শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে TV9 নেটওয়ার্কের মেগা কনক্লেভ ‘হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে’-এর তৃতীয় সংস্করণ। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লির ভারত মণ্ডপমে এই দুই দিনের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টেয় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে মঞ্চ আলোকিত করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এছাড়াও রাজনীতিবিদ থেকে ক্রীড়া, সিনেমা এবং শিল্প জগতের সেলিব্রিটিরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন এবং নিজেদের মতামত ভাগ করে নিচ্ছেন। ‘হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে’-র যাবতীয় আপডেট দেখে নিন এক নজরে-
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, “অসমের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি মুসলমান। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অসমের ১৪টি আসনের মধ্যে ১১টি পেয়েছে বিজেপি। ৪০ শতাংশ মুসলিম থাকা সত্ত্বেও এত বড় জয় বিজেপির।” তারপরই তিনি বলেন, “যার যেখানে ইচ্ছে সেখানে ভোট দেবেন। আমার কাজ মাদ্রাসা বন্ধ করে ছেলেমেয়েদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানো। ভোট যাকে খুশি আপনি দিন।”
টিভি৯-র হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে গ্লোবাল সামিটে অংশ নেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মণিপুরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে WITT-র মঞ্চে তিনি মুখ খোলেন। বলেন, “কংগ্রেস বলে বেড়ায় মণিপুরের হিংসা ও সমস্যা গত ২ বছরের। ওরা ভুলে যায় যে এই সমস্যা বহু পুরনো। ১৯৬০ সাল থেকে সেখানে টেনশন রয়েছে। মাঝে মাঝে সেই টেনশন বেড়ে যায়। ওখানে তিনটি আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে। তাদের মধ্যে কখনও কখনও টেনশন বেড়ে যায়। ৭৫ বছর ধরে এই সমস্যা রয়েছে। কেন্দ্রের মোদী সরকার এই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছে।”
টিভি৯-র হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে গ্লোবাল সামিটে অংশ নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা। আর এই গ্লোবাল সামিটে তিনি জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা তিনি আগে জানতেন না। ২৭ বছর পর দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। প্রথমবার বিধায়ক হয়েই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন রেখা গুপ্তা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা কেউ আমাকে ফোন করে জানাননি। কেউ মেসেজও করেননি। সরাসরি আমার নাম ঘোষণা করা হয়।”
কিছুদিন আগেই উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা হয়েছে। ২০২৮ সালে মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনীতে সিংহস্ত মেলা হবে। মধ্য় প্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী মোহন যাদব বলেন, “মেলা সংস্কৃতি প্রাচীন পরম্পরা। মেলার অর্থ মিলন আর দেখাসাক্ষাৎ। ১২ বছর পর পর উজ্জয়িনীতে কুম্ভ পালন হয়। সিংহস্ত বলা হয়।” প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভের প্রশংসা করেন তিনি। ২০২৮ উজ্জয়িনীতেও কুম্ভমেলা অসাধারণ হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
টিভি৯-এর হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে গ্লোবাল সামিটে অংশ নেন মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। মুসলিম বিরোধিতার প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার অনেক মুসলিম বন্ধু রয়েছেন। হজ কমিটির অধ্যক্ষ আমার বন্ধু। এছাড়াও আরও মুসলিম বন্ধু রয়েছে। এইরকম কথা বলে তাঁদের মনে ঘৃণা কেন ছড়াচ্ছেন? আমরা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি।”
