লখনউ: একশো-দুশো নয়, লখিমপুর কাণ্ডে (Lakhimpur Kheri Violence) পাঁচ হাজার পাতার চার্জশিট (Chargesheet) জমা দিল উত্তর প্রদেশ পুলিশ(UP Police)-র বিশেষ তদন্তকারী দল (Special Investigation Team)। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরিতে গাড়ি চাপা পড়ে চার কৃষক সহ আটজনের মৃত্য়ুর তদন্তে আগের চার্জশিটেই বলা হয়েছিল, “দুর্ঘটনা নয়, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই গাড়ি চাপা দেওয়া হয়েছিল কৃষকদের”। এবারের চার্জশিটে উঠে আসল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র(Ajay Kumar Mishra)-র ছেলের নামও।
লখিমপুরে গাড়ি চাপা পড়ে কৃষক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যে পরিমাণ জলঘোলা ও উত্তেজনা ছড়িয়েছে, সেই বিষয়কে মাথায় রেখেই এ দিন কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় একটি বড় ট্রাঙ্কে করে নিয়ে আসা হয় ৫ হাজার পাতার ওই চার্জশিট। লখিমপুরের স্থানীয় আদালতে প্রবেশের পরই বড় দুটি তালা খুলে ট্রাঙ্ক থেকে বের করা হয় চার্জশিট। সিনিয়র প্রসিকিউশন অফিসার এসপি যাদব জানান যে, আদালতে ৫ হাজার পাতার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। যদি আদালত এই চার্জশিট গ্রহণ করে, তবে মামলার শুনানি শুরু হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিট(SIT)-র জমা দেওয়া চার্জশিটে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রের নাম না থাকলেও, তাঁর আত্মীয় বীরেন্দ্র শুক্লার নাম যোগ করা হয়েছে।
গত বছরের ৩ অক্টোবর উত্তর প্রদেশের লখিমপুরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র ও উত্তর প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্য্য। মাঝপথেই লখিমপুর খেরিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল কৃষকরা। আচমকাই কনভয় থেকে একটি কালো রঙের এসইউভি গাড়ি কৃষকদের ধাক্কা মারে। গাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয় চারজন কৃষকের। এরপরই সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনায় ৪ কৃষক সহ মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ ওঠে, ওই গাড়িতে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশীষ মিশ্র। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উত্তাল হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতি।
তদন্তের শুরুতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও ঢিলেমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তুমুল ভৎসর্নার মুখে পড়ে উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও সরকার। শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপের পরই গ্রেফতার করা হয় আশীষ মিশ্র সহ ১২ জনকে। তদন্তের গতি প্রকৃতির উপর নজরদারির জন্য কোনও হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়োগ করা যে প্রস্তাব দিয়েছিল শীর্ষ আদা্লত, সেই প্রস্তাবে সায় দেয় উত্তর প্রদেশ সরকার। গোটা তদন্তের উপর নজরদারি করছেন প্রাক্তন বিচারপতি রাকেশ জৈন। তিন আইপিএস অফিসারকেও বিশেষ তদন্তকারী দলে নিয়োগ করা হয়েছে।
গত মাসেই উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টে বলা হয়, লখিমপুর খেরির ঘটনায় কৃষকদের মৃত্যু কোনও গাফিলতির কারণে হয়নি, খুনের উদ্দেশ্যে এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আশীষ মিশ্র সহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগগুলি সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিশেষ তদন্তকারী দল ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯, ৩৩৮, ৩০৪(এ) ধারা সরিয়ে, তার পরিবর্তে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭, ৩২৬, ৩০২, ৩৪, ১২০ (বি), ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩/25/30 ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিটের রিপোর্ট জমা পড়ার পরই শীতকালীন অধিবেশনেও লখিমপুর কাণ্ডের আঁচ পৌঁছয়। প্রায় প্রতিদিনই কংগ্রেস, তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রের ইস্তফার দাবি জানিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিক্ষোভ দেখান। বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরেই ব্য়হত হয় লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন এবং নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই মুলতুবি করে দিতে হয় সংসদ।