কলকাতা: শহরের একাধিক হাসপাতালে শিশু মৃত্যু (Child Death) অব্যাহত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। সরকারি হাসপাতালে সামনে গেলে দেখা যাবে অভিভাবকদের ভিড়। প্রত্যেকেরই চোখে-মুখে আতঙ্ক। শুধুমাত্র কলকাতা নয়, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই একই ছবি। অ্যাডিনো ভাইরাসে (Adenovirus) আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণও মিলেছে একাধিক শিশুর ক্ষেত্রে।
শনিবার ফের একরত্তির মৃত্যুর খবর সামনে এল বি সি রায় হাসপাতাল (BC Roy) থেকে। হাসপাতাল সূ্তরে খবর, মৃত শিশুটির বয়স ছ’মাস। সে কল্যাণীর বাসিন্দা। গত কয়েকদিন ধরেই জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ভুগছিল। এরপর কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিশুটিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বি সি রায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর আজ ভোর চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় শিশুটির।
বিস্তারিত পড়ুন: Child Death: জ্বর-শ্বাসকষ্ট, বি সি রায় হাসপাতালে ফের মৃত্যু ৬ মাসের একরত্তির
বেলা গড়াতে আরও দুই শিশুর মৃত্যু বিসি রায় হাসপাতালে। এক বছর তিন মাস বয়সের এক শিশুকে গতকাল রাতে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে বিসি রায় হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরের বাসিন্দা ওই শিশুর জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ ছিল। গত বুধবার থেকে অসুস্থ ছিল ওই শিশু। এদিন সকালে ১১ টা নাগাদ বিসি রায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। শিশুর কোমর্বিডিটি ছিল বলে জানা গিয়েছে।
এরপর দুপুর ১২টা নাগাদ আরও এক শিশুর মৃত্য়ু হয় বিসি রায় হাসপাতালে। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ওই শিশুর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে গিয়েছিল সে। এরপর ক্যানিংয়ে এক আত্মীয়র বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শিশুটিকে ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে হাজরার চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে পাঠানো হয়। সেখানে বেড না থাকায় ৪ দিন আগে পাঠানো হয় বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ হাসপাতালেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
বি সি রায় হাসপাতালে (BC Roy Hospital) ফের শিশু মৃত্যু (Child Death)। শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ দশ মাসের এক শিশু কন্যার মৃত্যু হয় হাসপাতালে। পরিবারের লোকজন দাবি করছেন, বারাসতের ওই শিশু কন্যা গত দুই সপ্তাহ আগে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। শিশুর ফুসফুসের সংক্রমণও ছিল বলে পরিবারের দাবি। মৃত শিশুর পরিবারের লোকেরা দাবি করছেন, আজ সকালে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল শিশুটি। কিন্তু এতদিন এই বিষয়টি চিকিৎসকরা শনাক্ত করতে পারেননি বলে দাবি পরিবারের। যদিও বিষয়টি নিয়ে বি সি রায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে শিশুর মৃত্যুর কারণ, অ্যাডিনোই ছিল কি না, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বাড়ছিল শিশু ভর্তির সংখ্যা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে দৈনিক শিশু ভর্তি ২০ জনের কাছাকাছি ছিল। তবে গত কয়েকদিনে সংখ্যাটি কমে ১০-১২ মধ্যেও পৌঁছে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে শিশু ভর্তি হয়েছে ৮ জন। অর্থাৎ, দৈনিক শিশু ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। বর্তমানে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৫৬ জন শিশু। পিকু ওয়ার্ডেও ভর্তির সংখ্যা ১০ থেকে নেমে ৪ হয়েছে। অন্যদিকে বৃহঃস্পতিবার থেকে বহির্বিভাগে চালু করা হয়েছে এআরআই ক্লিনিক।
বিসি রায় হাসপাতালে ফের শিশু মৃত্যু। ৩ বছর ২ মাসের একটি শিশুর মৃত্যু হয়। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। সোমবার থেকে ভর্তি ছিল হাসপাতালে। আরেকটি ৩ মাসের শিশুকন্যারও মৃত্যু হয়। ভাঙড়ের শিশুটি হাসপাতালে ভর্তি ছিল দুদিন ধরে। এদিকে, ব্যান্ডেলেও একটি শিশুর মৃত্যু হয় একই উপসর্গে।
