সুজয় পাল: শুক্রবার সন্ধ্যা তখন পৌনে ছ’টা হবে। শোভাবাজার ক্রসিংয়ে এসে দাঁড়াল বিবাদীবাগ- শ্যামবাজার রুটের একটি বাস (Bus)। হঠাৎ বাস থেকে নেমে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্টের কাছে ছুটে এলেন কন্ডাক্টর। রীতিমতো হাঁপাচ্ছেন তিনি। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। এক নিঃশ্বাসে বললেন, “স্যার বাসের ভিতর একজন বয়স্ক লোক অসুস্থ হয়ে গেছে। কিছু একটা ব্যবস্থা করুন। নাহলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।” ব্যাস ওইটুকুই। মাত্র পাঁচ মিনিটে শোভাবাজার থেকে আরজিজীবন বাঁচালেন ট্র্যাফিক সার্জেন্ট কর হাসপাতালে পৌঁছল যাত্রীসমেত বাস। কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন পেশায় জীবনবিমা এজেন্ট ওই যাত্রীর।
পরিস্থিতি বুঝে সময় ব্যয় না করে জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট দীপক বৈরাগী সরাসরি যোগাযোগ করেন লালবাজার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে। জানান, আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গ্রিন করিডোর করে যত দ্রুত সম্ভব অসুস্থ যাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ট্র্যাফিক কন্ট্রোল-ও পরিস্থিতি বুঝে গ্রিন সিগনাল দেন। অনুমতি পেতেই ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বাস চালককে নির্দেশ দিলেন আরজিকর হাসপাতালের দিকে বাস ছোটাতে। নিজের বাইক নিয়ে বাস এসকর্ট করতে করতে ছুটছেন ওই ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। গ্রিন করিডোর করার অনুমতি মেলায় জোড়াবাগান ট্রাফিক গার্ড ও শ্যামবাজার ট্রাফিক গার্ড আরজিকর পর্যন্ত সব সিগন্যাল তখন সবুজ হয়ে গিয়েছে। ফলে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আরজিকর হাসপাতালে পৌঁছে যায় বাসটি। সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায় রোগীর ভর্তির ব্যবস্থা। সময় মতো চিকিৎসা শুরু হওয়ায় প্রাণে বাঁচলেন সমীরণ পোদ্দার (৬৪)।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেরিব্রাল অ্যাটাকের জেরে সমীরণবাবুর মুখের একাংশ বেঁকে গিয়েছে। তবে এখন তিনি ভাল আছেন। কথা বলছেন। পরিবারের লোকেদের চিনতে পেরেছেন। তাঁর মাথার সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের তরফে।
দমদম বেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা সমীরণবাবু পেশায় জীবনবীমা সংস্থার এজেন্ট। শুক্রবার কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন অন্যদিনের মতোই। কিন্তু মাঝপথেই অসুস্থ হয়ে জীবন সংশয় পরিস্থিতি তৈরি হয় তাঁর। ওই মুহূর্তে একটু দেরি হলেই চরম ক্ষতি হতে পারত। তবে বাসের চালক, কন্ডাক্টরের উপস্থিতবুদ্ধি ও সহযাত্রীদের এগিয়ে আসার ফলে একটি প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে বলে পরিবারের লোকেদের জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুলিশকেও। পুলিশকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আরেকটু দেরি হলেই হয়তো আর বাঁচানো যেত না রোগীকে।
এদিকে ভরসন্ধ্যায় যাত্রীবোঝাই বাসটিকে হুড়মুড়িয়ে হাসপাতালে ঢুকতে দেখে হাসপাতালের কর্মীরা প্রথমে অবাক হয়ে যান। কিছুসময়ের মধ্যেই অবশ্য সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় তাঁদের কাছে। ঘটনার পর পুলিশকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রথম লক্ষ্য ছিল যত কম সময়ের মধ্যে সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা। গ্রিন করিডোর করায় তা সম্ভব হয়েছে।
সমীরণবাবু একটু ভালো হওয়ার পর তাঁর কাছে থাকা মোবাইল থেকে তার ভাইকে ফোন করে হাসপাতালে ডেকে নেওয়া হয়। সুস্থ অবস্থায় সমীরণবাবুকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেন জোড়াবাগান ট্রাফিক সার্জেন্ট দীপক বৈরাগী। সমীরণ পোদ্দারের জীবন ফিরে পেতে সাহায্য করায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মী, বাসকর্মী ও সহযাত্রীদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেনি পরিবার। যে শহরে সিভিক ভলান্টিয়ারকে লাথি মেরে শাসন করতে দেখা যায়, তা যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সেটা পুলিশের এই মানবিকতার মাধ্যমেই প্রমাণ হয়।
আরও পড়ুন: Accident in Kolkata: সল্টলেকে দুর্ঘটনা, বাস থেকে নামতে গিয়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু যুবকের