টুলকিটকাণ্ড: জামিন পেলেন না দিশা, পুলিশের ‘অনুমানে’ অসন্তুষ্ট আদালত

ঈপ্সা চ্যাটার্জী | Edited By: সুমন মহাপাত্র

Feb 20, 2021 | 9:25 PM

পুলিশের অভিযোগ, গত ১১ জানুয়ারি জুম কলে খলিস্তানপন্থী "পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশন" (Poetic Justice Foundation)-র প্রতিষ্ঠাতা এমও ধালিওয়ালের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অভিযুক্ত দিশা রবি। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে এইধরনের একাধিক মিটিং হয়েছিল তাঁদের মধ্যে।

টুলকিটকাণ্ড: জামিন পেলেন না দিশা, পুলিশের অনুমানে অসন্তুষ্ট আদালত
ফাইল চিত্র।

Follow Us

নয়া দিল্লি: খলিস্তানকে সমর্থন নয়, কৃষি ও পরিবেশ নিয়েই কথা বলতেন তিনি, দিল্লি আদালতে আজ এমনটাই জানালেন টুলকিটকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া পরিবেশকর্মী দিশা রবি (Disha Ravi)। যদিও দিল্লি পুলিশ (Delhi Police) এখনও দাবি, টুলকিটের মাধ্যমেই আরেকটি ওয়েবসাইটে পাঠানো হচ্ছিল, যা ভারত ও তার সেনাবাহিনীকে অবমাননার উদ্দেশেই তৈরি করা হয়েছে। খলিস্তানপন্থী সংস্থা পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল দিশার। শনিবার দিশা রবির জামিনের আবেদনে দুই পক্ষের বয়ানই শোনে দিল্লি আদালত, আগামী মঙ্গলবার এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। তবে আজ জামিন পাননি দিশা।

আজ দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্টে জামিনের মামলার শুনানিতে দিশা রবি বলেন, “আমার বয়স মাত্র ২২, আমি কর্নাটকের বাসিন্দা। আমার সঙ্গে খলিস্তানি আন্দোলনের কোনওভাবেই সংযোগ নেই। দিল্লি পুলিশের পেশ করা প্রমাণেও আমার সঙ্গে শিখস ফর জাস্টিসের বার্তালাপের কোনও প্রমাণ মেলেনি।” দিল্লি পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, “যোগাসনকে আক্রমণ করা হয়েছে”। এই প্রসঙ্গে দিশার তরফে আদালতে হাজির কাউন্সিল সিদ্ধার্থ আগরওয়াল বলেন, “যদি আমি যোগাসনের বদলে কুং ফু পছন্দ করি, তবে কি আমি চিনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্র করছি? সেটাও কি দেশদ্রোহিতা? যদি বিশ্বের সামনে কৃষক আন্দোলনকে তুলে ধরা দেশদ্রোহিতা হয়, তবে আমি জেলেই ভাল রয়েছি।”

বিচারক ধর্মেন্দ্র রাণা জুম মিটিং প্রসঙ্গে দিশাকে প্রশ্ন করেন, তিনি কি জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন? এর জবাবে দিশার আইনজীবী বলেন, “যদি হিংসায় সরাসরি যোগাযোগ বা প্ররোচনা দেওয়া হয়, তবে সেটা অপরাধ। কিন্তু এক্ষেত্রে অভিযোগ কী? তিনি জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন? সেই মিটিংয়ে কথা বলেছিলেন কিনা?”

আরও পড়ুন: ‘দমবন্ধ’ দিল্লি! লকডাউনেও বাগ মানেনি বায়ুদূষণ, এক বছরেই মৃত ৫৪ হাজার

পুলিশের অভিযোগ, গত ১১ জানুয়ারি জুম কলে খলিস্তানপন্থী “পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশন” (Poetic Justice Foundation)-র প্রতিষ্ঠাতা এমও ধালিওয়ালের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অভিযুক্ত দিশা রবি। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে এইধরনের একাধিক মিটিং হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। কেবলমাত্র জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে কাউকে প্রভাবিত করা সম্ভব, এই বিষয়ে বিচারক প্রশ্ন করলে দিল্লি পুলিশের তরফে বলা হয়, “সবাই জানেন ধালিওয়াল কে। কেউ তাঁর সঙ্গে কেন কথা বলবে?” এর জবাবে বিচারক বলেন, “না, আমি জানিনা কে এই এমও ধালিওয়াল।”

প্রজাতন্ত্র দিবসে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে দিশা রবির সংযোগ কী ছিল, সেই বিষয়ে আদালতের তরফে প্রশ্ন করা হলে দিল্লি পুলিশের আইনজীবী বলেন, “যেকোনও চক্রান্তে সকলের ভূমিকা এক হয় না। কেউ হয়তো ওই টুলকিটের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হিংসায় জড়িয়ে পড়তেই পাড়েন।” পুলিশের জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় আদালতের তরফে সরাসরি সংযোগের প্রমাণ দিতে বলা হয়। কার্যত ধমক দিয়েই বিচারক বলেন, “আদৌই কি কোনও সংযোগ রয়েছে নাকি আমাদের কেবল অনুমানই করতে হবে? টুলকিটে এমন কোনও তথ্যই ছিল না যা দেশের প্রতি অসম্মানজনক।”

দিশার জামিন নাকচ করে দেওয়ার দাবিতে দিল্লি পুলিশের তরফে বলা হয়, “দিশা আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে অবগত ছিল। দেশের সম্মানহানি করতে যে চক্রান্ত করা হচ্ছিল, সে সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যেতে পারে জেরায়।” পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়, পেয়েটিক জাস্টিসের তরফে দিশাকে যোগাযোগ করা হয়েছিল কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে বড় কোনও চক্রান্ত পরিকল্পনার জন্যই। কৃষক আন্দোলনকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে দেশের অবমাননা করা ও অশান্তি সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় দিশাও সক্রিয় অংশ ছিলেন।

টুলকিটকাণ্ডে (Toolkit Case) গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরু থেকে দিশাকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। দিশা ছাড়াও নিকিতা জেকব ও শান্তনু মুলুক নামক অপর দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে তাঁরা ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: নাম বদলাচ্ছে হোশাঙ্গাবাদের, নতুন কী নাম ঠিক করলেন শিবরাজ?

Next Article