লখনউ: স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চিকিৎসক। একসঙ্গে চালাতেন একটি হাসপাতালও। বাইরে থেকে দেখে সুখী দম্পতি মনে হলেও, ভিতরে ভিতরে বাড়ছিল দূরত্ব। সন্তানদের মুখ চেয়ে বিরোধ কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনও লাভই হয়নি। গত মাসেই চরমে ওঠে বিরোধ। এরপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান স্ত্রী। দিন কয়েক অপেক্ষা করার পর পুলিশে গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরিও করেন স্বামী। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে যে তথ্য উঠে এল, তাতে সকলের চক্ষু চড়কগাছ। জানা গেল, ওই চিকিৎসক নিজেই তাঁর স্ত্রীকে খুন করেন। দেহের শেষকৃত্য করার পর তিনিই আবার পুলিশে গিয়ে নিখোঁজ অভিযোগ করেন অপরাধ লুকাতে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের লখিমপুরে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার লখিমপুরের বাসিন্দা ডঃ আশুতোষ অবস্তি ও তাঁর বাবা গৌরি শঙ্কর অবস্তিকে গ্রেফতার করা হয়। বন্দনা শুক্লা নামক মহিলা চিকিৎসককে খুনের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বচসা চলছিল ওই দম্পতির মধ্যে। গত ২৬ নভেম্বর ডঃ আশুতোষ রাগের মাথায় মারধর করতে শুরু করেন স্ত্রীকে। মারের চোটে ছিটকে মাটিতে পড়ে যান, সেই সময়ই মাথায় চোট লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই মহিলা চিকিৎসকের। নিজের অপরাধ লুকোতে এরপর তারা বাক্সে ভরে দেহ নিজেদের হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে আবার অ্যাম্বুলেন্সে দেহ নিয়ে শশ্মানে যান এবং দেহ পুড়িয়ে দেন।
জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে ওই দম্পতির বিয়ে হয়। ২০১৮ সালে একটি দুর্ঘটনায় ওই চিকিৎসকের পিঠে গুরুতর চোট লাগে। এরপর থেকেই স্ত্রীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। তাদের যমজ সন্তানও রয়েছে। গত নভেম্বর মাসের শেষভাগে একদিন বচসার সময়ই অভিযুক্ত চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন। মাথায় আঘাত লেগে বন্দনা শুক্লা নামক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। অনিচ্ছাকৃত খুনের পরই অভিযুক্ত চিকিৎসক তাঁর বাবাকে ফোন করেন। তিনিই বাক্সে ভরে দেহ নিজেদের হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
হাসপাতাল থেকে মৃতার দেহ গড় মুক্তেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয় শেষকৃত্য করার জন্য। যে অ্যাম্বুলেন্সে করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়ির চালক মহিলার মাথায় রক্ত দেখে প্রশ্ন করেছিলেন। সেই সময় ওই চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, পথ দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের কেউ ময়নাতদন্ত চান না, তাই সরাসরি হাসপাতাল থেকে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
শেষকৃত্য সারার পরে ওই চিকিৎসক সদর কোতওয়ালি থানায় গিয়ে স্ত্রীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে আশুতোষ ও তাঁর বাবার ফোন রেকর্ড খতিয়ে দেখে। ফোনের লোকেশন ট্রাক করলে দেখা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন তাঁরা দুজনেই গড় মুক্তেশ্বরে ছিলেন। এরপরই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতার করা হয়।