জোশীমঠ: রবিবার সকালেই নন্দাদেবী হিমবাহের একটি অংশ ভেঙে পড়ে বিপর্যয় নেমে এসেছিল উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে। কেদারনাথের স্মৃতি উসকেই হড়পা বানে ভেসে গিয়েছিল অলকানন্দা নদীর আশেপাশে অবস্থিত একাধিক গ্রামের বাসিন্দা ও তপোবন বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মীরা। দুর্ঘটনায় প্রায় ২০০-রও বেশী মানুষ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম দিনে ১২জন উদ্ধার হলেও তারপর নিখোঁজ কারোরই খোঁজ মিলছিল না। তবে আশা ছাড়েননি উদ্ধারকারী দলগুলি। ফল মিলল ছয়দিন পরে। শুক্রবার চামোলির জেলাশাসক জানান, দুইজন ব্যক্তিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে নদীর পাড় থেকে উদ্ধার হল দুটি মৃতদেহও, এই নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৮-এ। এখনও নিখোঁজ ১৬৮ জন।
তপোবনের দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে জমে থাকা কাদামাটি ও ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকার্য চালাতে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় বুধবার মধ্যরাত থেকেই ড্রিল করে সুড়ঙ্গে ফুটো করার কাজ শুরু করে উদ্ধারকারী দলগুলি। কিন্তু গতকাল সকালেই সুড়ঙ্গ থেকে হুড়মুড়িয়ে জল বেরিয়ে আসতে শুরু হলে প্রায় একঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধারকার্য। নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়াতেও চিন্তা বাড়ে উদ্ধারকারী দলগুলির। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সীমিত সংখ্যক কর্মী নিয়ে উদ্ধারকার্য শুরু করা হয়। বিপর্যয়ের ছয়দিন পর শুক্রবার চামোলির জেলাশাসক স্বাতী ভাদোড়িয়া জানান, এখনও অবধি মোট ৩৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং জীবিত অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুলামের অবসরে রাজ্যসভায় নতুন মুখ মল্লিকার্জুন, ঘোষণা কংগ্রেসের
উদ্ধারকার্য নিয়ে এনডিআরএফের কমান্ড্যান্ট পি কে তিওয়ারি বলেন, “আমাদের কর্মীরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে লাগাতার তল্লাশি চালাচ্ছে। বিগত কয়েকদিনে নদীর পাড় থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় নদীতেও তল্লাশি চালাতে একটি দলকে পাঠানো হয়েছে। বাকি উদ্ধারকারী দলগুলিও দিনরাত এক করে উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে।”
এদিকে,হিমবাহের একাংশ ভেঙে পড়ায় রেনি গ্রামের কাছে একটি জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে। উপগ্রহ চিত্রেও ওই জলাশয়ের ছবি ধরা পড়েছে। যেকোনও সময়ে এই জলাশয় ভেঙে পড়তে পারে এবং সেখান থেকেই ফের হড়পা বান আসতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ডিআইজি বলেন, “তপোবনের রেনি গ্রামের কাছে একটি জায়গায় জল জমে থাকার খবর পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যেই এসডিআরএফের ৮ সদস্য দলকে ঘটনাস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। কর্মীদের থেকে সঠিক তথ্য পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
একই কথা বলেন উত্তরাখণ্ডের ডিজিপি অশোক কুমারও। তিনি জানান, রেনি গ্রামের উপর সৃষ্টি হওয়া ওই জলাশয় পরিদর্শনে এনডিআরএফ ও এসডিআরএফের দল পাঠানো হয়েছে। যে ২০৪ জন নিখোঁজ ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৩৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে দুটি মৃতদেহ নদীর পাড় থেকে এবং ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি ও মৈথানা থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ১৬৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। আজ তপোবনের যে সুড়ঙ্গে উদ্ধারকার্য চালানো হচ্ছিল, তারই ১২ মিটার নিচে অবস্থিত আরেকটি ছোট সুড়ঙ্গে ড্রিল করা শুরু হবে। আশা করা হচ্ছে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব মিলতে পারে।
আরও পড়ুন: ৫ লক্ষ টাকার বন্ডে জামিন পেলেন চন্দা কোছার