নয়া দিল্লি: দ্বিতীয় ঢেউয়ের বীভিষিকার কথা এখনও সবার মনে স্পষ্ট। চারিদিকে প্রাণবায়ুর হাহাকার। হাসপাতালে বেড নেই। বেড পেলেও অক্সিজেন নেই। কোথাও এক ঘণ্টা, কোথাও বা তারও কম সময়ের জন্য অক্সিজেন বাকি। সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা ফের একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি। ভারতের করোনার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন (WHO Chief Sciecntist Soumya Swaminathan) উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ওমিক্রনের (Omicron cases in India) সংকটের মধ্যে ভারত সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে তা হল হঠাৎ করে চিকিৎসা পরিষেবার উপর অনেকটা চাপ বেড়ে যেতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন ইতিমধ্য়েই দাঁত-নখ বের করতে শুরু করেছে। ওমিক্রনের ব্যাপকতা প্রসঙ্গে স্বামীনাথন বলেন, “ওমিক্রনের সংক্রমিতের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়তে চলেছে এবং অনেক লোক অসুস্থ হতে পারেন।”
ওমিক্রন প্রাদুর্ভাব ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে। হাসপাতাল থেকে বহির্বিভাগে, আইসিইউ থেকে হোম আইসোলেশন সব ক্ষেত্রেই চাপ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন সৌম্যা স্বামীনাথন। তিনি বলেন, “মানুষ উদ্বিগ্ন। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যদি কোনও উপসর্গ নাও থাকতে পারে, তাও তাঁরা একজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইবেন, তাঁরা একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে সঙ্গে দেখা করে তাঁর পরামর্শ চাইবেন। আর এর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
পরিস্থিতি মোকাবিলায় টেলিকনসাল্টেশন পরিষেবার উপর আরও জোর দেওয়ার কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। তাঁর মতে, “হয়তো, এই সময়টি সত্যিই টেলিহেলথ এবং টেলিমেডিসিন পরিষেবাগুলিকে বাড়িয়ে তোলার সময় এসেছে।” বহির্বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সদের প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। যতটা সম্ভব বাড়িতে থেকে বা প্রাথমিকভাবে কোনও কোয়ারান্টিন সেন্টারগুলিতে চিকিৎসা করা যেতে পারে, তার দিকে জোর দিতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি আরও উন্নত পরিষেবার প্রয়োজন হয় তাহলে হাসপাতালে ভর্তির কথা বলা হয়েছে।
সৌম্যা স্বামীনাথনের মতে, “এই ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর পুরো চাপটা পড়বে বহির্বিভাগ এবং হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের নিয়ে। আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চাপটা অনেকটা কম পড়বে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর।”
এদিকে ভারতে ফের একবার ঊর্ধ্বমুখী করোনা গ্রাফ। পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক সূত্র শুক্রবার জানিয়েছে, ওমিক্রন ইতিমধ্যেই ভারতে ‘ডমিনেন্ট’ ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে উঠে আসতে শুরু করেছে এবং পূর্ববর্তী ডেল্টা স্ট্রেনকে সরিয়ে দিচ্ছে সেই জায়গা থেকে। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখনও বেশিরভাগ দেশে সবচেয়ে ডমিনেন্ট স্ট্রেন হিসেবে রয়েছে। কিন্তু ওমিক্রন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে এবং অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেনে ডমিনেন্ট স্ট্রেন হিসেবে উঠে এসেছে। এমনকী ভারতেও ডেল্টাকে সরিয়ে ওমিক্রনের উপরে উঠে আসার সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।