আর কয়েকমাস পর বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস একা লড়তে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এই নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “এর মানে কংগ্রেস মেনে নিচ্ছে INDI জোট ভেঙে গিয়েছে। আপনি দেখুন দিল্লির কত আসনে কংগ্রেসের জামানত জব্দ হয়েছে।”
টিভি৯-এর হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে গ্লোবাল সামিটে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি বলেন, “৫০-৬০ বছর দেশে কংগ্রেসের সরকার ছিল। ওইসময় দেশে প্রায় কিছুই হয়নি। যুব সমাজের জন্য কিছু করা হয়নি। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশে পরিবর্তন এসেছে। দেশের সর্বত্র মানুষ প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাজ পছন্দ করছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষে ভোট দেওয়ার এটাই কারণ।”
টিভি৯-র মহামঞ্চ হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে গ্লোবাল সামিটের সত্তা সম্মেলনে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। ‘এক দেশ, এক বিধান, নয়া হিন্দুস্তান’ ইস্যুতে নিজের মতামত রাখছেন তিনি।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী বলেন, “উত্তরাখণ্ডে আগে ৫ বছর অন্তর সরকার বদল হত। প্রথমবার উত্তরাখণ্ডের মানুষ সেই মিথ ভেঙেছেন। ফের বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছে রাজ্যের মানুষ।”
দিল্লিতে পালাবদলের পর আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবালকে সেভাবে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। এই নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মান বলেন, “দেশের এমন কোনও বিপক্ষ নেতা রয়েছেন যাঁকে দেখা যায়। লোকসভায় বিরোধী নেতা সবসময় ‘গায়েব’ থাকেন। কখনও তিনি ইট্যালি চলে যান। কখনও অন্য কোথাও। তাঁকে শুধু লঞ্চ করা হয়।”
সত্তা সম্মেলনে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পঞ্জাবে বুলডোজার অ্যাকশন জরুরি। পঞ্জাবে যারা ড্রাগ কারবারে যুক্ত, তাদের বাড়ি ভেঙে আমি ঠিক কাজ করছি। আদালতে অনেক মামলা বছরের পর বছর ধরে চলে। এমনকি, ২০ বছরও মামলা চলতে থাকে। শুধু আদালত নয়, সরকারও সিদ্ধান্ত নেয়।”
সত্তা সম্মেলনে ভগবন্ত মান বলেন, “আগে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে টিভি দেখত। এখন টিভিই পরিবার ভেঙে দিচ্ছে। যেরকম কনটেন্ট আসছে, তা হওয়া ঠিক নয়। নির্মাতাদের এরকম কনটেন্ট ব্যবহার করা ঠিক নয়।”
হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডের মঞ্চে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা ভগবন্ত মান। রাজনীতিতে আসার আগে একসময় কৌতুকশিল্পী ছিলেন পঞ্জাবের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সত্তা সম্মেলনে কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরাকে নিয়ে বিতর্কে তিনি বলেন, “কৌতুক এমন হওয়া দরকার, যাকে নিয়ে কৌতুক করা হচ্ছে, তিনিও যেন মজা পান। ব্যক্তিগত আক্রমণ করা ঠিক নয়।” একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, মানুষের এখন ধৈর্য কমে গিয়েছে। সামান্য কথাতেই ঝগড়া বেধে যায়।
নির্বাচনে আমি জাতপাত ইস্যুতে কথা বলি না: চিরাগ পাসোয়ান
TV9 নেটওয়ার্ক আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাহ পাসোয়ান। শনিবার এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাক্ষাৎকার পর্বে তিনি বলেন, ‘এখনকার নির্বাচনে জাতপাত যেন একটা বড় ইস্যু। কিন্তু আমার কাছে এর কোনও অর্থ নেই। আমার কাছে সবার আগে বিহার। আমি এই জাতপাত নিয়ে কথা কখনওই বলি না।’
শুধু কৃষিব্যবস্থা দিয়ে দুনিয়া চালানো সম্ভব নয়: ব্যবসায়ী অনিল আগরওয়াল
TV9 নেটওয়ার্ক আয়োজিত What India Thinks Today অনুষ্ঠানে এসে ‘ভেদান্ত রিসোর্স’-এর চেয়ারম্যান জানান, শুধু কৃষিব্যবস্থা দিয়ে দুনিয়া চালানো সম্ভব নয়। তাঁর দাবি, কারখানা ও পুঁজিভিত্তিক ব্যবসাতেও আমাদের ততটাই মন দিতে হবে। বর্তমানে ভারতীয়রাই গোটা বিশ্বটা চালাচ্ছে। প্রতিটি দেশ ঘুরে দেখুন, দু’জন করে ভারতীয় নেতা পেয়েই যাবেন। যারা কোনও বিরাট পদে বসে রয়েছেন।
নাড্ডার পর কার হাতে যাবে বিজেপির দায়িত্ব?
