংসদীয় প্যানেল তৈরি করা হয়েছে, তাতে একমাত্র মহিলা সদস্য হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য়সভার সাংসদ সুস্মিতা দেব। কমিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই স্ট্যান্ডিং কমিটি মহিলাদের বিয়ের বয়সের সীমারেখা কী হওয়া উচিত, তা পর্যালোচনা করে দেখবে। আমি এই কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য। তবে আমি চেষ্টা করব কমিটির চেয়ারম্যান যেন সকলের কথাই শোনেন।”
তিনি আরও বলেন, “আরও মহিলা সাংসদ থাকুক, তা চেয়েছিলাম আমি। তবে আমাকে বলতেই হচ্ছে যে আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দেখিয়েছেন এবং মহিলাদের বিয়ের বয়স বৃদ্ধির বিল নিয়ে আলোচনার কমিটিতে একজন মহিলা প্রতিনিধিকেই পাঠিয়েছেন। আমি সকলের কথা শুনতে প্রস্তুত।”
সুস্মিতা দেব জানান, এই কমিটির অন্য়তম দায়িত্বই হল বিলটির সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা এবং বিভিন্ন মত, দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করা। এটি যেহেতু একটি স্পর্শকাতর বিষয়, এক্ষেত্রে সকলের মতামত বিবেচনা করা উচিত।