কলকাতা : গুলাবের দাপট সেভাবে দেখতে হয়নি। কিন্তু আবারও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আর এরই মধ্যে সবরকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকছে রাজ্য প্রশাসন। কলকাতা পৌরনিগম সহ ১৪ টি জেলাকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আজ রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে আট দফা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্লক ও পৌরসভায় খুলতে হবে কন্ট্রোল রুম। নিচু অঞ্চলগুলিতে জরুরিকালীন ভিত্তিতে এলাকাবাসীদের অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
স্কুল-কলেজ এবং সাইক্লোন শেল্টারগুলিকে প্রস্তুত রাখতে হবে। চিড়ে,গুঁড় বেবি ফুড এবং জল সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। জেলাগুলি ফেরি সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করবে। শহরের অঞ্চলগুলিতে পাম্প প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে জল জমার সঙ্গে সঙ্গে তা বের করা যায়। একইসঙ্গে দুর্যোগ আসার আগে রাস্তার আলো এবং ডিস্ট্রিবিউশন বক্সগুলিকে ঢেকে ফেলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে বলা হয়েছে, ২৮ সেপ্টেম্বর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে দুই মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম ও উত্তর ২৪ পরগনায় দু’এক জায়গায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বরও একইরকমভাবে বৃষ্টি জারি থাকবে।
উপকূলের জেলাগুলিতে বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে হাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে। ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়া হাওয়া বইতে পারে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। ওই সময় সমুদ্র থেকে দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে আবহাওয়া দফতর থেকে। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৎসজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
কলকাতার নিচু জায়গাগুলিতে আবারও জলযন্ত্রণার শিকার হতে পারেন আমজনতা। আর এরই মধ্যে দুর্যোগের আগে নিজেদের সবরকমভাবে প্রস্তুত রাখতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন।
সম্প্রতি এক নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে তীব্র জলযন্ত্রণার শিকার হয়েছিল কলকাতা ও শহরতলি। নিম্নচাপের কারণে জেলায় জেলায় অতিবৃষ্টির ফলে বেশ কয়েকটি জেলা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। নবান্নের রিপোর্ট বলছে, জলের জেরে বিপাকে পড়া মানুষদের জন্য মোট ৫৭৭ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। সেই ত্রাণ শিবিরগুলিকে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় ৮০ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন। বিপজ্জনক এলাকা থেকে ১ লক্ষ ৪১ হাজার মানুষকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
জেলায় জেলায় অতিবর্ষণের জেরে গত ১৪ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ১৪ জনের মধ্যে ৮ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে জলে ডুবে, বাকি ৬ জনের মৃত্যু হরয়েছে দেওয়াল ভেঙে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। জলে ডুবে মৃতদের মধ্যে ৭ জন পশ্চিম মেদিনীপুর এবং একজন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা বলে খবর। আগের ঘটনার কথা মাথায় রেখে এবার নবান্ন আগে থেকে তৈরি থাকছে সবরকম প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য।
আরও পড়ুন : Weather Update: আরও এক ঘূর্ণাবর্ত! মঙ্গল-বুধ ভারী বৃষ্টি, বৃহস্পতিতে ভাসবে কি ভবানীপুর?