TV9 নেটওয়ার্ক আয়োজিত What India Thinks Today অনুষ্ঠানে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি জানাচ্ছেন, ৪০ বছর আগে মানুষ আমাদের একটা রাজনৈতিক দল বলেই মনে করত না। কিন্তু এখন আমরা ক্ষমতায় এসেছি। কংগ্রেসকে সরিয়েছি। আমাদের উত্থানে কোনও পারিবারিক হাত নেই। কর্মীরাই আমাদের বল। এমনকি ভগবানও জানেন না জে পি নাড্ডার পর কে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হবেন।
দক্ষিণে বাড়ছে হিন্দি ‘সাম্রাজ্যবাদ’? যুক্তি দিয়ে বাস্তব বোঝালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
দক্ষিণ ভারতের উপর হিন্দি চাপানো হচ্ছে? দেশের রাজনীতিতে নতুন করে মাথা চাড়া দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কখনওই বলেননি যে দক্ষিণীদের হিন্দি শিখতে হবে। যদি কেউ চান তিনি শিখতে পারেন। ডিএমকে নেতার ছেলেমেয়েরা দিল্লির স্কুলে পড়াশোনা করে হিন্দি শেখে। পাশাপাশি, তাদের রাজ্যের স্কুলগুলিতেও হিন্দি পড়ানো হয়, এদিকে তারাই আবার প্রতিবাদ চালায়।
প্রতিটা নির্বাচনে বিজেপির ‘ছক্কা’ হাঁকানোর কৌশল নিয়ে অকপট কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী
TV9 নেটওয়ার্কের What India Thinks Today অনুষ্ঠানে এসে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা নির্বাচনে বিজেপির ‘ছক্কা’ হাঁকানোর একমাত্র কৌশলই ছিল কঠোর পরিশ্রম। তার উপর ভর করেই এই তিন রাজ্যে জয় হাসিল করেছে পদ্ম শিবির।
ভারত ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাস করে। TV9 নেটওয়ার্কের সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ট্যারিফ সম্পর্কে বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। তিনি আরও উল্লেখ করেন, চারটি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে ভারত, যা নিয়ে কখনও প্রকাশ্য়ে বলা হয়নি।
“আমি জাতপাতের বিষের বিরুদ্ধে।” TV9 নেটওয়ার্কের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে এ কথা বললেন ধীরেন্দ্র শাস্ত্রী। তিনি জানান যে তিনি এর বিরুদ্ধে নন। তিনি বলেন, “আমি জাতিভেদের বিষের বিরুদ্ধে। আমরা যদি জাতপাতের বিরুদ্ধে হই, তাহলে দেশে দাঙ্গা হবে। সংরক্ষণ এবং পদবী নিয়ে দাঙ্গা হবে। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে।”
হোয়ায় ইন্ডিয়া থিংকস টুডে-র মঞ্চে বিশিষ্ট লেখক সুনীল আম্বেকর। ভাষা বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, “কারও কোনও ভাষা নিয়ে বিরোধ থাকার দরকার নেই। ভারতের ভাষাকে সম্মান করা উচিত। আমরা আমাদের নিজেদের ভাষাতেই সবচেয়ে বড় কাজগুলো করতে পারি। এর জন্য সরকার এবং সমাজের যথাসম্ভব প্রচেষ্টা থাকা উচিত।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আজ মানুষ মেড ইন ইন্ডিয়ার কথা বলছে। আগে বিশ্ব ভারতকে একটি বিশ্ববাজার বলত। বিশ্ব মঞ্চে ভারতের সম্ভাবনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। TV9-এর এই শীর্ষ সম্মেলনে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আজ আমরা যা ভাবি তা ভবিষ্যতের নকশা করবে। এই দশকে আমরা উন্নত ভারতের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি লালকেল্লা থেকে বলেছি যে, এতে সকলের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের মাধ্যমে TV9 একটি ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। ঐতিহ্য ভেঙে এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আমি TV9 কে অভিনন্দন জানাতে চাই। ভবিষ্যতে, অন্যান্য মিডিয়া হাউসগুলিকেও এটি করতে হবে। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে এত প্রতিভাবান মানুষদের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছি।”
