কলকাতা : শুক্রবার তৃণমূলের প্রায় সবকটি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলেও কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী ঘোষণা করা বাকি ছিল। শনিবার ৩৬ ও ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে বদলে গেল প্রার্থী। দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে বেশ কয়েকটি পুরনো নাম বাদ গিয়েছে তালিকা থেকে। তার মধ্যে নাম ছিল কাইজার জামিলের। এবার তাঁকেই টিকিট দেওয়া হল ঘাসফুল শিবিরের তরফে।
৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের (বেলেঘাটা) প্রার্থী হিসেবে টিকিট পেয়েছেন সচিন সিং। এছাড়া ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের (বেহালা পশ্চিম) প্রার্থী করা হয়েছে কাকলি বাগকে। সেই সঙ্গে বদলে দেওয়া হয়েছে ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের (বালিগঞ্জ) প্রার্থী। এই ওয়ার্ডের প্রার্থী করা হয়েছিল মহম্মদ ইয়েজুজার রহমানকে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সংগঠনে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ছিল কাইজারের বিরুদ্ধে। সেই কারণেই তাঁকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এবার ফের তাঁকেই প্রার্থী করা হল।
আর এক তৃণমূল প্রার্থী তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমার জানান, কালীঘাটের বৈঠকে আদতে কাইজার জামিলের নামই বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অন্য প্রার্থীর নাম লেখা হয়। তিনি বলেন, ‘যে কোনও কারণেই হোক, ভুলবশত ইয়েজুজার রহমানের নাম প্রকাশ পায়। আজ সেই ভুল শুধরে কাইজারের নাম তালিকায় দেওয়া হয়েছে।’
তবে রাজনৈতিক মহলের দাবি, এ ভাবে দীর্ঘ বৈঠকের পর ভুলবশত কোনও নাম প্রকাশ হতে পারে না। সূত্রের খবর, যেহেতু কাইজার দীর্ঘদিনের প্রার্থী, তাই তাঁর নাম তালিকায় না থাকায় এলাকায় তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। সম্ভবত, সেই কারণেই প্রার্থী বদল।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, কাইজারকে বাদ দেওয়ার পিছনে ছিল অন্য একটি কারণ। প্রয়াত নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁর বিধানসভা অঞ্চলের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরকে নিয়ে অখুশি ছিলেন। কারও বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ ছিল দুর্নীতির, কারও বিরুদ্ধে উপদলীয় কার্যকলাপ, আবার কারও বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। এই নিয়ে বছর দুয়েক আগে দলকে আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যাঁদের নিয়ে আপত্তি ছিল, তাঁদের মধ্যেই অন্যতম কাইজার জামিল। মনে করা হচ্ছিল, কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে অমলিন চরিত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ইচ্ছাকেই মর্যাদা দিয়েছে দল। প্রয়াত নেতার অপছন্দের তালিকায় থাকা কাউন্সিলর বা কাউন্সিলর পদ প্রত্যাশীদের টিকিট দেয়নি। কিন্তু শনিবার বদলে গেল প্রার্থীর নাম।
আরও পড়ুন : ৬৬ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা কংগ্রেসের, ঠাঁই ২ তৃণমূল কোঅর্ডিনেটরের
সুব্রতর অপছন্দের তালিকায় থাকা ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের নামও বাদ পড়েছে। ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইকবাল আহমেদের বদলে যখন প্রার্থী খোঁজা হচ্ছিল, সেই সময় বিজলী রহমান নামের এক ব্যক্তি দৌড়ে ছিলেন। তাঁকে নিয়েও আপত্তি জানান সুব্রত। সূত্রের খবর, শুক্রবার কালীঘাটে প্রার্থী তালিকা নিয়ে যখন বৈঠকে বসে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব, বৈঠকের শুরুতেই প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আপত্তির কথা তোলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সেই আপত্তিকে মর্যাদা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এরপরেই ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে সুব্রতর বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়কে, ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে সুব্রতর আশীর্বাদ ধন্যা শাম্মী জাহানকে প্রার্থী করা হয়। আর ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে মহম্মদ ইয়েজুজুর রহমানকে প্রার্থী করা হয়েছিল।
এ দিকে, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কোঅর্ডিনেটর পার্থ মিত্র জোড়াফুলের থেকে টিকিট না পেয়ে কংগ্রেসে নাম লিখিয়েছেন। এবার কংগ্রেস তাঁকে প্রার্থী করেছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে।
আরও পড়ুন : মাজারে গিয়ে চাদড় চড়ালেন শিশির অধিকারী, ‘শুভেন্দু বাবুর কথা ভুলে গেলেন!’ প্রশ্ন শাসকদলের