নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (২৫ জুন), তাঁর জীবনের প্রথম সাংবিধানিক পদ গ্রহণ করেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁকেই বিরোধী দলনেতা নির্বাচন করেছে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোট। ফলে, ১৯৭৭ সালের সংসদীয় আইন অনুসারে, বেতন ও ভাতার পাশাপাশি, বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও পাবেন তিনি। নিয়ম অনুসারে, বিরোধী দলনেতা, ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান মর্যাদা পান। তিনি বসেন লোকসভার অধ্যক্ষের চেয়ারের বাঁদিকের একেবারে সামনের সারিতে। এই সাংবিধানিক পদ কিন্তু, রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে তাঁর সম্পর্কে বিজেপি নেতারা কটাক্ষ করেছেন, রাহুল গান্ধী কে? তিনি বিরোধী দলনেতাও নন, কংগ্রেসের সভাপতিও নন। তাহলে তাঁর কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে কেন? বিরোধী দলনেতা হয়ে যাওয়ার পর কিন্তু আর এতটা হেলাফেলা করা যাবে না।
রাহুল গান্ধী পাঁচবারের লোকসভা সাংসদ। তিনি প্রথম সাংসদ হয়েছিলেন ২০০৪ সালে। আমেঠি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত তিনি শুধুমাত্র একবারই নির্বাচনে হেরেছেন। সেটিও আমেঠি থেকেই। ২০১৯ সালে তাঁকে পরাজিত করেছিলেন স্মৃতি ইরানি। তবে, ওই একই বছরে তিনি কেরলের ওয়ায়নাড় আসন থেকে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছিলেন। ২০২৩-এ এক মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে, কয়েকদিনের জন্য সাংসদ পদ খুইয়েছিলেন তিনি। পরে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁর সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদেও ছিলেন। বর্তমানে, তিনি যুব কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন। এইবারের নির্বাচনে তিনি ওয়ায়নাড় এবং এখন রায়বরেলি থেকে ভোটে জিতেছেন।
তবে, সাংবিধানিক পদ তিনি এর আগে কখনই গ্রহণ করেননি। ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিল ইউপিএ জোট। সেই সময় চাইলেই কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদ পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু, সেই দায়িত্ব নেননি। তাই, তিনি প্রশাসক হিসেবে কেমন, তা জানার বা দেখার সুযোগই হয়নি ভারতের মানুষের। তাই, প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে অনেকেই এখনও তাঁর উপর ভরসা রাখতে পারেন না। এবার মন্ত্রী না হলেও, বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব গ্রহণ, তাঁর অন্য দিক তুলে ধরতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গান্ধী পরিবার থেকে এর আগেও দুই ব্যক্তি এই পদে ছিলেন। রাহুল গান্ধীর বাবা রাজীব গান্ধী, ১৯৮৯-৯০ সালে এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাহুলের মা সনিয়া গান্ধী, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদে ছিলেন। এবার দেখে নেওয়া যাক, বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীর হাতে কী কী ক্ষমতা থাকবে?
১০ বছর পর ফের ভারতীয় লোকসভায় দেখা যাবে প্রথম বিরোধী দলনেতাকে। এবার কিন্তু তার সমর্থন ছাড়া মোদী সরকারের পক্ষে একতরফা কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হবে। আগেই বলা হয়েছে, বিরোধী দলনেতা একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান মর্যাদা, বেতন এবং ভাতা পান। সেই হিসেবে রাহুল গান্ধীর বেতন হবে ৩.৩ লক্ষ টাকা। ক্যাবিনেট মন্ত্রী পর্যায়ের নিরাপত্তাও পাবেন তিনি। অর্থাৎ, জ়েড প্লাস (Z+) ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাবেন তিনি। ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের মতো সরকারি বাংলোও পাবেন তিনি। সেই সঙ্গে, তিনি থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং দুই নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন বাছাইয়ের তিন সদস্যের প্যানেলেও। তবে, এখানে তিনি থাকবেন সংখ্যালঘু হিসেবে। কারণ, তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়া, এই প্যানেলে থাকবেন আরও একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবে লোকসভায় এবার বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায়, রাহুল গান্ধীর উপর কোনও সিদ্ধান্ত ‘চাপিয়ে’ দেওয়া কঠিন হবে।
সিবিআই, ইডি বা সিভিসির মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির প্রধানদের বাছাই করার কমিটিরও সদস্য হবেন রাহুল গান্ধী। এই কমিটিগুলি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাহুলের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা থাকবে। তিন সদস্যের এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আর তৃতীয় সদস্য হিসেবে থাকবেন ভারতের প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম কোর্টের কোনও একজন বিচারপতি। এটা বিরোধী পক্ষের জন্য বড় উত্সাহদায়ক হতে পারে। বিরোধীরা বারবারই অভিযোগ করেন, বিরোধী নেতাদের নিশানা করতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে অপব্যবহার করে মোদী সরকার।