বিসি রায় শিশু হাসপাতালে রক্তসঙ্কটে আট দিনের সদ্যোজাত। চূড়ান্ত হয়রানির শিকার সদ্যোজাতর পরিবার। জন্ডিসে আক্রান্ত শিশুটির অবিলম্বে রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু রক্ত আসবে কোথা থেকে? রাতভর হন্যে হয়ে ঘুরলেন শিশুর পরিজনরা। রক্ত তো দূর অস্ত, কোথাও নমুনা থেকে রক্তের গ্রুপিং পর্যন্ত করে দেওয়া হল না। TV9 বাংলার প্রতিনিধির একটা ফোনেই দ্রুত পদক্ষেপ। বিষয়টি জানতে পেরে স্বাস্থ্য সচিবকে ফোন করেন TV9 বাংলার প্রতিনিধি। ১৫ মিনিটের মধ্যেই গ্রুপিং করে ব্যবস্থা করা হয় রক্তের।
অ্যাডিনোর (Adenovirus) দাপটে রাজ্যে থরহরি বাংলায়। রাজ্যে পাঁচ দিনে ১৮ জন শিশুমৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এরই মধ্যে ফের বি সি রায় হাসপাতাল (B C Roy Hospital) থেকে এল আড়াই মাসের এক শিশু মৃত্যুর (Child Death) খবর। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুটির।
বিস্তারিত পড়ুন: জ্বর-শ্বাসকষ্ট, বি সি রায় হাসপাতালে মৃত্যু আড়াই মাসের দুধের শিশুর
অ্যাডিনোভাইরাস (Adenovirus) মোকাবিলায় এবার আরও তৎপর রাজ্য সরকার। চালু করা হল সর্বক্ষণ খোলা রাখা কন্ট্রোল রুম (Control Room)। একটি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হেল্পলাইন নম্বরও (Helpline Number) চালু করা হয়েছে। টোল ফ্রি নম্বরটি হল ১৮০০-৩১৩-৪৪৪-২২২। সাধারণ মানুষরা এই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে এই সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা জানাতে পারবেন এবং হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন কি না, তাও জানাতে পারবেন। রাজ্য সরকারের জারি করা ওই প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে গত একমাসে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা ARI-জনিত ৫ হাজার ২১৩টি কেস পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলিতে অ্যাডিনো ভাইরাসের কারণে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। যদিও তার মধ্যে ৮ জনের জটিল কোমর্বিডিটি ছিল বলে জানাচ্ছে রাজ্য।
অভিযোগ উঠেছে, শিশুরা আক্রান্ত হলেও তারা অ্যাডিনো ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, নমুনা পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থাই নেই। এমনকী নমুনা নাইসেডে পাঠানোর কোনও নির্দেশিকা নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে। বুধবারই বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে।
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালগুলিতে চাপ আছে। বি সি রায়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ৭০টি বেড চালু হচ্ছে। যত মৃত্যু হচ্ছে, তার মধ্যে অনেক শিশুর কো-মর্বিডিটি আছে। কম ওজনের সমস্যাও আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশ্নে আমরা আত্মবিশ্বাসী। রোগীকে স্থিতিশীল করে রেফার করার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
উত্তরবঙ্গেও জ্বর, সর্দি নিয়ে শিশুদের ভিড় বাড়ছে। জেলা হাসপাতালের সব বেড প্রায় ভর্তি। ভাইরাল ফিভারে শিশুরা আক্রান্ত হলেও এর পিছনে অ্যাডিনো ভাইরাস আছে কি না তা বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরে এর পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। নমুনা ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানোর নির্দেশও নেই।
বুধবার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও ২ শিশুর। উপসর্গ ছিল সেই জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। ৫ দিনে মোট ১৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়।
বয়স ২২ দিন। হাওড়ার বাগনানের বাসিন্দা। ১৬ ফেব্রুয়ারি জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছিল তাকে। অ্যাডিনো ভাইরাস পজিটিভ ছিল। মঙ্গলবার গভীর রাতে মৃত্য হয়।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোরের মধ্যে আরও দুই শিশুর মৃত্যু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ৭ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, নাম জীশান টুডু। হামিদপুরের বাসিন্দা। জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে চুঁচুড়া ইমামবারা হাসপাতাল থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণের মিলেছিল শরীরে। এছাড়া জন্মগত হার্টের সমস্যা ছিল। হাসপাতালের তরফে বলা হচ্ছে অ্যাডিনোর জেরে হওয়া নিউমোনিয়া মিটে গেলেও হার্টের সমস্যার জেরেই মৃত্যু।