রায়পুর: কোনও স্ত্রীকে তাঁর স্বামী ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা বাঁধা শ্রমিক বলে বিবেচনা করতে পারেন না। কোনও মহিলাকে জোর করে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে থাকতে বাধ্য করাও যায় না। বিশেষ করে সেখান থেকে যদি তাঁকে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়। সম্প্রতি, এমনই পর্যবেক্ষণ করেছে ছত্তীসগড় হাইকোর্ট। এক পারিবারিক আদালতের বিবাহবিচ্ছেদের রায়কে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন স্ত্রী। সেই মামলার রায়দানের সময়ই এই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছে, বিচারপতি গৌতম ভাদুড়ি এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমার জয়সওয়ালের বেঞ্চ।
বেঞ্চ বলেছে, “স্ত্রী কোনও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা বাঁধা শ্রমিক নন, যে তাঁকে স্বামীর শর্ত মেনে থাকতে হবে। স্ত্রী যদি প্রাণ নাশের হুমকি পান এবং তিনি যদি এমন হুমকি বা অস্বাভাবিক শর্ত মেনে থাকতে না চান, তাহলে তাঁকে জোর করে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে বাধ্য করা যায় না। আমরা তাঁর চরম ক্ষতি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করব, এটা প্রত্যাশিত নয়।”
বিবদমান দম্পতির বিয়ে হয়েছিল ২০১৫ সালের ৫ জুন। ব্যক্তিগত মতপার্থক্যের কারণে বছর না গড়াতেই, ২০১৬-র ২৭ মে তাঁরা আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। স্বামীর অভিযোগ, তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে নারাজ স্ত্রী। রায়পুরে তাঁদের বাড়িতে তাঁর বাবা-মায়ের আসায় আপত্তি ছিল তাঁর। তিনি বলতেন, তাদের বাড়িটা কোনও ধর্মশালা নয়, যে কেউ যখন তখন এসে হাজির হবে। অন্যদিকে স্ত্রীর দাবি, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর কাছে যৌতুক দাবি করে। এর জন্য তাঁর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। নির্যাতন করা হয়। তাঁকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছেন তাঁর স্বামী। এই কারণেই তিনি তাঁর সঙ্গে এক ছাদের নীচে থাকতে নারাজ।
স্ত্রী সবসময় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে, এই অভিযোগ করে পারিবারিক আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন স্বামী। তাদের মতবিরোধ মেটাতে ব্যর্থ হয়ে, স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মেনে নিয়ে একটি ডিক্রি জারি করেছিল পারিবারিক আদালত। সেই বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি বাতিল করতে, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্ত্রী।
হাইকোর্ট জানিয়েছে, স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং সেই কারণেই তিনি শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন স্ত্রী। অপরদিকে, তাঁর স্ত্রী তাঁর বাবা-মাকে সম্মান করে না, বা তাঁকে তাঁর বাবা-মাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন, এই অভিযোগের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি স্বামী। তাছাড়া, স্ত্রীই যে তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন, তারও উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেননি স্বামী। এই কারণে, পারিবারিক আদালতের জারি করা বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।