Yasin Malik : কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরে আতঙ্ক ছড়িয়ে শেষ জীবন কাটবে কুঠুরিতে! কে এই ইয়াসিন মালিক?

Yasin Malik : শ্রীনগরে শিশু বয়সে নিরাপত্তা বাহিনী ও ট্যাক্সি চালকের মধ্যে কথা কাটাকাটি দেখে বিচ্ছিন্নতাবাদের পথে হাঁটা শুরু করে। তারপর একের পর এক বিষয়ে উপত্যকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে কুখ্যাত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক।

Yasin Malik : কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরে আতঙ্ক ছড়িয়ে শেষ জীবন কাটবে কুঠুরিতে! কে এই ইয়াসিন মালিক?
ছবি সৌজন্যে : PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 25, 2022 | 11:31 PM

নয়া দিল্লি : সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় গত ১৯ মে দিল্লির এনআইএ আদালেত দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল ইয়াসিন মালিক। বুধবার তার সাজা শোনানো হল। দিল্লির আদালত এদিন ইয়াসিন মালিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। সেই সঙ্গে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ট্যাক্সি চালকের কথা কাটাকাটি দেখে সন্ত্রাসবাদের জন্ম তার মনে। তারপর জীবন জুড়ে একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলায় নাম জড়ায়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মেয়েকে অপহরণ থেকে শুরু করে ১৯৯০ সালের বায়ুসেনার আধিকারিকদের উপর হামলা। জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। অবশেষে স্থান হল কারাগারের অন্ধকারের কুঠুরিতে।

কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন

ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে আজ অবধি বহু সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯৯ থেকে শুরু করে ২০২২। প্রায় দুই যুগ ধরে বিভিন্ন অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক। একাধিকবার পুলিশের হেফাজতেও গিয়েছে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা। কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছিল ইয়াসিন। জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা ইয়াসিন মালিক। কাশ্মীর উপত্য়কায় সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল এই সংগঠনের হাত ধরে। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে নাম জড়ানো, তার জন্য তহবিল সংগ্রহ এরকম একাধিক অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। ইউএপিএ (Unlawful Activities Prevention Act) -র বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত হয় ইয়াসিনের। সম্প্রতি ১০ মে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মেনে নেয় কাশ্মীরের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা। তারপর ১৯ মে দিল্লির এনআইএ আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে।

তালা পার্টি ও ইসলামিক সুডেন্টস লিগ

১৯৬৬ সালে শ্রীনগরে জন্ম হয় ইয়াসিনের। তার অভিযোগ কাশ্মীরিদের উপর অত্যাচার করে এসেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ১৯৮০ সালে এক সেনা ও ট্য়াক্সি চালকের মধ্যে কথা কাটাকাটি দেখার পরই তার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের জন্ম হয়। শুরু হয় তালা পার্টি। কাশ্মীরের শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ম্য়াচের ঘটনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় নাম জড়ায় তার দলের। এছাড়াও শ্রীনগরে ন্য়াশনাল কনফারেন্সে বিশৃঙ্খলা তৈরি, মাকবুল ভাটের ফাঁসির প্রতিবাদের পিছনে ছিল ইয়াসিন মালিকের দল। এই ঘটনায় চার মাস তাকে হাজতে কাটাতে হয়েছে। ১৯৮৬ সালে তালা পার্টির নাম হয় ইসলামিক সুডেন্টস লিগ।

ইয়াসিনের রাজনৈতিক জীবন

দ্য ইসলামিক স্টুডেন্টস লিগ সংবিধানে বিশ্বাস করে না। তাই ১৯৮৭ সালের বিধানসভা নির্বাচেন ইয়াসিনের দল মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্টের (MUF) সঙ্গে জোট বাঁধলেও ভোটে লড়েনি। কিন্তু MUF এর হয়ে শ্রীনগর বিধানসভায় প্রচার করেছিল ইয়াসিন।

ইয়াসিনের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়েছিল ইয়াসিন মালিক। সেখানে শিবির থেকে জঙ্গি কার্যকলাপে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে। ১৯৮৯ সালে উপত্যকায় ফিরে এসে জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের একজন সদস্য় হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করে। একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা করে এই গোষ্ঠী। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদের মেয়ে রুবিয়া সইদকে অপহরণ করে এই গোষ্ঠীর কোর গ্রুপ, হাজি। এই অপহরণের মাধ্যমে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে তারা গান্ধীর দেখানো অহিংস নীতি বেছে নিয়েছিল বলেই দাবি ইয়াসিনের। যদিও এদিন দিল্লি আদালতে ইয়াসিনের এই দাবিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরের ‘সত্যিকারের প্রতিনিধিদের’ নিয়ে একটি ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ বেছে নেওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছিল ইয়াসিন। কিন্তু ভারত সরকারের কাছে তা গ্রহণযোগ্য ছিল না। ১৯৯৫ সালে উপত্য়কায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রতিবাদ করেছিল সে। এমনকী আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিল। সে দাবি করেছিল, ভারত সরকার গণতন্ত্রের জিগির তুলে কাশ্মীরিদের উপর এই নির্বাচন প্রক্রিয়া চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

ইয়াসিনের জীবনের বড় হামলার ঘটনা :

১৯৯০ সালের হামলা 

১৯৯০ সালের ২৫ জানুয়ারি শ্রীনগরের রাওয়ালপোরাতে ৪০ জন বায়ুসেনা আধিকারিকদের উপর হামলা করেছিল ইয়াসিন মালিক ও তার ৬ সঙ্গী। সেই হামলায় শহিদ হয়েছিলেন ৪ জন বায়ুসেনা আধিকারিক। ২০২০ সালের মার্চ মাসে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইনে [Terrorist and Disruptive Activities (Prevention) Act (TADA)] মামলা করা হয়।

২০১৭ সালের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে আর্থিক সাহায্য়ের মামলা

২০১৭ সালে ন্য়াশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে তহবিল সংগ্রহের জন্য একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ২০১৯ সালে চার্জশিটে নাম ওঠে ইয়াসিন মালিক ও চারজনের। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য পাকিস্তান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা। ২০১০ ও ২০১৬ সালে কাশ্মীরে অশান্তির সময় ঢিল ছোঁড়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালের মার্চে দিল্লি কোর্টে ইয়াসিন মালিক ও অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউপিএ তে মামলা হয়।