সুড়ঙ্গের ভিতরে উদ্ধার দুটি ছিন্নভিন্ন দেহ, আগাম বিপদের আশঙ্কায় জঙ্গলে ঠাঁই নিয়েছেন গ্রামবাসীরা

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Feb 14, 2021 | 6:01 PM

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল সুড়ঙ্গের ভিতর থেকেই দুটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিপর্যয়ের সময় জলের গতিবেগ এতটাই বেশি ছিল যে মৃতদেহগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

সুড়ঙ্গের ভিতরে উদ্ধার দুটি ছিন্নভিন্ন দেহ, আগাম বিপদের আশঙ্কায় জঙ্গলে ঠাঁই নিয়েছেন গ্রামবাসীরা
এক সপ্তাহের পরও চলছে উদ্ধারকার্য। ছবি:ANI

Follow Us

জোশীমঠ: গত রবিবারই উত্তরাখণ্ডে নেমে এসেছিল বিপর্যয় (Uttarakhand Disaster)। মাঝে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে জোশীমঠে হড়পা বানে মৃতের সংখ্যা। শনিবার তপোবনের সুড়ঙ্গ থেকে দুই শ্রমিকের ছিন্ন-ভিন্ন দেহ উদ্ধার হয়, আজ ভোরে আরও চারটি মৃতদেহের খোঁজ মেলে। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৪-এ। এখনও ১৬০ জনেরও বেশি নিখোঁজ।

গতকাল ডিজিপি অশোক কুমার টুইট করে জানান, তপোবনের মূল সুড়ঙ্গের মধ্যে জমে থাকা ধ্বংসস্তূপ থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এসডিআরএফ ও এনডিআরএফের জওয়ানরা দেহ উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে। এদিকে, রবিবার ভোরে সুড়ঙ্গ থেকে যে মৃতদেহটি পাওয়া গিয়েছে, তাঁর পরিচয় জানা গিয়েছে। আলম নামক ওই ব্যক্তি উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বলে অনুমান। বাকি যে তিনজনের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তাঁদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। ওই তিন জন সুড়ঙ্গে ইলেকট্রিকের কাজ করছিলেন বলে অনুমান। এছাড়াও রেনি গ্রাম থেকে আরও দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ইতিমধ্য়েই নিখোঁজ ব্যক্তিদের নামের তালিকার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলির নাম-পরিচয় মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। নিখোঁজ ২০৪ জনের মধ্যে ৪৪টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও ১৬০ জন নিখোঁজ।

গত রবিবার সকালেই নন্দাদেবী হিমবাহের একাংশ ভেঙে পড়ে জোশীমঠে হড়পা বান আসে। অলকানন্দা নদীর আশেপাশে অবস্থিত গ্রামের বাসিন্দা ও তপোবন এবং ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্পের শ্রমিক সহ মোট ২০০-রও বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়ে যান। বিপর্যয়ের খবর পেয়েই উদ্ধারকার্যে নামে এসডিআরএফ (SDRF)। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এনডিআরএফ (NDRF), সেনাবাহিনী ও আইটিবিপি (ITBP)-র জওয়ানরাও ঘটনাস্থানে পৌঁছে উদ্ধারকার্যে হাত লাগান।

আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর সকাল! শিশুর গোঙানি, রক্তে ভাসছে রাস্তা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ১৩ মৃতদেহ

প্রথম সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের উদ্ধারে তেমন সমস্যা না হলেও বেগ পেতে হয় দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে পৌঁছতে। কোনওমতে সুড়ঙ্গের মুখ খোলা সম্ভব হলেও সেখান থেকে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে জল। সাময়িকভাবে উদ্ধারকার্য বন্ধ হয়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে ড্রিল করে সুড়ঙ্গ ফুটো করা হয়। এনটিপিসির এক আধিকারিক জানান, ১২ মিটার গভীরতা অবধি ড্রিল করা সম্ভব হলেও তারপরের অংশটি কাদামাটিতে ভর্তি থাকায় ক্যামেরাও নামানো যাচ্ছে না। বর্তমানে ড্রিলের বদলে অপর একটি ভারী যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল সুড়ঙ্গের ভিতর থেকেই দুটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিপর্যয়ের সময় জলের গতিবেগ এতটাই বেশি ছিল যে মৃতদেহগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সুড়ঙ্গের মধ্যে যে ২৫-৩৫ জনের আটকে থাকার সম্ভাবনা, তাদের খোঁজে উদ্ধারকার্যে আরও গতি আনা হয়েছে। তবে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে ধৌলিগঙ্গা নদীই, কারণ সেখানের জল ক্রমাগত সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করায় পলিস্তরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিগত এক সপ্তাহে উদ্ধার হওয়া বাকি ৩৮টি মৃতদেহ ধৌলিগঙ্গা নদীর পাড়েই মিলেছিল। সেই কারণেই নদীতেও উদ্ধারকারী একটি দল পাঠানো হয়েছে। হড়পা বানে যে গ্রামগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য অস্থায়ী লোহার সেতুও ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে আইটিবিপির জওয়ানরা।

এদিকে, দেবভূমির উপরিভাগে হিমবাহের ঠিক নিচেই তৈরি হয়েছে একটি জলাশয়। যেকোনও মুহূর্তেই সেই জলাশয় ভেঙে পড়ে ফের হড়পা বান আসতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই এনডিআরএফ ও এসডিআরএফের একটি দলও সেই জায়গাটি পরিদর্শন করে এসেছেন। অধিকাংশ গ্রামবাসীই ফের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আপাতত জঙ্গলেই ঠাই নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘সকালেও জানতাম না যে বিকেলে ইস্তফা দেব’, মুখ খুললেন দীনেশ ত্রিবেদী

Next Article