অযোধ্যা: আর মাত্র দুদিন, তারপরই প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে অযোধ্যার রাম মন্দিরের। আর এর মধ্য দিয়ে ৫০০ বছরের পুরোনো ব্রত ভাঙবেন সূর্যবংশী ঠাকুররা। মূলত অযোধ্যার সরাইরাসি গ্রামে থাকে এই সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রায় ৫০০ বছর ধরে তাঁরা পাগড়ি পরেননি। রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আগে ফের পাগড়ি পরার সুযোগ এসেছে তাঁদের কাছে। আসলে, প্রায় ৫০০ বছর আগে তাঁদের পূর্বপুরুষরা শপথ নিয়েছিলেন, রাম মন্দিরের পুনর্নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আর পাগড়ি পরবেন না। অবশেষে তাঁদের সেই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতে চলেছে। আর তাই অবশেষে ব্রত ভাঙলেন তাঁরা।
কারা এই সূর্যবংশী ঠাকুর? রাজপুত সম্প্রদায়ের একটা অংশ হলেন এই সূর্যবংশী ঠাকুররা। রাজপুতদের মধ্যে তিনটি ভাগ আছে – চন্দ্রবংশী, সূর্যবংশী, অগ্নিকূল প্রমুখ। চন্দ্রবংশীরা হলেন মহাভারতের নায়ক, কৃষ্ণের বংশধর। অগ্নিকুল হল অগ্নিদেবের পরিবার। আর সূর্যবংশীরা নিজেদের রামের বংশধর বলে দাবি করেন। অযোধ্যা অত্যন্ত প্রাচীন শহর। এই শহর রামের জন্মস্থান বলে বিশ্বাস করেন একাংশের হিন্দুরা। রামের বাবা রাজা দশরথের কোশল রাজ্যের রাজধানী ছিল অযোধ্যা। খ্রিস্টীয় একাদশ এবং দ্বাদশ শতকে অযোধ্যাতেই কনৌজ রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল। অযোধ্যাকে তখন বলা হত আওধ। এরপর, দিল্লির সুলতানশাহি, জৌনপুর রাজ্য এবং অবশেষে ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় অযোধ্যা।
#WATCH | Uttar Pradesh: People from the ‘Suryavanshi Thakur’ community in Sarairasi village of Ayodhya wear turbans after almost 500 years, ahead of Ram Temple’s ‘pranpratishtha’. The community had taken an oath that they would not wear a turban till the temple was reconstructed… pic.twitter.com/9QZckTGbEk
— ANI (@ANI) January 18, 2024
সম্রাট বাবরের বাহিনী যখন উত্তর ভারতে হামলা চালিয়েছিল, রাজপুতরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। বাবর বাহিনীকে কড়া প্রতিরোধের মুখে ফেলেছিল তারা। তবে ১৫২৮ সালে, বাবরের সেনাপতি মীর বাকি অযোধ্যার রাম মন্দির ধ্বংস করে, সেখানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে দাবি করেন সূর্যবংশীরা। কথিত আছে, সেই সময়ই সূর্যবংশী ঠাকুররা শপথ নিয়েছিলেন, সেখানে ফের রামমন্দির না হওয়া পর্যন্ত, তাঁরা আর পাগড়ি পরবেন না। এই পাগড়ি ছিল তাঁদের গৌরব এবং সম্মানের প্রতীক। কিন্তু রাম মন্দির তার হৃত গৌরব ফিরে না পেলে, তাঁরাও তাঁদের সেই গর্বের পরিধান ধারণ করবেন না বলে ঠিক করেছিলেন।
১৯৯২ সালে করসেবকরা হামলা চালিয়ে ভেঙে দিয়েছিল বাবরি মসজিদ। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ওই জায়গায় একটি রাম মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেয়। ২০২৩-এ সেই রাম মন্দিরের গর্ভগৃহ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। মন্দির পুরোটা তৈরি হতে এখনও অনেকটাই বাকি। কিন্তু তার আগেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে রাম মন্দিরের, বাবরি মসজিদ নির্মাণের ৫০০ বছর পর। আর তাই, রামের বংশধর বলে দাবি করা সূর্যবংশী ঠাকুররা ফের পাগড়ি পরা শুরু করছেন।রাম মন্দির নির্মাণের ব্রত যে পূর্ণ হয়েছে।