কম সময়ে বেশি কাজ, কম অর্থ ব্যয়, অপচয় বন্ধ- যখন কোনও সরকার এই কাজ করে, তখন বুঝবেন সরকার নাগরিকদের সম্মান দিচ্ছে। আগে আমরা দেখেছি সরকার কীভাবে বেশি সংখ্যক মন্ত্রকে জায়গা দিত। আমরা অনেক মন্ত্রককে একত্রীভূত করেছি। আগে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা খুব সাধারণ ছিল। দশ কোটিরও বেশি ভুয়ো সুবিধাভোগী সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছিলেন। আমাদের সরকার করদাতাদের সম্মান করে। আমাদের সরকার নিয়ম কমিয়ে জনগণের জন্য কাজ সহজ করে তুলেছে। আগে প্রায় ১৫০০টি আইন ছিল, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। আমাদের সরকার এই আইনগুলি বাতিল করেছে। আজ আইটিআর ফাইল করা কতটা সহজ হয়েছে। আগে সিএ-দের সাহায্য নিতে হত। আজ আপনি নিজেই ITR ফাইল করতে পারেন। গত ১০ বছরে, ভারত প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়েছে। চিন্তাভাবনায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আগে বিদেশী পণ্যকে ভালো বলে মনে করা হত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন কোনও দেশ নিজেদের নাগরিকদের সুবিধা ও সময়কে গুরুত্ব দেয়, তখন দেশের সময়ও বদলায়। আগে পাসপোর্ট বানানো কত জটিল ছিল, ছোট শহরের লোকজনদের বড় শহরে আসতে হত। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আগে দেশে ৭৭টি পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র ছিল, আজ সেই সংখ্যা ৫৫০টিরও বেশি। পাসপোর্ট তৈরির ওয়েটিং টাইম ৫০ দিন থেকে কমিয়ে ৫ দিন করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে ৫০-৬০ বছর আগে ব্যাঙ্কের ন্যাশনালাইজ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সত্যিটা জানি। লক্ষাধিক গ্রামে ব্যাঙ্কের সুবিধাই ছিল না। আজ অনলাইন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা প্রতিটি বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়েছে। প্রতি ৫ কিমিতে ব্যাঙ্কিং টাচপয়েন্ট রয়েছে। শুধু পরিকাঠামোর উন্নয়নই নয়, সিস্টেমও মজবুত করা হয়েছে। ব্যাঙ্কিং প্রফিট ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি পার করেছে। যারা জনতাকে লুটেছে, তাদেরও চুরি করা অর্থ ফেরাতে হচ্ছে। ইডি ২২ হাজার কোটিরও বেশি অর্থ উসুল করেছে। নাগরিকদের কাছে সেই টাকা ফেরানো হচ্ছে।”
একবিংশ শতাব্দীর ২৫ বছর কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে ১১ বছর আমাদের সরকার দেশের সেবা করেছে। অতীতে কী হয়েছে, তা-ও দেখতে হবে। তবেই টিভি৯-র দর্শকরা জানবেন ভারত কীভাবে আত্মনির্ভরতার পথে এগোল। মনে করুন, এক দশক আগে গ্রামে যখন শৈচালয়ের কথা উঠত, তখন গ্রামের মা-বোনেদের কাছে রাতে ও ভোরবেলা ছাড়া কোনও উত্তর ছিল না, আজ সেই উত্তর মেলে স্বচ্ছ ভারত অভিযান থেকে। ২০১৩ সালের আগে চিকিৎসা ব্যয়বহুল ছিল, আজ তার উত্তর হল আয়ুষ্মান ভারত। ২০১৩ সালে গরিবের রান্নাঘর বললে ধোঁয়া আর উনুনের ছবি আসত, আজ তারই সমাধান হল উজ্জ্বলা যোজনা। মহিলাদের কাছে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট জানতে চাইলে তারা চুপ থাকতেন। আজ জনধন যোজনার কারণে ৩০ কোটি বোনের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ২০১৩ সালেও জলের জন্য কুয়ো বা পুকুরে যেতে হত। আজ তার সমাধান হল হর ঘর নল যোজনা। মানুষের জীবন বদলাচ্ছে। বিশ্বও এটার নোট রাখছে। ভারতের উন্নয়ন মডেলকে গ্রহণ করছে।
বিগত কিছু সময় ধরে বিশ্ববাজারে অস্থিরতার মুখে পড়েছে। এর জন্যও ভারত নতুন উদ্য়োগ শুরু করেছে। ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট করিডর এমনই এক উদ্যোগ, যা এশিয়ার সঙ্গে মধ্য প্রাচ্যকে জুড়বে। এতে আর্থিক সম্ভাবনা তো বাড়বেই, বিশ্বের কাছে বাণিজ্যের বিকল্প রুট খুলে যাবে। এতে গ্লোবাল ট্রেড চেইন আরও মজবুত হবে। গ্লোবাল সিস্টেমকে আরও মুক্ত করার জন্য ভারত একাধিক পদক্ষেপ করেছে। ভারত মণ্ডপমেই জি২০ সামিট হয়েছিল। ভারত আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০-র স্থায়ী সদস্য করা হয়েছে। এটা বড় পদক্ষেপ ছিল। দীর্ঘদিনের এই দাবি ভারত পূরণ করেছে। ভারত গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠ হয়ে উঠেছে। ভারতের প্রচেষ্টা বিশ্বে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। এটা তো সবে শুরু।
যখনই কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়, তখন পরিকাঠামোয় প্রভাব পড়ে। আজকেই মায়ানমারে ভূমিকম্প হয়েছে। বড় বড় বাড়ি ভেঙে পড়েছে, ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। এই জন্য ভারত কলিসন ফর ডিজাস্টার রেসিস্টেন্স ইনফ্রাস্টাকচার নামে বৈশ্বিক সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের প্রচেষ্টা হল প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে পরিকাঠামোকে সুরক্ষিত রাখা। সব দেশের একসঙ্গে মিলে কাজ করা দরকার। আমাদের শক্তির প্রয়োজন। বিশ্বের কথা চিন্তা করেই ভারত ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স তৈরি করেছে, যাতে ছোট ছোট দেশও উপকৃত হবে। এতে জলবায়ুর উপরে ইতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই, পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথের চাহিদাও পূরণ করবে। ভারতের এই উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ১০০টিরও বেশি দেশ সামিল হয়েছে।
আজ ভারত শুধু অংশগ্রহণই করছে না, ভবিষ্যতকে বদলাতে সাহায্য করছে। করোনাকালে গোটা বিশ্ব ভেবেছিল, ভারতের সকল নাগরিকের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছতেই কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। ভারত সকলকে ভুল প্রমাণ করেছে। আমরা নিজেদের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি করেছি। বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে ভ্যাকসিন ও ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্ব যখন সঙ্কটে ছিল, তখন ভারতের সংস্কার ও আচরণ দেখেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কিছু দেশেরই মনোপলি চলত। ভারত মানবতাকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ভারত একবিংশ শতাব্দীর গঠনের রাস্তা তৈরি করেছে, সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে।
আজ বিশ্বের সবথেকে বড় যুবশক্তি ভারতে রয়েছে। এই যুবরা দক্ষ হচ্ছে, উদ্ভাবনকে গতি দিচ্ছে। বিদেশনীতি মন্ত্র হয়ে গিয়েছে, ইন্ডিয়া ফার্স্ট। এক যুগে ভারতের নীতি ছিল, সকলের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। আজকের ভারতের নীতি হল, সকলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সম্পর্ক তৈরি করে চলো। ভারতের উদ্ভাবন, প্রচেষ্টা আজ যে গুরুত্ব পাচ্ছে, তা আগে কখনও পায়নি। আজ বিশ্ব জানতে চায়, হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে।
আজ বিশ্বের নজর ভারতের উপরে রয়েছে। বিশ্বের যে দেশেই যান না কেন, সেখানের মানুষের ভারত নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সকলের মনে প্রশ্ন যে কী এমন হল যে ৭০ বছরে ১১ তম অর্থনীতিতে পৌছেছিল, তা ৭-৮ বছরে পঞ্চম অর্থনীতিতে পরিণত হল। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের একমাত্র বড় অর্থনীতি যা ১০ বছরে জিডিপি দ্বিগুণ করেছে। গত দশকে ভারত ২ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতিতে যোগ করেছে। ডিজিপি দ্বিগুণ হওয়া শুধু পরিসংখ্যানের বদল নয়, ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ৩০ কোটি মানুষ নিও-মিডলমক্লাসের অংশ হয়েছেন। নিও-মিডলক্লাস নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে, অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই বলেন, রামেশ্বর গাড়ুজি, রামুজি, বরুণ দাসজি ও টিভি৯-র পুরো টিম এবং নেটওয়ার্কের সকল দর্শকদের অভিনন্দন জানাই। টিভি৯ নেটওয়ার্কের বিরাট দর্শক রয়েছে। এখন তো গ্লোবাল দর্শকও রয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও এসেছেন। আমি সকলকে অভিনন্দন জানাই।
মাই হোম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান রামু রাও বলেন, “হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডের তৃতীয় সংস্করণে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি ধন্য। যুদ্ধ কোনও অপশন নয়, আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গি আজ বিশ্বজুড়ে গৃহীত। ভারত আজ পৃথিবীর অর্থনীতির চালক হয়ে উঠেছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কও বলেছে আগামী দুই অর্থবর্ষে ভারত সবথেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনীতি হবে। আইএমএফ-ও একই কথা বলেছে। প্রধানমন্ত্রী যে নীতিগুলি বাস্তবায়ন করেছেন, তার সূত্র ধরেই ভারত মজবুত অর্থনীতিতে পরিণত হচ্ছে। গতিশক্তি স্কিমের অধীনে পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মতো উদ্যোগ উৎপাদন, ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনছে। আমার মতো লক্ষাধিক মানুষ স্কিলের উন্নয়ন ও এগিয়ে চলার মন্ত্র নিয়ে এগোচ্ছি। মাই হোম গ্রুপেরও মন্ত্র হল নিজেদের পাশাপাশি দেশের গঠন ও উন্নয়ন। আমি আমার বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী স্যর, আপনার দেশের উপরে এবং আমাদের মতো উদ্যোগপতিদের উপরে বিশ্বাস রাখা কারণেই আজ এই সাফল্য। আপনার জন্যই আজ ভারত স্থিতাবস্থা, উন্নয়ন ও ইক্যুয়িটিতে বিশ্বাসী।”
হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে-র কনক্লেভে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাকে সম্মান জানালেন মাই হোম গ্রুপের প্রধান।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে রাজনীতিক থেকে শিল্প জগতের বড় বড় মুখ উপস্থিত থাকবেন। আলোচনায় অংশ নেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, নির্মলা সীতারামন, অশ্বিনী বৈষ্ণব, চিরাগ পাসওয়ান। এছা়ড়া ভূপেন্দ্র যাদব, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, ভগবন্ত মান, মনোহর লাল খট্টর, মোহন যাদব, স্মৃতি ইরানি, তেজস্বী যাদবও থাকবেন।
পাকিস্তান ও কানাডায় ভারতের হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়া, ভেনদাতার প্রতিষ্ঠাতা অনিল আগরওয়াল, মারুতি সুজুকির এগজেকিউটিভ ডিরেক্টর রাহুল ভারতী, মাইক্রোসফ্ট ইন্ডিয়ার এগজেকিউটিভ ডিরেক্টর, যশোদা গ্রুপ অব হসপিটালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উপাসনা অরোরা প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে কনক্লেভ। অনুষ্ঠানটি শুরু হবে টিভি৯ নেটওয়ার্কের এমডি ও সিইও বরুণ দাসের উদ্বোধনী বক্তৃতার মাধ্যমে। এর পরে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।